কলকাতায় বায়ু দূষণের মাত্রা ভয়াবহ
শীত পড়তেই দূষণের চাদরে ডুবেছে কলকাতা। দিল্লির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে দূষণের মাত্রা। কয়েকবছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না।
দিল্লির রাস্তায় কলকাতা
দিল্লির দূষণ বেশ কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্রীয় সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁডিয়েছে। বাকি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির দূষণ পরিস্থিতি কেমন, কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিবদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পেয়েছে নবান্নও।
বাজির হাত ধরে দূষণ
অনেকের মতে কালীপুজোর হাত ধরে এ শহরে বায়ু দূষণ মাথা চাড়া দেয়। কালীপুজোর বেশ কিছু দিন আগে থেকে লুকিয়ে-চুরিয়ে বে-আইনি বাজি বিক্রি হয়েই থাকে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দীপাবলিতে বাজির দাপট দেখা গিয়েছে মহানগর জুড়ে। সরকার যে সবুজ বাজিকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদেরা। ওই বাজি থেকেও দূষণ ছড়িয়েছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পরিসংখ্যান
দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে কলকাতা এবং লাগোয়া শহর হাওড়ায় বায়ু দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক উপরে। বাতাসে এই মাত্রায় দূষণ থাকার অর্থ শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকছে বিষ। একিউআই-এর মাত্রা এখন অতি খারাপের পর্যায়ে।
দূষণে দ্বিতীয় স্থানে
অ্যামেরিকার এক গবেষণা সংস্থার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাতাসে ভাসমান অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বের শহরগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা।
কমছে দৃশ্যমানতা
দিল্লিতে বাতাসে ভাসমান অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার কারণে ঘন ধোঁয়াশা দেখা যায়। কলকাতায় বিগত বছরগুলোয় ধোঁয়াশার দাপট তেমন না দেখা গেলেও এই বছরে শীতের শুরু থেকেই দৃশ্যমানতা অনেকটা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলত, কলকাতা শহরের বাতাসের মান কতটা নিরাপদ সেই প্রশ্ন উঠছে।
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
দূষণ নিয়নত্রণ পর্যদের ওয়েবসাইটে কলকাতা শহরের সাতটি জায়গার বাতাসের গুণগত মানের সূচক দেখতে পাওয়া যায়। তথ্য বলছে, শীতের শুরু থেকেই ওই সাতটি এলাকায় বাতাসের গুণগত মানের সূচক অত্যন্ত খারাপ। কলকাতার যে সাতটি এলাকার দূষণ পরিমাপ করে সিপিসিবি, তার মধ্যে রয়েছে, বালিগঞ্জ, বিধাননগর, ফোর্ট উইলিয়াম, যাদবপুর, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
দূষণের মাত্রা
মঙ্গলবার দুপুর ১১টায় সাতটি এলাকার মধ্যে পাঁচটি এলাকার বাতাসের গুণগত মানের সূচক ২৫০-র মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ২২৮, ভিক্টোরিয়া ২৮৩, যাদবপুর ২৪১, বিধাননগর ২৯৪, বালিগঞ্জ ২৯২, ফোর্ট উইলিয়াম ২৬৮ এবং রবীন্দ্র সরোবর ২৭১।
দূষণ বাড়ার কারণ
পরিবেশবিদদের মতে, শহরের মধ্যে রাস্তার অনুপাতে যানবাহনের সংখ্যা, যানজটের বহর, শিল্পক্ষেত্রে শিথিলতর দূষণবিধি— প্রতিটি বিষয়ই দিন দিন দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলছে।
মাস্ক পরে কাজ
পরিবেশবিদ দীপায়ন দে-র মতে, নগরাঞ্চলের দূষণ প্রতিরোধে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি প্রয়োজন। তাতে নতুন নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মবিধি যেমন থাকবে, তেমনই প্রয়োজন গণপরিবহণ নীতিরও। জোর দিতে হবে পরিবেশবান্ধব, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের উপর। সাইকেলের জন্য পৃথক করিডোরের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অনেকেই মাস্ক পরে বেরোচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশ জানালেন, সারাদিন দূষণের মধ্যেই কাটাতে হয়, মাস্ক ছাড়া উপায় নেই।
পুরসভার অবস্থান
কলকাতার বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কলকাতা পুরসভা। শনিবার কলকাতা পুরসভায় আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদ বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেশি। যেমন, চিংড়িঘাটা বা ক্যাথি়ড্রাল রোড। এই সব জায়গার এয়ার কোয়ালিটি বেশ খারাপ। সেখানে দূষণ কমাতে মিস্ট ক্যানন চালানো হবে। সঙ্গে চালানো হবে স্প্রিঙ্কলার।’'