1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটাবিরোধী আন্দোলন কী করবে সরকার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ জুলাই ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলন "বাংলা ব্লকেড” ঢাকাসহ সারাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আর তা নিয়ে সরকারের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে । বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকেরা বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলছেন।

https://p.dw.com/p/4i1TN
ঢাকায় ‘বাংলা ব্লকেড’ আন্দোলন
চলছে ‘বাংলা ব্লকেড’ আন্দোলনছবি: Samir Kumar Dey/DW

আন্দোলনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার চারদিনের সফরে চীন গেছেন।  তবে চীন যাওয়ার আগে রোববার তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি হাইকোর্টের রায়ের ব্যাপারে উচ্চ আদালত থেকেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে বলে জানান। অবশ্য পুরো বক্তব্যে তিনি কোটার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। জানা গেছে, সরকার এখন আদালতের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার  পরে তাদের অবস্থান ঠিক করবে এই অবস্থানে অনঢ় আছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে "সহনশীলতার” সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা এই আন্দোলনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং গতি প্রকৃতি বোঝারও চেষ্টা করছে।

পাঁচ মন্ত্রীর বৈঠক

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "তারা যে আন্দোলনটা করছে সেই সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। সরকারই সেই আপিল করেছে। যে বিষয়টা আদালতের, সেই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা, সমালোচনা করা বা প্রতিবাদ করা এটা তো আইনসিদ্ধ নয়।”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে, "আমরা আপিল করলাম, এখনও আদালত চূড়ান্ত রায় দেননি। এখানে আমরা কীভাবে ইন্টারফেয়ার করি? আমরা বলছি জনদুর্ভোগ হয় এমন আন্দোলন পরিহার করা উচিত। আদালতের রায় হোক তারপর দেখা যাবে।”

তিনি অবশ্য বলেন,"বিএনপি ও তার সমমনারা কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। তারা প্রকাশ্যে সাপোর্ট করেছে, এর মানে তারা এর মধ্যে অংশগ্রহণও করছে। কাজেই এখন এটা পোলারাইজড পলিটিক্সের মধ্যেই পড়ে গেছে। এটার পলিটিক্যাল কালার আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে কারা কারা যুক্ত আছে, কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা সেটা আন্দোলনের গতিধারার মধ্যেই বোঝা যাবে।” 

সংবাদ সম্মেলনের পর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহারকে বৈঠক করেন।

‘আদালতের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে সরকারের কিছু করার নেই’

সরকারে নানা ভাবনা

জানা গেছে সরকার এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন কতটা ছাড়ায় তা আরো কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করবে। প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আন্দোল যাতে সংযত পর্যায়ে থাকে সেই চেষ্টাই থাকবে সরকারের দিক থেকে। একইসঙ্গে আইনগত দিক নিয়েও ভাবছে। কারণ আপিল বিভাগের রায়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ তারা এখন পর্যন্ত দেখছে না । একই সঙ্গে এই আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের বাইরে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কিনা তাও দেখা হচেছ। সরকার এই সময়ে সংবাদ মাধ্যমের সহায়তায় তার অবস্থান আরো পরিষ্কার করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী চীন যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতি নির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে গেছেন।

সরকারের এক মন্ত্রী বলেন,"আসলে ২০১৮ সালে সরকার যখন প্রজ্ঞাপন জারি করে সব কোটা বাতিল করে তারপর এটা নিয়ে আরো কাজ করা যেত। তাহলে হয়তো বা এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে তা নাও হতে পারত।”

সরকারের এখন আশঙ্কা, আন্দোলন আরো বিস্তৃত হলে সেটা কীভাবে সামাল দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো একশনে যাওয়ার পরিকল্পনা নাই। প্রধানমন্ত্রী এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কখায় যে জিনিসটা স্পষ্ট হয়েছে তা হলো সরকার আদালতের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কিছু করতে পারবে। তবে সেই ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের বোঝানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করছে সরকার পক্ষ। রায়ের পর কোটার সংস্কারের একটি ইঙ্গিতও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতে আশ্বস্ত হচ্ছে না। একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন,"আমরা যে নানা মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলছি না তা নয়। আবার প্রধানমন্ত্রী এবং ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথার মধ্যেও মেসেজ আছে। কিন্তু তারা তো সরাসরি ঘোষণা চাচ্ছে। আদালতের প্রক্রিয়া শেষ না হলে তো সেটা সম্ভব নয়।”

‘আশা করি দ্রুতই আদালতের চূড়ান্ত রায় পাওয়া যাবে’

তিনি বলেন,"সরকারের জন্যও এটা একটা অস্বস্তিকর অবস্থা। কারণ সরকার আপাতত অফিসিয়ালি কিছু করতে পারছে না। আর কোটা সংস্কার কীভাবে হবে সেটা নির্ধারণ করতেও কোনো কমিটি বা কমিশন লাগবে। সেই সমাধান যদি আদালতের দিক থেকে আসে তাহলে তা সরকারের জন্য সহজ হয়ে যাবে।”

ওই নেতা বলেন, "আসলে বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব নিস্পত্তি হওয়া দরকার। নয়তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এটা যত ঝুলবে এর মধ্যে তত নানা এলিমেন্ট যুক্ত হবে।”

২০১৮ সালে সরকার কোটা বাতিল করার আগে যে আন্দোলন হয়েছিলো সেই আন্দোলন সরকার এবার মাথায় রাখছে। তাই পরিস্থিতে সেইরকম যাতে না হয় তার জন্য চেষ্টা করছে সরকার, বলেন তিনি।

আদালতের রায়ের আগে কিছু করবে না সরকার

আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের দুই  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও বহাউদ্দিন নাসিম। বাহাউদ্দিন নাসিম ডয়চে ভেলেকে বলেন,"সরকার তো ২০১৮ সালেই কোটা বাতিল করেছে। এরপর সংক্ষুব্ধরা আদালতে গিয়েছেন। আদালত বাতিলের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। আমরা কোটা বাতিল চাই বলেই তো আবার সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আদালতের প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু করার নেই।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই আন্দোলনে আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। তবে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। একজন নাগরিক হিসাবে তার শিকার আমিও হচ্ছি।  আর যারা আন্দোলন করছে তারা তো আমাদেরই সন্তান। তারা কোটা বাতিল চায় । আমরাও তো চাই বলেই কোটা বাতিল করেছিলাম। তাদের সঙ্গে এখন বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি তারা এখন বাস্তব আইনগত পরিস্থিতি বুঝবে।”

আর মাহবুব উল আলম হনিফ বলেন,"আমরাও কোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। আমার মনে হয় তাদের একটু অপেক্ষা করা উচিত। ধৈর্য ধরা উচিত। দেখা উচিত আদালতের সিদ্ধান্ত কী আসে। তারপর সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাদের এইটুকু অপেক্ষা করা উচিত। আশা করি দ্রুতই আদালতের চূড়ান্ত রায় পাওয়া যাবে।”