খালেদা জিয়ার বিচার শুরু
২১ মে ২০১৪শুধু আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেই প্রথম দিনের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করেন বিচারক৷ ৩৫ মিনিট চলা প্রথম দিনের কার্যক্রমে প্রধান আসামি খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন না৷ বরং তাঁর পক্ষে আইনজীবীরা আদালতে হাজিরা দেন৷ বিশেষ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা দু'টি মামলা বিচার কাজ চলবে৷ এর মধ্যে একটি মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি৷
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার পক্ষে আমরা মামলা দু'টির বিচারক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছি৷ হাইকোর্টে এই রিটের শুনানি শেষ হয়েছে৷ আগামী ২৫শে মে রিটের আদেশ হবে৷ ফলে উচ্চ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে৷ তাই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর বিষয়ে সময়ের আবেদন জানিয়েছি আমরা৷ আদালত আমাদের আবেদন আমলে নিয়ে আগামী ১৯শে জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন নির্ধারণ করেছে৷''
মামলা দু'টির বাদি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পেশ্যাল পিপি মোশারফ হোসেন কাজল আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘‘আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায় শুনানির নতুন দিন নির্ধারণ করেছেন৷''
এর আগে বিচারিক আদালতে মামলা দু'টির অভিযোগ (চার্জ) গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার করা রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট৷ এরপর তাঁরা বিচারক নিয়োগের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১৯শে মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত৷ এছাড়া চার্জ গঠন করা হয়, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলা দু'টির অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও৷ ঐ দিন খালেদার উপস্থিতিতে মামলা দু'টির চার্জ শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়৷
২০১১ সালের ৮ই আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷ মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট'-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়৷ কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি৷ জমির মালিককে দেয়া ঐ অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে৷ ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগ-পত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷
মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন – খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ-র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷ জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন৷ হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷
এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন৷ এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এই মামলা দায়ের করা হয়৷ মামলার অপর আসামিরা হলেন – বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান৷ এর মধ্যে তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন৷ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন৷ তবে শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির না থাকায় ১৯শে মার্চ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত৷ অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷