গণপিটুনির ঘটনায় ওসিকে সরাসরি মামলা নিতে হবে
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২২০১৯ সালের ২০ জুলাই ছেলে ধরা গুজবে ঢাকার উত্তর বাড্ডার একটি স্কুলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় দুই সন্তানের জননী তসলিমা বেগম রেনুকে৷ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তখন সারাদেশের মানুষ প্রতিবাদী হন৷ তারা গুজব ও গণপিটুনি বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেন৷ ওই ঘটনায় মামলা হলেও বিচার এখনো শেষ হয়নি৷ আর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো গণপিটুনির মামলায়ই কেউ শাস্তি পাননি৷
ওই ঘটনার পর আইনজীবী ইশরাত হাসান গণপিটুনি ও গুজব বন্ধ এবং নাগরিকদের জীবন রক্ষায় হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন৷ শুনানির পর সেই রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে মঙ্গলবার৷
বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রাহমানের সেই রায়ে বলা হয়েছে কোনো গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নিজ উদ্যোগেই মামলা করতে হবে এবং তা দ্রুত সার্কেল এএসপিকে জানাতে হবে৷ সার্কেল এএসপি মামলার তদারকি করবেন৷ মামলার তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অডিও, ভিডিও, খুদে বার্তা- যা গুজব সৃষ্টি যা গণপিটুনিতে মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ যারা এ কাজে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে৷
গুজব ও গণপিটুনি প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গণমাধ্যমসহ সব ধরনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার অব্যাহত রাখতে হবে৷
আর তসলিমা আক্তার রেনুকে যেহেতু স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হেফাজতে থাকা অবস্থায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাই তিনি প্রধান শিক্ষক পদে থাকার যোগ্য কী না তা দেখতে বলা হয়েছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা৷
রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘‘আগে তো গণপিটুনির ঘটনায় কোনো বিচারই পাওয়া যেত না৷ এখন এরকম ঘটনা ঘটলে আদালতের কাছে গিয়ে জানতে চাওয়া যাবে যে ওই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়েছে কী না৷ কার কী দায়িত্ব তা আদালত সুনির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেন৷ তাই এখন আর কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে আনা হলো৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু ও চীনা নাগরিক নিয়ে গুজব আগে থেকেই চলছিলো৷ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি ওই গুজব প্রতিরোধে তখন ব্যবস্থা নিতো তাহলে এইসব দুঃখজনক ঘটনা ঘটতো না৷ যা তাদের দায়িত্ব ছিলো৷’’
এদিকে নিহত রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটো বলেন, ‘‘দেশে এখন যে গুজব ও কুসংস্কারের জোয়ার চলছে তা বন্ধে হাইকোর্টের এই রায়টি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার মনে হয়৷ আমার দাবি এই রায়ে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা যেন কার্যকর হয়৷ তাহলে অনেকের জীবন রক্ষা পাবে৷’’
রেনু হত্যা মামলা প্রসঙ্গে তিনি জানান, মামলার বিচার এখানো শেষ হয়নি৷ মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তাদের মধ্যে আটজন জামিন পেয়েছেন৷ পাঁচজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছেন৷ তিনি তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বিচার কাজ এখন ধীর গতিতে হচ্ছে৷ এটা আমারদের বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি বলে আমি মনে করি৷’’
থামেনি গণপিটুনিতে হত্যা:
এদিকে রেনু হত্যার পরও বাংলাদেশে গণপিটুনিতে হত্যা কমেনি৷ তাকে হত্যার বছর ২০১৯ সাল থেকে এপর্যন্ত বাংলাদেশে গণপিটুনিতে ১২৩ জন নিহত হয়েছে বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে৷
তাদের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে গণপিটুনিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন৷ ২০২১ সালে নিহত হয়েছেন ২৮ জন৷ যারা মধ্যে সার্বোচ্চ ১৩ জন ঢাকায়৷ এরপরে চট্টগ্রাম বিভাগের নিহত হয়েছেন আট জন৷ ২০২০ সালে নিহত হয়েছেন ৩৫ জন৷ ঢাকায় ১৪ জন এবং খুলনায় ১০ জন৷ ২০১৯ সালে ৬৫ জন৷ ২০১৮ সালে ৩৯ জন৷ ২০১৭ সালে ৫০ জন৷ ২০১৬ সালে ৫১ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনিতে৷