1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাঙ্খিত মুক্তি এখনো মেলেনি

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধারা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও কি সেই বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি? শুধু দেশের স্বাধীনতাই নয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতাও ছিল অন্যতম দাবি।

https://p.dw.com/p/3UuZs
ছবি: P.K.Niyogi

মুক্তিযুদ্ধে সময় ৯ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডর শ. ম. বাবর আলী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘দেশের স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। কিন্তু কাঙ্খিত মুক্তি এখনও মেলেনি। উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু বেড়েছে বৈষম্য। বঙ্গবন্ধুই এনেছিলেন সংসদীয় গণতন্ত্র, আবার তার হাত ধরেই ৭৪ সালে বাকশালের মধ্য দিয়ে সেটা হারিয়ে যায়। এরপর ৪৫ বছরেও সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে পাইনি। এখন যেটা আছে, এটা আরেক ধরনের শাসন। এখানে দিনের ভোট, রাতে হয়। মানুষের কোন বাকস্বাধীনতা নেই। সংবাদপত্রে স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। বিরোধী মতের মানুষের কথা বলার সুযোগ নেই। কেউ কিছুই বলতে পারেন না। তবে আমরা যদি না বলি, তাহলে কে বলবে? এই বাংলাদেশের জন্য তো আমরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করিনি।'‘

শ. ম. বাবর আলী

সোমবার রাজধানী ঢাকার পাশপাশি সারা দেশেও বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। আনন্দ-উৎসবে মেতেছে সারা দেশ। এরমধ্যে রয়েছে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, র‌্যালি, আলোচনা সভা, গণ সঙ্গীত পরিবেশনা ইত্যাদি। মহান বিজয় দিবসের ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে কিছুণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এসময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। তখন বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর বাঙালির কি সত্যিই মুক্তি মিলেছে? জানতে চাইলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কাঙ্খিত মুক্তি এখনো মেলেনি। বহুদুর। ১৯৪৭ সালে তো একবার আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। তারপরও কেন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার দরকার হল? কারণ আমাদের অন্যতম দাবি ছিল, অর্থনৈতিক মুক্তি, বাকস্বাধীনতার মুক্তি এবং চাকরি-বাকরির সুযোগ পাওয়া। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়েছি। অনেক উন্নতি হয়েছে। সেটা দৃশ্যমান উন্নতি। কিন্তু বাকস্বাধীনতা মেলেনি। পাকিস্তান আমলের মতো এখনো বহু যুবক বেকার। চাকরির ব্যবস্থা নেই। যে উন্নতির সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা থাকে না, সেই উন্নতি কোন উন্নতি নয়। এখন যত বেশি উন্নতি হচ্ছে, ততই বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে।‘'

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, দেশি-বিদেশি মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। এসময় তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের বংশধরদের সঙ্গে কোন আপস করা হবে না। আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজাকারদের তালিকা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপিকে হেয় করতেই এই তালিকা।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে মিশন-ভিশন নিয়ে আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম, সেই মিশন-ভিশন যে একেবারে বাস্তবায়ন হয়নি সেটা বলা যাবে না। আবার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে সেটাও বলা যাবে না। এটা চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেকদূর এগিয়েছে। ব্যাপক আকারে যে উন্নয়ন সেটা তো দেশের মানুষ দেখছেই। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। তবে হ্যাঁ, এই ৪৮ বছরে যতদূর এগুনোর কথা ছিল, সেটা হয়ত হয়নি। আরো অনেক বেশি যাওয়া উচিৎ ছিল। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, স্বাধীনতা পক্ষের মানুষরা দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে কাঙ্খিত পথ আমরা অতিক্রম করতে পারিনি।'‘