কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
১৭ নভেম্বর ২০২০পুলিশ অবশ্য এরইমধ্যে সাকিবকে ফেসবুক ভিডিওতে চাপাতি উঁচিয়ে হত্যার হুমকিদাতা সিলেটের মহসিন তালুকদারকে গ্রেপ্তার করেছে৷ সুনামগঞ্জ থেকে র্যাব মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তার করে৷ গত রোববার রাত ১২টার পর সে ফেসবুক লাইভে চাপাতি উঁচিয়ে সাকিবকে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেন৷ সাকিব মুসলমান হয়েও কলকাতা গিয়ে ‘পূজার উদ্বোধন করেছে’ এই অজুহাতে তাকে গালাগাল ও পায়ে হেঁটে ঢাকা গিয়ে হত্যার হুমকি দেন ওই যুবক৷ সোমবার ভোররাতে অবশ্য আরেকটি ভিডিওতে সে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন৷
সাকিব আল হাসান তাকে হত্যার হুমকির বিষয়টি উল্লেখ না করে সোমবার তার ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, ‘‘আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান মনে করি৷ অনেকেই বলছে, আমি পূজা উদ্বোধন করেছি৷ যেটি আমি কখনোই করিনি৷ সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি এটা করবো না৷ তারপরও হয়তো ওখানে যাওয়টাই আমার ঠিক হয়নি৷ সেটি যদি আপনারা মনে করে থাকেন তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত৷ ক্ষমা প্রার্থী৷ আমি আশা করবো, আপানারা এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷ এরকম কোনো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেটিও আমরা চেষ্টা করবো৷’’
দুইটি বিষয় নিয়ে কয়েকজন ক্রিকেটারের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি সাকিবের নিজস্ব ও ব্যক্তিগত ব্যাপার ৷ এর সাথে ক্রিকেটের কোনো সম্পর্ক নাই৷ তিনি কীভাবে ভালো থাকবেন সেই সিদ্ধান্ত তার৷ এর বেশি আর কোনো মন্তব্য আমি করতে চাই না৷’’
ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, মুসলমানরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে পারেন৷ এদে দোষের কিছু নাই৷ আর এজন্য হত্যার হুমকি দেয়া গর্হিত অপরাধ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘মুসলমানরা পূজা বা অন্য ধর্ম পালন করবে না৷ কিন্তু অন্য ধর্মের অনুষ্ঠান বা পূজায় সংহতি জানাতে যেতে পারবেন৷ এতে কোনো বাধা নাই৷ আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিরাও তো যান৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং সবার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে মুসলমানেরা যেতে পারেন৷’’
বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হারাচ্ছে৷ উগ্রতা বেড়ে যাচ্ছে৷ প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে যেমন এটা হচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের রাজনীতিতে এই অপশক্তিগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে৷ মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘সাকিবকে হত্যার হুমকি দিয়ে ওই ব্যক্তি ধর্মীয় উগ্রতার প্রকাশ ঘটিয়ছে৷ আবার সাকিব নিজেকে গর্বিত মুসলমান বলে ক্ষমা চেয়ে যে কথা বলেছেন তার মধ্যেও ভাবনার বিষয় আছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় তিনি ভয়ে বা অন্য কোনো কারণে এরকম কথা বলেছেন৷ তবে আমার বিশেষভাবে মনে হয় তিনি নিজের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করেই ওইসব কথা বলেছেন৷ পরস্থিতি এতই খারাপ যে তিনি নিরাপত্তা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছেন না৷’’
বাংলাদেশের যে ঐতিহাসিক ধারা সেই বিবেচনায় দেশ এখন পিছনের দিকে হাঁটছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন৷ তিনি বলেন, ‘‘শুধু সাকিব নয় আমরা প্রায়ই এরকম হত্যার হুমকি দেখি৷ বুদ্ধিজীবী, ব্লগার, ভিন্ন চিন্তার মানুষকে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে এরকম হুমকি দেয়া হয়৷ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে৷ এই গোষ্ঠীর কারণে নারী নীতি বাস্তবায়ন করেনি সরকার৷ তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে অপসারণ করতে বলছে৷’’
তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখলে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ পিছনের দিকে হাঁটছে৷ এখানে ধর্মীয় মৌলবাদ জেঁকে বসছে৷’’
তার মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিকারভাবে চর্চা না করে এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে৷
তিনি সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না এটা কেমন কথা? মুসলমানরা কি অমুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না৷ মুসলমান অমুসলমান চিকিৎসকের চিকিৎসা নেবে না৷ ভারতে তো অনেক মুসলমান আছে প্রতিমা বানায়৷ সেটা তাদের পেশা৷ আবার ভারতই গরুর মাংস রপ্তানি করে৷ সেটাও তাদের ব্যবসা৷ সাকিব আল হাসানকে হত্যার হুমকি ধর্মীয় উগ্রতার চরম বহিঃপ্রকাশ৷’’
সাকিবের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তিনি অন্য কোনো ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কি নেবেন না সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷’’
গতবছর অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন....