1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রিকেটারদের আগলে রাখছেন সাকিব

আলী সেকান্দার
২১ অক্টোবর ২০২২

টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপ কাভার করতে যেদিন অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখলাম সেদিন থেকে একটা স্বপ্ন তাড়া করছে৷ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই৷ জানি না সে স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা৷

https://p.dw.com/p/4IVt0
সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসানছবি: Getty Images/AFP

বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত যে মানের ক্রিকেট খেলছে তাতে লালিত স্বপ্নের টুটি টেনে ধরাই ভালো৷ এশিয়া কাপ, ত্রিদেশীয় সিরিজ কোনো বড় মঞ্চে জিততে পারেনি৷ ব্রিসবেনে আফগানিস্তানের কাছে ৬২ রানের পরাজয় স্বপ্ন ফেরি করা এই আমাকে নৈরাশ্যের চোরাবালিতে ডুবিয়ে দেয়৷ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচের সময় যত ঘনিয়ে আসছে বুকের পিঞ্জিরার অন্দরের ধুকপুকানি বাড়ছে তত৷ নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি পারবে তো বাংলাদেশ৷ দেশে রেখে আসা ১৬ কোটি মানুষের মুখে এক বা দুবার কি হাসি ফোটাতে পারবেন সাকিব আল হাসানেরা? হতাশার মাঝেও আশায় ঘরবসতি বাঁধি৷ বিশ্বাস করতে থাকি জিতবে বাংলাদেশ৷ পরামর্শক কোচ শ্রীধরন শ্রীরাম বৃহস্পতিবার মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে জানান, বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচই জিততে চান সম্ভব হলে৷ শ্রীরাম জানেন এটা বাস্তবসম্মত কোনো চিন্তা নয়৷ তাই ম্যাচ ধরে পরিকল্পিতভাবে এগোতে চান তিনি৷

আমার দৃষ্টিতে, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর দল পুনর্গঠন করা হলে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী হতে পারত৷ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি৷ বাংলাদেশ যে অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে সেটা বিসিবির কারণে৷ কোনোদিনই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারেনি তারা৷ এরপরও মন্দের ভালো সাকিবের মতো একজন অধিনায়কের হাতে দলটা তুলে দেওয়া হয়েছে, যে কিনা খেলোয়াড়দের আগলে রেখেছেন৷ তিনি চেষ্টা করছেন সব ধরনের বিতর্ক থেকে দলটাকে দূরে রাখতে৷ যে কারণে ক্রিকেটারদের মিডিয়ার মুখোমুখি হতে দিচ্ছেন না৷ অধিনায়ক নিজেও মিডিয়ায় কথা বলেন না৷ ২০২১ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা থেকে এই সতর্কতা সাকিবের৷ বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার নেতৃত্বে ফিরে আরও একটি ভালো কাজ করেছেন৷ দলের ভেতরের কোনো তথ্য বাইরে আসতে দিচ্ছেন না৷ আগে যেটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না৷ কারণ অতীতের অধিনায়ক এবং সিনিয়র ক্রিকেটাররাই ভেতরের খবর বাইরে প্রকাশ করতেন৷ বর্তমান দলে সেটা না থাকায় স্বাস্থ্যকর একটা পরিবেশ গড়ে উঠেছে৷ আমার কাছে মনে হয় বিশ্বকাপে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে৷

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলটাকে নতুন দলের আখ্যা দেওয়া হচ্ছে৷ তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম না থাকায় সবার এ ধারণা৷ বাস্তবতা হলো বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলে ‘আনক্যাপড’ একজনও নেই৷ কোনো না কোনো সংস্করণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আফিফ হোসেনদের৷ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন তারা৷ সেদিক থেকে দেখলে দল হিসেবে খারাপ না বাংলাদেশ৷ আমার কাছে মনে হচ্ছে সমস্যা টিম ম্যানেজমেন্টে৷ একটি ওপেনিং জুটির জন্য অতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন কোচ৷ এশিয়া কাপ থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ পর্যন্ত ছয়টি ওপেনিং জুটি খেলেছে ৯ ম্যাচে৷ ‘মেক শিফট’ ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমানকে দিয়ে খেলিয়েছেন৷ সাব্বির ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকেই বাদ দেওয়া হয়৷ সৌম্য সরকারকে নেওয়া হয় সাব্বিরের পরিবর্তে৷ স্কোয়াডে আরও একটি পরিবর্তন আনা হয় পেস বোলিং বিভাগকে৷ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গায় নেওয়া হয় শরিফুল ইসলামকে৷

শ্রীরামকে পরামর্শক কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এশিয়া কাপ থেকে৷ সেখান থেকেই পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন তিনি৷ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ পর্যন্ত সেটা চলতে থাকে৷ সাধারণত কোনো একটি সিরিজে ক্রিকেটারদের পরখ করে দেখে থাকেন কোচরা৷ সাবেক প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে, স্টিভ রোডস, রাসেল ডমিঙ্গরাও তাই করেছেন৷ কিন্তু শ্রীরাম সবাইকে ছাড়িয়ে অতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনার পথে৷ বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিই ঠিক করতে পারেনি এখন পর্যন্ত৷ যেটা দুশ্চিন্তার কারণ৷ নিয়মিত ওপেনারের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না কোচ৷ সময়ের সেরা ওপেনার লিটন কুমার দাসকেও খেলাচ্ছেন তিন নম্বরে৷ তবে মিডল অর্ডার নিয়ে কোনো চিন্তা নেই৷ সেট ব্যাটাররাই সুযোগ পাচ্ছেন ব্যাটিং করার৷

বাংলাদেশ টি২০ দলের শক্তিশালী দিক হলো বোলিং৷ বেশ কয়েক বছর ধরেই পেস বোলিং ইউনিটটা দাঁড়িয়ে গেছে৷ অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনও পেস বোলারদের অনুকূলে৷ তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেনের পাশাপাশি মুস্তাফিজুর রহমান ছন্দে রয়েছেন৷ ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং প্রস্তুতি ম্যাচে জমাট বোলিং করেছেন তারা৷ বোলিং ইউনিটের আরেকটি ভালো দিক হলো বেশ কয়েকজন স্পিন অলরাউন্ডার রয়েছে দলে৷ সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ স্পিন করেন৷ ফলে অধিনায়ক সাকিবের জন্য বোলার পরিবর্তন করা সহজ হয়ে যায়৷ বাংলাদেশের সমস্যা হলো ব্যাটিংয়ে৷ ভালো বোলিংয়ের বিপক্ষে স্কোর করতে পারে না৷ পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান করতে পারলেও মাঝের ওভারগুলোতে স্লিপ করে৷ উইকেট হারানোর একটা প্রবণতা থাকায় স্লগ ওভারে ঝড় উঠে না৷ কোচ শ্রীরাম এই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করেছেন৷ দেখা যাক, বিশ্বকাপ ম্যাচে সেটা কতটা কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে৷

আলী সেকান্দার, ক্রীড়া সাংবাদিক
আলী সেকান্দার, ক্রীড়া সাংবাদিকছবি: privat

ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স কয়েকদিন আগে মিডিয়াকে বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ম্যাচ জিততে ১৮০ করার প্রয়োজন নেই৷ ১৬০ রান করলেই বোলিং দিয়ে জিততে পারবে বাংলাদেশ৷ বাছাই পর্বের ম্যাচগুলো সেটাই প্রমাণ করে৷ বাংলাদেশের যে মানের বোলিং লাইনআপ রয়েছে তাতে করে ব্যাটাররা ১৬০ রানের পুঁজি দিতে পারলে সেটা ডিফেন্ড করা যাবে৷ বাস্তবতা হলো ব্যাটাররা ছন্দে না থাকায় ১৬০ রানই হচ্ছে না৷ লিটন বা সাকিব ছাড়া কেউই ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলতে পারছেন না৷ এরপরও আমি আশাবাদী বিশ্বকাপে ভালো খেলবে বাংলাদেশ৷ অন্তত দুটো ম্যাচ জিতে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে৷

সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত হয়ে গেছে৷ ২৪ অক্টোবর হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলবেন সাকিবরা৷ প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস হওয়াতে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর একটা সম্ভাবনা তৈরি হলো৷ আর কে না জানে শুরুতে একবার ছন্দ পেয়ে গেলে বাংলাদেশ ভয়ংকর দল৷ পরে সিডনিতে সাউথ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দিতে পারবে৷ নিরাশার মাঝেও আমি তাই আশার প্রদীপ দেখতে পাচ্ছি৷ জয়ের স্বপ্ন সারথী করে ছুটতে চাই বাংলাদেশ দলের পিছু এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য