কুয়াশা থেকে পানি
১ মার্চ ২০১৭রাস্তাটা সরু আর এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোও সহজ নয়৷ কিন্তু দার সি হমাদ এনজিও-র জামিলা বারগাশ বুৎমেজগিদা পাহাড়ে ওঠার পথ চেনেন৷ ১,২০০ মিটার উচ্চতায় দার সি হমাদ এনজিও একটি বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছে৷
লক্ষ্য হলো: পানীয় জল সংগ্রহ করা৷ তাই এ-ধরনের জাল টাঙানো হয়েছে৷ এই জালে কুয়াশা ধরা পড়ে; জাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি চুঁইয়ে নীচে গিয়ে জমা হয়৷ আজ রোদ ঝকঝক করছে৷ কিন্তু প্রায়ই পুরো এলাকাটা কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে৷
এনজিও দার সি হমাদ-এর জামিলা বারগাশ বললেন, ‘‘কুয়াশা আসে এদিক থেকে৷ দেখা যায়, কীভাবে তা ক্রমেই আরো ওপরে উঠছে৷ অথচ কোথায় পা ফেলছি, তা দেখা যায় না...৷’’
দক্ষিণ-পশ্চিম মরক্কোর এই এলাকাটি সাহারা মরুভূমির প্রান্তে৷ এখানে কখনো-সখনো বৃষ্টি হয়, তাও অত্যন্ত কম৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রায়ই খরা হয়৷ পানি আনার জন্য মানুষজনকে কখনো-সখনো দু’তিন ঘণ্টা হাঁটতে হয়৷ এখানকার মানুষ চাষবাস করে বাঁচেন৷ কৃষি আর পশুপালন, দু'টি কাজের জন্যেই লাগে পানি৷ কুয়াশা ধরার প্রকল্প পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে৷
কুয়াশা ধরার জাল
তিন বছর আগে দার সি হমাদ এনজিও জার্মান ওয়াটার ফাউন্ডেশন বা পানি নিধির সঙ্গে ‘ফগ নেট প্রোজেক্ট’, অর্থাৎ কুয়াশা ধরার জাল প্রকল্প শুরু করে৷ ইনডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনার পেটার ট্রাউটভাইন সেজন্য নানা ধরনের ফাইবার পরীক্ষা করেছেন৷ জাল বাতাসে ছিঁড়ে গেলে চলবে না, তা-তে পর্যাপ্ত পানি ধরা চাই, এছাড়া জালগুলো টাঙানো সহজ হওয়া চাই৷
জার্মান ওয়াটার ফাউন্ডেশন-এর পেটার ট্রাউটভাইন বললেন, ‘‘একটা রাবারের এক্সপ্যান্ডার নিয়ে, সেটাকে তলায় এখানে আটকে, একটু টেনে ওপরে লাগিয়ে খানিকটা অ্যাডজাস্ট করে নিতে হয়৷ এবার পুরো কাঠামোটাই শক্ত৷ পরিষ্কার দেখা যায়, জালটা বাতাসে কীভাবে নড়তে-চড়তে পারবে৷’’
নতুন কুয়াশা ধরার জালগুলো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ভালোই কাজ করেছে৷ আগামী বছর বুৎমেজগিদা পাহাড়ের চারপাশে ৩১টি ফগ নেটের একটি বড় গ্রিড বসানো হবে৷
জামিলা বারগাশ ও তাঁর এনজিও-র প্রকল্পটি মারাকেশের জলবায়ু সম্মেলনে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে৷ বারগাশ বললেন, ‘‘আমি পরিবেশকে একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে দেখতে ভালোবাসি, শুধু আবর্জনা কিংবা আবর্জনা ফেলার জায়গা বা আমাদের নিজেদের প্রগতির জন্য সম্পদ আহরণের স্থান হিসেবে নয়৷ সেই প্রগতি নিজেই আজ সংকটে, যা আমরা প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের ধরন থেকে দেখতে পাই৷’’
প্রকল্পে পাহাড় থেকে গ্রামের বাড়িগুলো অবধি জলের পাইপ বসানোর ব্যবস্থা হয়েছে, যা সুসানে পরিবারের কাজে লাগছে৷ এক বছর হলো কল খুললেই জল পড়ে৷
কুয়াশার ‘ফসল’
অথচ পরের দিনই আবার....কুয়াশা! শুধু গাছপালাতেই নয়....পানির ফোঁটা পাহাড়ের ওপর ফ্রেমে বাঁধা জালগুলোতেও লেগে থাকে৷ প্রতি বর্গমিটার জাল থেকে ২২ লিটার পানি৷ খুব খারাপ ‘ফসল’ নয়৷ নতুন গ্রিড থেকে কুয়াশার দিনে গ্রামের মানুষরা ৩৭,০০০ লিটার পানি পাবেন৷
মোহামেদ হামুয়ালির কাছে তার অর্থ: এখনও অনেকদিন কাজ পাওয়া যাবে৷ তিনি প্রথম পরীক্ষামূলক জালগুলো বসানোতেও সাহায্য করেছিলেন৷ কুয়াশার যে একটা ভালো দিক আছে, গ্রামবাসীদের সেটা বোঝাতে গোড়ায় তাঁকে বেগ পেতে হয়েছিল৷ সকলেরই সন্দেহ ছিল৷ মোহামেদ হামুয়ালি বললেন, ‘‘গোড়ায় আমি ভেবেছি, ও-তে কাজ হবে না৷ ভেবেছি, কুয়াশা থেকে পানি তৈরি করা কি সত্যিই সম্ভব? জন্মে কোনোদিন শুনিনি, কল্পনা পর্যন্ত করতে পারিনি৷’’
মোহামেদ জলকষ্টেই বড় হয়েছেন৷ অথচ তাঁর ভাইবোনেদের জন্যে কল থেকে জল পড়াটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াবে৷ কুয়াশাও আসবে আবার – তবে এবার হয়ত বুৎমেজগিদা পাহাড়ের অধিবাসীরা কুয়াশা দেখে শুধু ভয় পাবেন না, কিছুটা আনন্দও পাবেন৷
মাবেল গুন্ডলাখ/এসি