ক্রোয়েশিয়া: ইইউ-র সর্বশেষ সদস্য
ক্রোয়েশিয়া একটি ছোট দেশ৷ পহেলা জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮তম সদস্য হয়েছে এই দেশ৷ ক্রেয়েশিয়ার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
একটি ইউরোপীয় দেশ
ক্রোয়েশীয়রা সবসময় নিজেদের ইউরোপীয়ই মনে করেছে৷ সেদেশে জাতীয় পর্যায়ে যে কাহিনি প্রচলিত তাহচ্ছে, ‘‘খ্রিষ্টধর্ম প্রধান ইউরোপের বহিঃপ্রাকার’’ হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া৷ ফলে অনেকের ধারণা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে তারা কার্যত সেই স্থানে ফিরে গেছে, যেখানে তাদের থাকা উচিত৷
রাজধানী জাগরিব
ক্রেয়েশিয়ার রাজধানী জাগরিবে আট লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে৷ সেদেশের সবচেয়ে বড় শহর এটি৷ কার্যত দেশটির এক-পঞ্চমাংশ নাগরিকের বাস রাজধানীতে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অবধি, ক্রোয়েশিয়া আস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল৷
দুব্রভনিক – আড্রিয়াটিকের মুক্তা
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত উপকূলীয় শহর দুব্রভনিককে ভূমধ্য অঞ্চলের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের দেখা মেলে৷ দুব্রভনিকের পুরনো শহরকে ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে৷ বর্তমানে শহরটির অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল উৎস পর্যটন খাত৷
স্বাধীনতার স্বপ্ন
১৯১৮ থেকে ১৯৯১ সাল অবধি সত্তর বছরের বেশি সময় সাবেক ইয়ুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল ক্রোয়েশিয়া৷ তাসত্ত্বেও স্বাধীনতার স্বপ্ন বেঁচে ছিল ক্রোয়েশীয়দের মনে৷ ১৯৯১ সালের ২৫ জুন সেদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জো টুডম্যান নিজেদের ইয়ুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা এবং স্বাধীন ঘোষণা করেন৷
যুদ্ধ, ধ্বংস এবং স্থানচ্যুতি
ক্রোয়েশিয়া স্বাধীনতা ঘোষণার অল্প সময় পরই সেদেশের সংখ্যালঘু সার্বরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং সার্বিয়ার সেনাবাহিনী ক্রোয়েশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করে৷ সেই যুদ্ধ চার বছর স্থায়ী হয়েছিল৷ এতে ২২ হাজারের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কয়েক লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে এবং অনেক ঘরবাড়ি, স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে৷ ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷
ক্রোয়েশিয়ার উদ্বাস্তুরা
যুদ্ধ চলাকালে সাত লাখের মতো ক্রোয়েশীয় নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন৷ এদের অনেকেই জার্মানিতে আশ্রয় গ্রহণ করেন৷ যুদ্ধের শেষের দিকে আড়াই লাখের মতো সার্বীয় ক্রোয়েশিয়া ত্যাগ করেন৷ যুদ্ধ শেষে ক্রোয়েশীয়রা ফিরে গেলেও অনেক সার্ব এখনো সার্বিয়াতে আশ্রয় নিয়ে আছেন৷ তাদের আশা, ক্রোয়েশিয়া ইইউ-র সদস্য হওয়ায় এবার ঘরে ফিরতে পারবেন তারা৷
এখনো রয়ে গেছে মাইন
ক্রোয়েশিয়ার ৬৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এখনো স্থলমাইন রয়ে গেছে৷ যুদ্ধের সময় সেদেশে নব্বই হাজারের মতো স্থলমাইন পাতা হয়েছিল যার অধিকাংশের কোনো রেকর্ড নেই৷ এ ধরনের মাইন বিস্ফোরণে যুদ্ধ থেকে এখন অবধি পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা গেছে৷ ২০১৯ সাল নাগাদ সকল স্থলমাইন তুলে ফেলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ক্রোয়েশিয়া৷
যুদ্ধাপরাধী নাকি নায়ক?
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে উপযুক্ত সহযোগিতা না করার অভিযোগ রয়েছে৷ ফলে সেদেশের ইইউ সদস্যপদ প্রাপ্তির প্রক্রিয়াও দীর্ঘায়িত হয়৷ অনেক ক্রোয়েশীয় তাদের যুদ্ধকালীন জেনারেলদের নায়ক মনে করে৷ তাই জেনারেল আন্টে গোটোভিনাকে হেগের আদালতে হস্তান্তরের আগে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে সেদেশ৷
গণভোট
ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে ইইউ-র সদস্যপদের বিষয়ে ইতিবাচক ছিল না৷ ইউরো সম্পর্কে সন্দেহবাতিক অনেকে এই নিয়ে হট্টগোলও করেছে৷ তবে গণভোটে সেদেশের অধিকাংশ মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পক্ষেই ভোট দিয়েছে৷
পর্যটন খাতের প্রসার
ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্প হচ্ছে পর্যটন৷ বিশেষ করে আড্রিয়াটিক সমুদ্রে অবস্থিত দ্বীপগুলো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ৷ ক্রোয়েশীয়রা মনে করে, পৃথিবীর ‘সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র’ তাদের কাছেই রয়েছে৷ তাই তাদের আশা, ইইউ-তে যোগদানের ফলে ক্রোয়েশিয়ার পর্যটন খাত আরো সমৃদ্ধ হবে৷
ফুটবল, জাতীয় খেলা
ক্রোয়েশিয়াতে হ্যান্ডবল, ওয়াটার পোলো এবং টেনিসের মতো খেলাও জনপ্রিয়, তবে ফুটবল সেদেশের এক নম্বর খেলা৷ ইউরোপের সেরা দশটি দলের মধ্যে রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল দল৷ ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সেদেল তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল৷
ক্যাফে সংস্কৃতি
ক্রোয়েশিয়ায় আপনি যদি কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান, তাহলে সেদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ক্যাফের একটি বেছে নিতে হবে৷ ক্যাফে সংস্কৃতির জন্য সেদেশ বিশেষ পরিচিত৷ একটু গরম পরলেই তাই ক্যাফেগুলো ভর্তি হয়ে যায়৷