গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর জোর দিলেন ম্যার্কেল
৫ জুন ২০১৮অনুষ্ঠানে বক্তারা ভুয়া খবর প্রতিরোধ, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় প্রচারমাধ্যম হিসেবে ডিডাব্লিউর নতুন বৈশ্বিক ভূমিকা পালন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন৷
১৯৫৩ সালে ডয়চে ভেলে প্রতিষ্ঠার সময় সংস্থাটির কার্যক্রম আজকের তুলনায় অনেক সহজ ছিল৷ যে প্রতিষ্ঠানটি একসময় শুধু জার্মান ভাষায় শর্টওয়েভে রেডিও অনুষ্ঠান প্রচার করতো, তারাই এখন একটি মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে৷ ডয়চে ভেলে এখন টিভি, রেডিও, ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের সহায়তায় প্রতি সপ্তাহে ৩০টি ভাষায় ১৭৫ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে৷ শুধু তথ্য প্রচার নয়, ডয়চে ভেলেকে এখন ভুয়া ও মিথ্যা খবরের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে৷
ম্যার্কেল তাঁর বক্তব্য এসব বিষয়ই তুলে ধরেন৷ ‘‘আমরা যদি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরের বিরোধিতা না করতাম, তাহলে আমরা এমন পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতে পারতাম না, যেখানে দমন আর অসত্য তথ্য রাজত্ব করে,’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের বলেন ম্যার্কেল৷ ‘‘সেজন্য আমি আপনাদের প্রশংসা করতে চাই,’’ বলেন তিনি৷
বক্তব্য শুরুর আগে ম্যার্কেল ডিডাব্লিউ'র রুশ ভাষা সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেন৷ ডয়চে ভেলের এই সার্ভিস ব্যবহারকারী, বিশেষ করে তরুণদের ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য সম্পর্কে সচেতন করতে কয়েকটি ইন্টারনেট ভিডিও নির্মাণ করেছে৷ এমন এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে কাজাখস্তানের একটি ব্যর্থ রকেট অভিযানকে ইউক্রেনের মিসাইল হামলা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে৷ রুশ ভাষায় তৈরি এই ভিডিওগুলো প্রথম মাসেই প্রায় ১৩ লক্ষ বার দেখা হয়েছে৷
বিভিন্নভাবে প্রোপাগান্ডা চালানোর এই যুগে ডয়চে ভেলের মতো সরকারি অর্থে পরিচালিত, তবে সরকার দ্বারা পরিচালিত নয়, এমন প্রচারমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তার কথা বক্তারা বারবার উল্লেখ করেছেন৷
‘‘সংকট, যুদ্ধ ও সংঘাতের সময় মানুষ আমাদের কাছে আসে,’’ বলেন ডিডাব্লিউ'র মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ৷ কারণ, তাঁরা জানেন যে, ডয়চে ভেলে তাঁদের বস্তুনিষ্ঠ ও বিস্তারিত তথ্য জানাবে৷ ‘‘স্বৈরশাসকদের চোখে আমরা বিপজ্জনক,’’ বলেন লিমবুর্গ৷
বিশ্বের জন্য ইউরোপীয় কণ্ঠ
ম্যার্কেল ও লিমবুর্গ দুজনই বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় প্রচারমাধ্যম হিসেবে ডয়চে ভেলের ভূমিকা আরও বাড়বে৷ কারণ, বিবিসি আর ইউরোপীয় প্রচারমাধ্যম হিসেবে পরিচিত থাকবে না৷ সাম্প্রতিক সময়ে ডিডাব্লিউতে অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ এই সময়ে ইংরেজি ভাষায় কন্টেন্ট তৈরিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শক ও ব্যবহারকারী বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হয়েছে৷
এই ধরনের সাংবাদিকতার একটি উদাহরণ হচ্ছে ‘ইকো@আফ্রিকা’৷ এটি পরিবেশ বিষয়ক একটি অনুষ্ঠান যেখানে আফ্রিকা ও ইউরোপের সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরা হয়৷ নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার পার্টনারদের সঙ্গে মিলে এই অনুষ্ঠানটি তৈরি হয়৷ ফরাসি ও পর্তুগিজ ভাষায়ও এই অনুষ্ঠানের সংস্করণ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে৷
‘‘আমার মনে হয়, আপনারা যে আফ্রিকা থেকে পরিবেশ বিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মাণ করেন এবং যেখানে এই বিষয়ে আফ্রিকার মনোভাব থাকে, তা দারুণ,’’ বলেন ম্যার্কেল৷
এই সুযোগে লিমবুর্গ তুর্কি ভাষায় একটি ডয়চে ভেলের একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালুর দাবি জানান এবং তুরস্কের বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন৷ ‘‘আমাদের আরও কাজ করতে হবে,’’ বলেন তিনি৷ ‘‘তুরস্ক, যার সঙ্গে জার্মানদের এত সংযোগ আছে, সেখানে আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই৷ আমরা যদি আমাদের উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি, তাহলে এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের কিছু করতে হবে,’’ বলেন লিমবুর্গ৷
জার্মান সরকারের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম বিষয়ক কমিশনার মনিকা গ্র্যুটার্স বলেন, ‘‘ডয়চে ভেলে বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সমন্বিত গবেষণা ও গুনগত মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা সমর্থন করে৷ আমি এজন্য খুবই গর্বিত৷’’
বিদেশিদের অনলাইনে জার্মান ভাষা শেখানো এবং ডিডাব্লিউ অ্যাকাডেমির মাধ্যমে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেয়ায় ডয়চে ভেলের প্রশংসা করেন বক্তারা৷
বিখ্যাতদের অভিনন্দন
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে পরিচিত রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ডয়চে ভেলে নিয়ে করা ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়৷ তাঁদের মধ্যে আছেন, আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, রাশিয়ার ভিন্নমতাবলম্বী লেখক আলেকজান্ডার জলসেনিৎসিনের বিধবা স্ত্রী, কিয়েভের মেয়র, সাবেক হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ভিটালি ক্লিচকো, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার৷
জার্মান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
শীতল যুদ্ধের সময় পশ্চিমা বিশ্বের তথ্যের উৎস হিসেবে ডয়চে ভেলের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন বক্তারা৷ ডিডাব্লিউর দায়িত্বের কথা স্বীকারের পাশাপাশি লিমবুর্গ জার্মানির ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের কথাও উল্লেখ করেন৷
‘‘জার্মান পরিচয়ের একটি অংশ হচ্ছে ছয় মিলিয়ন ইউরোপীয় ইহুদিকে হত্যার বিষয়টি স্মরণ করা,’’ বলেন লিমবুর্গ৷ ‘‘আমরা এই বিষয়ে অতীতে অনেকবার প্রতিবেদন করেছি, ভবিষ্যতেও আমরা সেটা করে যাবো৷ সন্ত্রাসী কিংবা জাতীয়তাবাদী, কেউই এই বিষয়ে আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারবে না,’’ বলেন তিনি৷
৬৫ বছর ধরে ডয়চে ভেলে পশ্চিমা গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিকতাবাদ তুলে ধরার চেষ্টা করছে৷ জার্মানির বর্তমান সরকার দেশটির বিদেশি সরকারি প্রচারমাধ্যমের তহবিল বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে৷ কারণ, ১৯৫৩ সালের পর পরিবেশ পরিস্থিতিতে বিপুল পরিবর্তন এলেও মুক্ত সমাজের রীতিনীতি রক্ষা ও তুলে ধরার গুরুত্ব এখনও তেমনই আছে৷
জেফারসন চেজ/জেডএইচ