কৃত্রিম পায়ের ‘মাইন ম্যান’!
হোশিয়ার আলী, ইরাকের স্থল মাইন নিষ্ক্রিয়কারীদের একজন৷ মাইন নিষ্ক্রিয় করতে গিয়েই হারিয়েছেন দুই পা৷ কিন্তু থেমে নেই তার এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ৷
বিস্ফোরকের সঙ্গে বসবাস
৩০ বছরের বেশি সময় ধরে মাইন নিষ্ক্রিয় করার কাজ করছেন ইরাকের হালাবজা শহরের হোশিয়ার আলী৷ বয়স ৫৩ বছর৷ এই বয়সেও নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন মাইন নিষ্ক্রিয় করার কাজ৷ কোনো বাধাই দমাতে পারেনি তাঁকে৷
একে একে দুই পা হারানো
১৯৮৯ সালে মাইন নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে উড়ে যায় তাঁর এক পা৷ সেদিনও নিত্যদিনকার মতো কুর্দিশ প্রদেশে মাইন নিষ্ক্রিয় করতে যান তিনি৷ এরপর ১৯৯৪ সালে ইরাক -ইরান সীমান্তে মাইন নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে তিনি দ্বিতীয় পা-ও হারান৷ জ্ঞান ফেরার পর যখন দেখলেন আরেকটি পা-ও হারিয়েছেন, তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন,এই কাজ চালিয়েই যাবেন৷
স্থলমাইনের আখড়া!
কুর্দিস্তানের আনাচেকানাচে স্থল মাইন পোঁতা রয়েছে৷ ইরাকের এই প্রদেশকে ‘মাইনের আখড়া’ আখ্যা দেওয়া হয়৷ বিশেষ করে বানজুইন, হালাবজা, কারমায়ান ও আলী সাদিক সবচেয়ে অনিরাপদ এলাকা ছিল৷ এ কারণে এই প্রদেশেই রয়েছে মাইন বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷
১৬ হাজার মাইন!
গত ৩৫ বছরে ১৬ হাজার স্থল মাইন নিষ্ক্রিয় করেছেন হোশিয়ার আলী৷
নিরলস পরিশ্রমী আলী
১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় পা হারানোর পর সুস্থ হয়ে ফিরে প্রায় প্রতিদিনই কাজ করে চলেছেন আলী৷ মাইন নিষ্ক্রিয়ের ক্ষেত্রে তিনি নিজস্ব পদ্ধতি বের করে নিয়েছেন৷ হোশিয়ার আলীর প্রশংসা করতে গিয়ে প্রাদেশিক মাইন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ ফাত্তাহ বলেন, ‘‘তিনি বীর, নিরাপদ কুর্দিস্তানের জন্য লড়াই করছেন৷’’
যোদ্ধা আলী
শুধুই মাইন নিষ্ক্রিয়কারী নন, হোশিয়ার আলী ১৯৮০ সালে ইরাক-ইরান সীমান্তে কুর্দি সামরিক বাহিনী পেশমের্গার সঙ্গে লড়াইও করেছেন৷ সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন তিনি৷
সাদ্দাম বনাম আইএসআই
সাদ্দামের আমলের মাইনের চেয়ে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের পোঁতা মাইন অধিক শক্তিশালী ও আধুনিক বলে জানান হোশিয়ার আলী৷ এবং এগুলো নিষ্ক্রিয় করতে বেশ সময় লাগে৷ তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত ধ্বংসের সক্ষমতাও বাড়ছে৷
আমায় ডেকো!
হোশিয়ার আলী কুর্দিস্তানের সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিলেও সামরিক বাহিনীর প্রতিটি বিভাগে তাঁর ফোন নাম্বার রয়েছে৷ মাইন বিষয়ক যে-কোনো জটিলতায় হোশিয়ার আলী তাঁকে জানানোর উন্মুক্ত আহ্বান জানিয়েছেন৷
‘মাইন ম্যান’
মাইন নিয়ে কাজ করতে করতে আলী এতটাই জনপ্রিয়তা ও সম্মান পেয়েছেন যে বলতে গেলে কুর্দিস্তানের সবাই-ই তাঁকে ‘মাইন ম্যান’ বলে ডাকে৷ ইতোমধ্যে মাইন জাদুঘর খুলেছেন হোশিয়ার আলী৷ স্কুল পর্যায়ে মাইন বিষয়ক সচেতনতার ক্যাম্পেইনও শুরু করেছেন তিনি৷
প্রজন্মের জন্য
হোশিয়ার আলী বলেন, তাঁর এই লড়াইসহ সব কিছুই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য৷ দুই মেয়ে ও দুই ছেলে আছে তাঁর৷ তারা যেন নিরাপদ ও মাইন বিস্ফোরণ ছাড়া জীবন কাটাতে পারে সেই প্রত্যাশাতেই কাজ করছেন হোশিয়ার আলী৷