খাদ্য সংকট দূর করতে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে উত্পাদন বৃদ্ধি
৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮এক্ষেত্রে নানা সমালোচনা এড়িয়ে দরিদ্র দেশগুলোর স্বার্থে উন্নত দেশগুলোকে এ প্রযুক্তি হস্তান্তরের কথাও বলা হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে৷
জ্বালানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গোটা বিশ্বে বেড়ে গেছে খাদ্যের দাম৷ বিশেষ করে পরিবেশ বান্ধব বায়োফুয়েল উত্পাদনে ভুট্টা ব্যবহারের ফলে চাপ পড়েছে গম ও চালের ওপর৷ ফলে গোটা বিশ্বেই খাদ্যের দাম বেড়েছে৷ এর প্রভাব সবচে বেশী পড়েছে তৃতীয় বিশ্বের নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর৷ পাঁচ দশক আগেও খাদ্য উত্পাদন যেভাবে বেড়ে চলছিলো তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে৷ মেক্সিকো ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান থমাস লাম্পকিন জানিয়েছেন, ৬০এর দশকে বিশ্বে গম উত্পাদন বৃদ্ধির হার ছিলো ১০ শতাংশ যা এখন মাত্র দুই শতাংশেরও কম৷
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংগঠনের তথ্য মতে গম ও ভুট্টা বিশ্বের ৪০ শতাংশ খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে থাকে৷ গত দু বছরে গমের মুল্য দ্বিগুনেরও বেশী হয়েছে৷ এ অবস্থায় প্রতি টন গমের মুল্য দাঁড়িয়েছে ৪৫৪ ডলার পর্যন্ত৷ এছাড়া অন্যান্য খাদ্যের দামও বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশী৷
খাদ্য উত্পাদন বাড়াতে বিগত দশকগুলোতে হয়েছে অনেক গবেষণা৷ বিভিন্ন শস্যের জিনগত পরিবর্তন এনে উত্পাদনের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ এছাড়া পরিবেশভেদেও উপযুক্ত শস্য উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে৷ তবে এক্ষেত্রে এ সব উদ্যোগ সবচেয়ে বেশী বাধা পেয়েছে উন্নত বিশ্বের ভোক্তা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে৷ এসব সংগঠনের বিরোধিতার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মত খাদ্য উত্পাদানে প্রথম সারিতে থাকা দেশগুলো উদ্ভাবিত এসব শস্যের বাণিজ্যিক উত্পাদন বন্ধ রেখেছে৷ জিনগত পরিবর্তন এনে উচ্চ ফলনশীল শস্য উদ্ভাবনের উদ্যোগ থেকেও পিছিয়ে এসেছে নামকরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত এসব উচ্চ ফলনশীল শস্য উত্পাদনের অনুমতি দেয়নি৷ কিন্তু থমাস লাম্পকিন মনে করেন, তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র মানুষের স্বার্থে উন্নত দেশগুলোর উচিত এদিকে মনোযোগ দেয়া৷ উন্নত বিশ্বের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য উত্পাদন বাড়ালে দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ খাদ্য সংকট থেকে মুক্তি পাবে৷ এসব প্রযুক্তি না দিয়ে মূলত তাদেরকে ক্ষুধার্ত করে রাখা হচ্ছে৷
এদিকে গোটা বিশ্বে বর্তমানে খাদ্য মজুদের পরিমাণও কমে গিয়েছে৷ এ মুহূর্তে যে পরিমাণ খাদ্য শস্য রয়েছে তা দিয়ে মাত্র ৫৩ দিন চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে৷ সাত বছর আগেও গোটা বিশ্বে ১১৫ দিনের খাদ্য মজুদ ছিলো৷ বিষয়টি উল্লেখ করে থমাস লাম্পকিন জানান, যদি চীন, ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলোতে কোন কারণে খরা সৃষ্টি হয় এবং খাদ্য উত্পাদান কমে যায় তাহলে গোটা বিশ্বে খাদ্যমূল্য পাঁচগুন বেড়ে যাবে৷ যা বিপুল সংখ্যক মানুষকে অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে৷