কার্বন বশে আনতে বহুমুখী উদ্যোগ
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২এমন ভবিষ্যৎ, যেখানে আপনার সাবান দূষিত বায়ু দিয়ে তৈরি৷ অথবা আপনার ভোদকাও নির্গত গ্যাস দিয়ে তৈরি৷ এনগেজমেন্টের আংটিও যদি এমন উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়! ঘটনা হলে, সেই দিন হয়তো আর বেশি দূরে নেই৷
প্যারিস জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে গোটা বিশ্বকে ২০২৫ সালের মধ্যে দশ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূর করতে হবে৷ ফলে আমাদের আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে৷
জার্মানি-ভিত্তিক কোভেস্ট্রো নামের কোম্পানি কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো দূষনকারী গ্যাসকে প্রায় যে কোনো বস্তুতে রূপান্তর করতে পারে৷ বিছানার তোশক, চিকিৎসা সরঞ্জাম, মোজা, জুতা, গাড়ির সিট, মোবাইল ফোনের কেস, ইনসুলেশন, মেঝে থেকে শুরু করে দীর্ঘ সেই তালিকা৷
শুনতে ভালো লাগলেও প্রশ্ন হলো, এভাবে কি কার্বনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো সম্ভব? রিসাইকেল করা কার্বন দেখতেই বা কেমন?
আসলে কিন্তু বহু দশক ধরেই ‘কার্বন ক্যাপচার’ প্রক্রিয়া চলে আসছে৷ ১৯৭০-এর দশকে তেল কোম্পানিগুলি নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারণ করে তৈলকূপে ঢুকিয়ে আরও বেশি পেট্রোলিয়াম উত্তোলন করতো৷ আমরা সেই দূষণ রূপান্তরিত করে মাটির নীচে জমাও রাখতে পারি৷
কিন্তু রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য কোনো পদার্থে রূপান্তর করলে কেমন হয়? সেই প্রযুক্তির নাম ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড ইউটিলাইজেশন’ বা সিসিইউ৷ বর্তমানে অন্যতম চর্চার বিষয় এটি৷ রিসাইকেল করা কার্বন দিয়ে তাহলে কী তৈরি করা যায়?
সুজান ফ্যান্সি অ্যামেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল সিওটু ইনিশিয়েটিভের প্রোগ্রাম ম্যানেজার৷ তিনি সিসিইউ নিয়ে খুবই উৎসাহী৷ সুজান বলেন, ‘‘জামাকাপড়ের দোকানে আজকাল বেশিরভাগ সিন্থেটিক কাপড়ের পোশাক পাওয়া যায়৷ সবই জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি দিয়ে তৈরি৷’’
যেমন এক তোশক৷ এমন ধরনের প্রায় সবকিছুই পলিইউরিথেন ফোম দিয়ে তৈরি৷ ক্রিস্টফ গ্যুর্টলার কোভেস্ট্রো কোম্পানিতে পণ্য সৃষ্টি করেন৷ ফোম বা ফেনা সম্পর্কে তার মতো জ্ঞান অন্য কারও নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে পলিইউরিথেন ফোমের বড় ব্লক রয়েছে, যার ওজন ১০ থেকে ২০ কিলো৷ আমরা কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে জীবাশ্ম উপকরণের আংশিক বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করি, যা এমন ম্যাট্রেস তৈরির কাজে লাগে৷’’
এই প্রক্রিয়ায় রিসাইকেল করা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ২০ শতাংশ পর্যন্ত জীবাশ্মভিত্তিক উৎসের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বছরে তিন কোটিরও বেশি তোশক ফেলে দেওয়া হয়৷ সে সব একত্র করলে মাউন্ট এভারেস্টের ৬৭৮ গুণ উচ্চতা ছুঁতে পারতো৷ ক্রিস্টফ বলেন, ‘‘সাংবাদিকেরা সব সময়ে প্রশ্ন করেন, শুধু এই প্রক্রিয়া দিয়ে আপনি পৃথিবী বাঁচাতে পারবেন কি? আমি বলি, একেবারে ঠিক৷ আর সেটা মোটেই উদ্দেশ্য নয়৷’’
তবে এমন সব পণ্য উৎপাদন করতে অনেক জ্বালানি ব্যবহৃত হয়৷ কার্বন-ডাই-অক্সাইড পলিমার ও জ্বালানিতে রূপান্তর করার প্রক্রিয়ায় আরও জ্বালানির প্রয়োজন৷ তবে শুধু গ্রিন এনার্জি থাকলেই এটা করা যায়৷
গ্যোর্গে ডেয়ারব্যার্গ কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে রিসাইকেল করা সিওটু পণ্য ও উপাদান তৈরির ক্ষেত্রে জ্বালানির সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে এটাই হলো সমস্যা৷ গ্রিন কেমিক্যাল ও গ্রিন স্টিল তৈরির জন্য আমাদের যথেষ্ট গ্রিন এনার্জি নেই৷’’
কার্বন নেগেটিভ মোজা কিনেও আমরা সম্ভবত আমাদের পৃথিবী বাঁচাতে পারবো না৷ যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও ফাইবারের মধ্যে থাকে, সেই সামান্য পরিমাণ সাশ্রয় করে বৈশ্বিক নির্গমনের ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়৷ সেটির পরিমাণ বছরে বড়জোর চার থেকে নয় কোটি মেট্রিক টন৷ অন্যদিকে আমরা বছরে প্রায় ৩,৩০০ কোটি টন কার্বন নির্গমন করি৷
বেইনা শু/এসবি
গত নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...