কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে দূরত্ব গড়তে চান মমতা
৫ ডিসেম্বর ২০১১‘‘লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে মানুষের সমর্থন প্রমাণ করল যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংকল্পের পাশে মানুষ আছে’’৷ দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জেতার পর কথাগুলো বলছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সাংসদ সুব্রত বক্সি৷ প্রত্যাশিতভাবেই নতুন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সুশাসনের গুণগান করলেন তিনি৷ কিন্তু অপ্রত্যাশিত মন্তব্যটি এল খোদ তৃণমূল নেত্রীর থেকে৷ বিজয়ের মুহূর্তেও তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করলেন কেন্দ্রে এবং রাজ্যে তাঁর জোটসঙ্গী জাতীয় কংগ্রেসকে৷ মমতা বললেন, ‘‘আমাদের বন্ধুদের শুভেচ্ছায়, তারা নির্দল প্রার্থী দিয়ে সিপিএমের হাত শক্তিশালী করেছিলেন বলে গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল ২৯টা আসনে হেরেছে৷ নয়তো ওই ২৯টা আসনও ওরা পায় না৷’’
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ বিস্মিত যে, সাফল্য যখন এসেই গেছে তখন পুরনো অসহযোগিতার প্রসঙ্গ তুলে কেন তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসের সঙ্গে নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত করছেন৷ ঘটনা হল, দক্ষিণ কলকাতায় এই উপনির্বাচনের প্রচার যখন চলছে, তখন যুব কংগ্রেসের ব্যানারে একটি রাজনৈতিক সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর এবং দীপা দাসমুন্সি৷ বিব্রত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই একবার অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছিলেন৷ উপনির্বাচনে জেতার পর ফের গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের অসহযোগিতার প্রসঙ্গ তুলে মমতা পরোক্ষে অভিযোগের আঙুল তুললেন মূলত দীপা দাসমুন্সির দিকে, যাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও রাজ্যে বাম-বিরোধী জোট ভন্ডুল করার অভিযোগ উঠেছে৷
আরও একটি সম্ভাবনার কথা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যে, তৃণমূল নেত্রী খুব সচেতনভাবেই জাতীয় কংগ্রেস এবং কেন্দ্রের ইউপিএ জোট সরকারের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি করতে চাইছেন৷ কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে এযাত্রা খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ স্থগিত হয়েছে বা পেট্রলের দাম কমেছে ঠিকই, কিন্তু ডিজেল, কেরোসিন, রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অদূর ভবিষ্যতে একের পর এক জনবিরোধী সিদ্ধান্তের জন্ম দিতে চলেছে৷ সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে ইউপিএ সরকারের সঙ্ঘাত অবধারিত হয়ে পড়বে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্ভবত সেই ক্ষেত্রটাই প্রস্তুত রাখতে চাইছেন৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক