কোনো আসনই ছাড়বে না আওয়ামী লীগ
৮ জুলাই ২০১৮নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা৷ ৩০ জুন এবং ৭ জুলাই গণভবনে এই বৈঠক হয়৷ এর আগে ২৩ জুন তিনি জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ডিসেম্বরের নির্বাচনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যাতে এক হয়ে কাজ করেন৷ অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে দলের প্রার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন৷
শেখ হাসিনা নিজেই বৈঠকে বলেছেন, ‘যাকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে তার জন্যই সবাইকে কাজ করতে হবে৷ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এটা ধরে নিয়েই তৃণমূলকে এখনই ভোটের জন্য মানুষের দুয়ারে যেতে হবে৷' তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘এখন যারা এমপি আছেন তারা সবাই যে নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন তা নয়৷ মনোনয়ন হবে এলাকায় জনপ্রিয়তা ও কাজের ভিত্তিতে৷'
এই তৃণমূল সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের দ্বন্দ্ব বিবাদ ভুলে নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করতে বলেছেন৷’ বলেছেন, এখনই মানুষের কাছে গিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারে উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে৷ মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন জয় করতে৷ আর বলেছেন যাকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে তার জন্যই কাজ করতে হবে৷'
তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তৃণমূল থেকেই এবার প্রার্থী বাছাই করা হবে৷ কোনো কোন্দল ফ্যাসাদ না করে কে প্রার্থী হবে তা চিন্তা না করে নৌকা প্রতীককে জয়ী করার জন্য কাজ করতে হবে৷'
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের আসনের এমপি স্বতন্ত্র৷ তাই এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তেমন নেই৷ আমরা এরইমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করেছি৷'
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একটি আসনও ছাড়া যাবে না৷ আর যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে তার জন্য কাজ করতে হবে৷ কোনো সমালোচনা করা যাবেনা৷'
তিনি বলেন, ‘আমরাও ঐক্যবদ্ধভাবে যাকে নৌকা মার্কা দেয়া হবে তার জন্যই কাজ করব বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি৷ তবে একটি আসনও ছাড়া যাবে না মানে এই নয় যে ৩০০ আসনই আমরা চাই৷ সরকার গঠনের জন্য যে আসন প্রয়োজন তার জন্য আমরা প্রাণপণ কাজ করব৷'
প্রার্থী মনোনয়নের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাঠ পর্যায়ে কে ভালো কাজ করেছে, কে খারাপ কাজ করেছে, কার কী রেকর্ড তা আমার কাছে আছে, কার কী অবস্থান তার রিপোর্ট আমার কাছে আছে৷ ব্যক্তিগত এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷ এগুলো দেখেই আমি প্রার্থী মনোনয়ন দেব৷'
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু নির্বাচনী এলাকায় দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে, দ্বন্দ্ব আছে৷ অনেক এমপি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের এড়িয়ে এলাকায় কাজ করেছেন, এতে ক্ষোভ ও মান অভিমান তৈরি হয়েছে৷ এটা নেত্রী নিজেও জানেন, তার কাছেও তথ্য আছে৷ তারপরও তিনি এসব ভুলে গিয়ে নির্বাচনের জন্য একসাথে কাজ করতে বলেছেন৷'
শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলে কোনো দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং হলে তা তিনি সহজভাবে নেবেন না৷ তিনি মনে করেন তৃণমূল এক থাকলে আওয়ামী লীগের টার্গেটেড আসনের প্রার্থীরা জয়ী হবে৷ তিনি এও বলেছেন, কোনো প্রার্থী হারলে তার দায় নিতে হবে তৃণমূলকেই৷ অতীতে তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কারণেই প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন বলেও মনে করেন তিনি৷
আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত হবে বলে মনে করছে না আওয়ামী লীগ৷ ওই নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জন করে৷ একতরফা নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন৷ আওয়ামী লীগ মোট ২৩৩ টি আসন পায়৷
তবে শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের বলেছেন, ‘এবার সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে৷ নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক৷ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে সেটা ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে৷'
এবারের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও মাথায় রাখছে আওয়ামী লীগ৷ সবদিক ভেবে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য এখন থেকেই মাঠে নেমে গেছে তারা৷ পরিস্থিতি বুঝে নেয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ৷ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাতে কোনো ঢিলেমি কাজ না করে সে বিষয়েও সতর্ক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রধানত দু'টি উদ্দেশ্যে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ তাদের জন্য গণভবন উন্মূক্ত করে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা এবং আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ তার লক্ষ্য অর্জন করতে না পারে তাহলে তার কি ফল হতে পারে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়া৷ প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলকে সরাসরি আগামী নির্বাচন নিয়ে তার এবং দলের মনোভাব জানিয়ে দিয়েছেন৷'
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তৃণমূলের সব নেতাকেতো আর কথা বলার সুযোগ দেয়া যায়নি৷ তবে যারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলেছেন, তাদের কথার মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন৷ সেই অনুযায়ী নির্দেশনাও দিয়েছেন৷ আর আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা সবার সঙ্গে আলাদা আলাদা গ্রুপ করে কথা বলেছি৷ তাদের কথার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে৷ আর তাদের এই মতামত নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে৷'