ক্রমশ মহামূল্য হয়ে উঠছে নীল নদের জল
১৩ নভেম্বর ২০১০এদিকে আবার আফ্রিকার কয়েকটি দেশও নীলের জলের ন্যায্য হিস্যা চেয়েছে৷
নীলের বদ্বীপ, ভূমধ্যসাগর থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠা শহর নুবারিয়া৷ খেজুর বাগানের ছায়ায় সেখানে গাধা, ছাগল সহ অন্যান্য গবাদিপশুরা আশ্রয় খোঁজে৷ এরই পাশে তপ্ত বালুর মধ্যে সেচের জন্য ব্যবহৃত হামুখ কালো সব সেচের নল তৃষ্ণাতুর চেয়ে আছে৷ আসলে মিশরের সরকার আশির দশকের শুরুতে প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার হেক্টর মরুভূমি চাষের জমি হিসেবে সেদেশের গরিব চাষিদের মধ্যে সস্তায় দিয়েছিল৷ যদিও আজ জলের অভাবে তপ্ত ঊষর নিষ্ফলা এই মরু জমির কারণে অনেক চাষিই হতাশ হয়ে পড়েছেন৷
‘আমি কুমড়ো আর বাদামের চাষ করেছিলাম৷ কিন্তু মাত্র দু'বছরের মাথাতেই দেখলাম এ জমি আর ব্যবহারই করতে পারছি না৷' কথাটি আব্দেল ছাতর্ এর৷ যিনি দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে এই নিষ্ফলা জমিতে সবুজ ফোটানোর চেষ্টা করে আসছেন৷ এরপর থেকে আব্দেল ছাতর্ দিন মজুরি করেই দিনাতিপাত করছেন৷ কি আর করা বাঁচতে তো হবে৷
এখন নুরাবিয়ার এ অঞ্চলের প্রায় পনেরো শতাংশ এক ফসলি জমিই আর চাষযোগ্য নেই, কারণ একটাই – জলের অভাব৷ জল লবণাক্তও বটে৷ এখন নীল থেকে স্বল্প পরিমাণ জলই ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হতে পারে৷ সেকারণে জলে লবণাক্ততা বাড়ছে৷
নীলের বহুমাত্রিক সংকটের এটি কেবল একটি দিক৷ আরো এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা ক্রমশ জল সংকটের ভীতি আর আশংকা তৈরি করছে৷ মিশরের জল চাহিদার আশিভাগ পূরণ করে নীল৷ কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জলের এই সংকট ক্রমেই বাড়ছে৷ জাতিসংঘের এক তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মিশরীয়রা তাদের প্রয়োজনীয় জল চাহিদার চেয়ে তিরিশ ভাগ জল কম ব্যবহার করতে পারে৷
মিশরের ওয়াটার রিসোর্সেস অ্যান্ড ইরিগেশন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নাসেরেদ্দীন আলাম জানিয়েছেন, ১৯৫৯ সালে মিশরের জনসংখ্যা ছিল চব্বিশ মিলিয়ন আর নীল থেকে যে জল সংগৃহীত হতো তার পরিমাণ ছিল সাড়ে পঞ্চান্ন বিলিয়ন কিউবিক মিটার৷ তখনকার জনসংখ্যার অনুপাতে এক হিসেবে তা যথেষ্টই ছিল৷ কিন্তু বর্তমানের বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন৷ এখন নীলের জল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব হিসেব করেই মিশরকে চলতে হচ্ছে৷
সম্পন্ন চাষিরাও জলের এই নিয়ন্ত্রণে ক্ষুব্ধ৷ অনেকেই সরকারের এই রেশন করে জল বণ্টনের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ হাজিদ গেনদি এদেরই একজন৷ যাঁর প্রায় পাঁচ একর জমি রয়েছে৷ তিনি বলেছেন, উজানের দেশগুলো যেমন, ইথিওপিয়া আর উগান্ডা নীল থেকে তাদের প্রাপ্য জলের চাইতেও অনেক বেশি জল নিয়ে যাচ্ছে৷ এখন কথা হচ্ছে – আসলেই কতোখানি জল মিশরের প্রাপ্য৷
১৯২৯ সালের এক চুক্তির কারণে নীল নদের প্রায় নব্বই শতাংশ জল ভোগ করছে মিশর৷ মিশর আর সুদান সহ মোট নয়টি দেশের ওপর দিয়ে নীল প্রবাহিত হয়েছে, আর এই নয়টি দেশের অধিকাংশ দেশই খরাপীড়িত এবং দরিদ্র দেশ৷ নীলের জল নিয়ে একটি নতুন চুক্তিও হতে যাচ্ছে ইথিওপিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া, রুয়ান্ডা আর উগান্ডার মধ্যে, যার ঘোরতর বিপক্ষে রয়েছে মিশর আর সুদান৷ সংকট বাড়ছে, ক্রমশ মহামূল্যবান হয়ে উঠছে নীলের জল৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন