কেনিয়ায় যৌন নির্যাতন
২ এপ্রিল ২০১৪২০০৭ সালে ৩০শে ডিসেম্বর কেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন মোয়াই কিবাকি৷ বিরোধীদল নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের এনে সহিংস আন্দোলন গড়ে তোলে৷ সরকার সমর্থিত ও বিরোধী দুই দলই ছুরি, চাপাতি, লোহার রড নিয়ে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হয়৷ বাড়িঘর পোড়ানো হয়, মানুষকে হতাহত করা হয়, কেটে টুকরো টুকরো করা হয়৷ হামলার সহজ শিকার ছিল নারী ও শিশুরা৷ এমনকি নিরাপত্তারক্ষা বাহিনী তথা পুলিশের লোকজনও হামলা করা থেকে বিরত থাকেনি৷ যোগ দিয়েছে নিপীড়ন, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ভয়ানক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে৷
ভুক্তভোগীরা ক্ষতিপূরণ পাননি
আজ পর্যন্ত এদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি৷ ভুক্তভোগীরা কোনো স্বীকৃতি বা ক্ষতিপূরণ পাননি৷ অনেকেই শারীরিক ও মানসিক ক্ষত নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন৷ আক্রান্ত হয়েছেন এইডস-এর ভাইরাসে৷
‘কোলাবোরাটিভ সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট'-এর পরিচালক মাশেটি মাসেনিলা বলেন, ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে বহু মেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে চান৷ কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই তাঁদের আমল দেওয়া হয় না৷ ধর্ষণকে গুরুতর অপরাধ বলেও গণ্য করা হয় না৷
থানায় জিজ্ঞস করা হয়, ‘‘কেউ কি মারা গিয়েছে? কাউকে কি পেটানো হয়েছে?'' উত্তরটি না সূচক হলে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়, ‘‘তাহলে আমাদের সময় নেই৷ আরো গুরুতর বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় আমাদের৷''
এখন নির্যাতনের শিকার আটজন নারী মামলা দায়ের করেছেন কেনিয়া প্রজাতন্ত্রের অ্যাটর্নি জেনারেল, পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল, জাতীয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রলায়ের বিরুদ্ধে৷ এইসব নারীকে সহায়তা করছে বেশ কিছু মানবাধিকাররক্ষা সংস্থা৷
বাদিপক্ষের প্রধান অভিযোগ: পুলিশ বেসামরিক লোকজনকে যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ আজ পর্যন্ত এই অপরাধের তদন্ত করতে রাজি হয়নি৷
নাম প্রকাশ করেননি
অভিযোগকারীরা তাঁদের নাম প্রকাশ করেননি৷ কেনিয়ার মানবাধিকার সংস্থা ‘কোয়ালিশন অন ভায়োলেন্স এগেইন্সট উইমেন'-এর উপপরিচালক লুডিয়া মিথিয়ানি তাদের বিবৃতি নথিভুক্ত করেছেন৷ দক্ষিণ নাইরোবির বস্তিবাসী এক নারীর লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন তিনি৷ মেয়েটি প্রথমে পুলিশবাহিনীর সদস্য ও একদল দুষ্কৃতিকারীর দ্বারা ধর্ষিত হন৷ তারা মেয়েটির পা এমনভাব মুচড়ে দেয়, যাতে তা ভেঙে যায়৷ তারা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর আরো একদল তাঁর বাসায় আসে লুটপাট করার জন্য৷ মেয়েটিকে আহত ও নগ্ন অবস্থায় দেখতে পেয়ে উল্লাস প্রকাশ করে তারা৷
অভিযোগপত্রটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্থাপন করা হয়৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি৷ এই বছর জানুয়ারি মাসে মামলার প্রথম তারিখেও সংশ্লিষ্টদের সকল প্রতিনিধে উপস্থিত হননি৷ পরে ২৫শে মার্চে আবার আদালতের তারিখ ধার্য করা হয়৷
এই মামলা আদালতে আসার আগেই ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ শুধু সরকারের বিরুদ্ধে বলেই নয়৷ সামাজিক এক ট্যাবুও ভেঙেছে এটি৷ ‘‘আমরা কেনিয়ানরা এই ধরনের ঘটনা সনাতন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি৷ কোনো তরুণীকে কলুষিত করা হলে বা কোনো নারী ধর্ষিত হলে তা অভিশাপ হিসাবে দেখা হয়৷'' বলেন কেনিয়ার জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফাইথ ওখিয়েং৷ এ কারণে তিনি মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন৷ এই ধরনের ঘটনা আদালতে উপস্থাপন করতে চান তিনি৷ যাতে বিষয়টি সম্পর্কে মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে৷
ভুক্তভোগীদেরই দোষ দেওয়া হয়
প্রায় ক্ষেত্রেই এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় না৷ আর হলেও ভুক্তভোগীদেরই দোষ দেওয়া হয়৷ এমনকি পরিবারের তরফ থেকেও পরিত্যাজ্য হতে হয় তাদের৷ কেননা মনে করা হয় ধর্ষিত মেয়েটি গোটা পরিবারে জন্য লজ্জা, বলেন ওখিয়েং৷
নারী ও শিশুরক্ষা সংস্থাগুলি আশা করছে এই মামলা কেনিয়ার মানুষদের এক্ষেত্রে জাগিয়ে তুলবে৷ এখনও ধর্ষণের মতো অপরাধকে লঘু অপরাধ বলে মনে করা হয়৷ অ্যাক্টিভিস্টরা পুলিশ, চিকিত্সক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীদের আরো ভালো প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি করেন৷ এক্ষেত্রে মামলাটি একটি ভূমিকা রাখতে পারবে৷ রায় যাই হোক না কেন৷