1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খনিগর্ভের দীর্ঘ নরকবাস শেষে একে একে তাঁরা ওপরের পৃথিবীতে ফিরছেন

১৩ অক্টোবর ২০১০

‘ফিনিক্স' চেপে একে একে ওপরের পৃথিবীতে ফিরছেন চিলির আটকেপড়া খনি শ্রমিকরা৷ ফ্লোরেন্সিও আবালোস হচ্ছেন প্রথম সৌভাগ্যবান৷ এখনো পর্যন্ত একে একে ১৫ জন উঠে এসেছেন৷

https://p.dw.com/p/PdEp
নবম শ্রমিক হিসেবে আবার দিনের আলো দেখলেন মারিও গোমেসছবি: AP

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ধারণা করা হচ্ছে প্রতি ঘন্টায় এক জন করে উঠে আসতে পারবেন৷

দীর্ঘ ১০ সপ্তাহ খনি গর্ভে আটকে থাকার নিদারুণ ক্লেশকর যন্ত্রণা আর উৎকন্ঠার শেষে উদ্ধার ক্যাপসুল ফিনিক্সে চেপে ফ্লোরেন্সিও আবালোস যে মুহূর্তে উপরের আলো-বাতাসের পৃথিবীতে ফিরলেন, ঠিক তখনই ইতিহাস রচিত হলো যেন৷ জার্মান সময় তখন সকাল ৫টা দশ৷ সেমুহূর্তটি অবাঙমানসগোচর এক অপার্থিব আনন্দের! যেন দীর্ঘযুগ পর বুক ভরে মুক্ত পৃথিবীর বাতাসে শ্বাস নিলেন ৩১ বছর বয়সী এই চিলিয়ান৷ তাঁর এই দীর্ঘ কাঙ্খিত প্রত্যাবর্তনে ভুপৃষ্ঠে তখন খুশি আর বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার বইছে৷

পুরোবিশ্ব রুদ্ধশ্বাস অবলোকনে টিভি পর্দায় স্থির, বিশ্বের বেশ কয়েকটি টিভি লাইভ সম্প্রচার করছে চিলির আটকে পড়া খনি শ্রমিকদের নিমিত্তে পরিচালিত এই উদ্ধারাভিযান৷ এযেন সহস্রাব্দ পরে ফিরে আসা এক মহোৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণ৷ আটকে পড়া খনি শ্রমিকদের অধীর অপেক্ষারত স্ত্রীরা সেজে এসেছেন, তাঁদের নখগুলো রঙিন৷ উপস্থিত স্বজনদের চকচকে কামানো মুখের মসৃণতায় উৎকন্ঠা যেন রহস্যাবৃত হয়ে ফিরে যাচ্ছিলো৷

পরিপার্শ্ব জুড়ে থাকা আনন্দের এই তীব্রতা প্লাবিত করেছিল চিলির রাষ্ট্রপতি সেবাস্টিয়ান পিনেরাকেও৷ চারপাশে উৎসুক এক দেয়াল হয়ে ঘিরে থাকা শত সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা, সংবাদকর্মী, নিরাপত্তা আর উদ্ধার অভিযানের মানুষ-জন, স্বাস্থ্য বিভাগের লোক, রবাহুত জনতার ভীড় ঠেলে আবালোসের চোখেজাড়া কিন্তু তাঁর স্বজনদেরকেই খুঁজছিল৷ আহ্ মুক্তি৷ সন্তানকে সুস্থ ফিরতে দেখে তাঁর জনক আলফনসো কোনক্রমে আবেগের প্লাবন ঠেলে অস্ফুটে শুধু বলতে পেরেছিলেন- ‘অনেক ভালো লাগছে...'৷

Chile Bergung Rettung der Minenarbeiter Flash-Galerie
অবিশ্বাস্য সেই মুহূর্ত, যার অপেক্ষায় বসে ছিলেন শ্রমিকরাছবি: AP

বিপদসংকুল এই ঐতিহাসিক উদ্ধার অভিযানের মত এতখানি আলোড়ন পৃথিবীতে আর কখনোই যেন ওঠেনি৷ আবালোসের পর একে একে উঠে এসেছেন হলুদ ব্যাগ হাতে উচ্ছ্বসিত ৩৯ বছরের মারিও সেপুলভেডা৷ খনি-গর্ভে তাঁর এই দীর্ঘ বাসের অনুভূতি জানাতে মারিও বলেছেন,‘আমি ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলাম, ছিলাম শয়তানের সঙ্গে'! এই দীর্ঘ যন্ত্রণার পাতালবাসের স্মৃতি হিসেবে নীচ থেকে এক টুকরো পাথরও তিনি সঙ্গে নিয়ে ফিরেছেন৷

মারিও'র ঠিক এক ঘন্টা পরে উঠে এসেছেন হুয়ান ইলানেস৷ ক্যাপসুলে করে উপরের পৃথিবীতে ফেরার বিষয়টিকে তিনি তুলনা করেছেন- এক প্রমোদবিহারের সঙ্গে৷

হোসে ওজদা হচ্ছেন সপ্তম সৌভাগ্যবান যিনি দীর্ঘ এই ভূগর্ভবাস থেকে ওপরের পৃথিবীর আলো হাওয়ায় স্বজনদের কাছে ফিরে এসেছেন৷ আর ক্লাউডিও ইয়ানিয়েস হচ্ছেন অস্টম সৌভাগ্যবান৷ ওপরের পৃথিবীতে ফিরে তাঁর শিশুকন্যাটিকে বুকে জড়িয়ে ক্লডিও যখন হাসছিলেন সে হাসি পৃথিবী দূর্লভ৷

উল্লেখ্য, এক দুর্ঘটনায় চিলির উত্তরাংশে অবস্থিত সান হোসের একটি খনি অভ্যন্তরে আটকে পড়েছিলেন এই ৩৩ জন খনি শ্রমিক৷ আগস্টের পাঁচ তারিখ থেকেই তাঁরা ভূগর্ভের খোড়লে বন্দী৷ শুরুর দিকে তো জীবিত আছেন কিনা সে নিয়েই সকলের সন্দেহ ছিল৷ সতের দিন পর তাদের সাড়া মিলেছিল আর ১৩ অক্টোবর শুরু হয়েছিল এই উদ্ধারাভিযান, সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামীকাল ১৪ অক্টোবর উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘটবে৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা:আব্দুল্লাহ আল-ফারূক