গরিবের জন্য হোক ‘ছোট ব্যাংক’
১১ জানুয়ারি ২০১৭ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এ কারণে আচমকা সিদ্ধান্তে বড় অঙ্কের নোট বাতিল করেছেন৷ কিন্তু গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর খারাপ প্রভাব পড়েছে৷ কৃষিকাজে, জনমজুরিতে যথেষ্ট টাকার জোগান না থাকায় বহু শ্রমিক উপার্জনহীন হয়ে আছেন৷ সুপ্রিম কোর্টে সরকার অন্যদিকে স্বীকার করেছে, রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকের গ্রামীণ শাখায় যেমন বাতিল হয়ে যাওয়া পুরনো টাকার আসল-নকল যাচাই করে নেওয়ার ব্যবস্থা নেই, তেমনি নেই যথেষ্ট নতুন নোটের জোগান৷ ফলে কার্যত বিপর্যস্ত গ্রামীণ অর্থনীতি৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাস্তা দেখালেন৷ কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় ড. ইউনূস বললেন, ‘‘ভারতে বড় ব্যাংক মূলত বিত্তবানের সেবা করে৷ গরিব মানুষ, বিশেষত যাঁরা গ্রামাঞ্চলে বাস করেন, তাঁরা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধা বিশেষ পান না৷ যে কারণে ভারতে ব্যাংকিং আইনের সংশোধন করে, কম পুঁজির এবং ছোট আকারের ব্যাংক জেলায় জেলায় চালু করা উচিত৷ যেখান থেকে গরিবেরা, কৃষক, শ্রমিকেরা ঋণ পেতে পারেন৷''
সহজ কথায় বোঝাতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘‘বড় ব্যাংক হলো বড় জাহাজের মতো৷ অনেক সম্পদ তার ভেতরে৷ দীর্ঘ সময়ের জন্য সেই জাহাজ সাগর পাড়ি দেয়৷ কিন্তু গরিব মানুষের ব্যাঙ্কের সাগর পাড়ি দেওয়ার দরকার নেই৷ সেই গ্রামীণ ব্যাংক হবে যেন ছোট ডিঙি নৌকা, যা খাল-বিল বেয়ে পৌঁছে যাবে দরিদ্র মানুষের কাছে৷''
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আলোচনা সভার শীর্ষক ছিল ‘ডিজাইন ইকনমিক্স টু রিডিজাইন দ্য ওয়ার্ল্ড'৷ নতুন নকশার সেই অর্থনীতির ভবিষ্যতের রাস্তা দেখাতে গিয়ে, বাংলাদেশে মাইক্রো ফিন্যান্স ব্যবস্থার জনক ড. ইউনূস বলেন, ‘‘ভারতে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প চালু করেছে, ভালো কাজ করছে৷ কিন্তু পুঁজির জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় অন্য আর্থিক সংস্থার ওপর৷ ড. ইউনূসের প্রস্তাব, এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে সীমিত ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স দেওয়া হোক৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকা এবং আফ্রিকায় সেই মডেলে কাজ হচ্ছে৷ কিন্তু তার জন্যে আইনের বদল দরকার৷ কারণ আইন আদতে একটা ছাঁচের মতো৷ একবার সেটা তৈরি হয়ে গেলে, সেই ছাঁচে ফেলেই সব কাজ হতে থাকে৷ তাই ছাঁচটা পাল্টানো দরকার৷
এদিকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং চিটফান্ড তদন্তে দুই দলীয় সাংসদের গ্রেপ্তারি, এই দুইয়ের প্রতিবাদে বুধবারও তৃণমূল কংগ্রেসের বিক্ষোভ-আন্দোলন জারি ছিল৷ পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি জেলায় রেলপথ অবরোধ করে তৃণমূল কর্মীরা৷ রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে এবং সিবিআই-এর কলকাতা দপ্তরের সামনে নেতাদের ধর্ণা চলে৷ অন্যদিকে দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদরা এদিন রাইসিনা হিলসে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে গান গেয়ে প্রতিবাদ জানান৷ তারপর যান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানাতে৷
বন্ধু, এ বিষয়ে কি আপনার কিছু বলার আছে? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷