করোনায় রোজা, করণীয় কী?
মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান এসেছে৷ কিন্তু করোনা মহামারি এবারের রমজানকে দিয়েছে অন্য এক রূপ৷ নিজে ও প্রিয়জনকে নিরাপদে রেখে কিভাবে পালন করা যাবে এ মাস?
করোনাকালে রমজান, কিছু পরামর্শ
রমজান মাসকে বিশ্বজুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দেখে থাকেন দানশীলতা, সংযম, আত্মশুদ্ধি ও প্রার্থনার মাস হিসেবে৷ একসঙ্গে নামাজ পড়া ও সারাদিনের রোজা শেষে ইফতার ভাগাভাগি করে নেয়াকেও দেয়া হয় গুরুত্ব৷ কিন্তু চলমান করোনা মহামারি এবারের রমজানকে সবার সামনে হাজির করেছে একটু অন্যভাবে৷ সব দেশের জন্যই এ বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
রোজা রাখতে ঝুঁকি নেই
রোজা রাখলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, এমন কোনো তথ্য এখনও কোনো গবেষণায় পাওয়া যায়নি৷ ফলে স্বাভাবিক সময়ের মতোই রোজা রাখতে সুস্থ মানুষের কোনো বাধা নেই৷ কিন্তু ধর্মীয় বিধি অনুযায়ীও নানা রোগের ক্ষেত্রে রোজা রাখায় ছাড় দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ সেক্ষেত্রে চিকিৎসক ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে৷
পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি
কোভিড-১৯ এর কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি৷ ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরই এখন পর্যন্ত ভরসা৷ তাই সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার ও সেহরিতে নানা ধরনের সুষম খাবারের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া গরমের ফলে পানিশূন্যতা দূর করতে ইফতার ও সেহরির মধ্যে পর্যাপ্ত পানিও পান করা খুব জরুরি৷
শারীরিক কার্যক্রমে জোর
অন্যসময় রোজা রেখেও কাজকর্ম করার ফলে শরীরে রক্ত চলাচল ও অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকতো৷ কিন্তু করোনার কারণে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় কমেছে শারীরিক কার্যক্রমও৷ এজন্য বিজ্ঞানীরা জোর দিচ্ছেন বাসার মধ্য়েই নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করার জন্য৷ তা না হলে রোজায় শরীরে পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব৷
শুভেচ্ছা ও সম্ভাষণ
কারো সঙ্গে দেখা হলে হাত মেলানোর রীতি থাকলেও, এবার শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সম্ভাষণ জানানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে৷ অনেক দেশে ধর্মীয় আচার ও সংস্কৃতি অনুযায়ী সালাম দেয়া, মাথা নাড়া বা বুকে হাত দিয়ে সম্ভাষণ জানানো হয়৷ এ বছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এমন সম্ভাষণকেই স্বাগত জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরাও৷
ঝুঁকিতে থাকাদের বিশেষ ব্যবস্থা
নভেল করোনা ভাইরাস সব বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করলেও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা৷ এছাড়া যারা ডায়বেটিস, রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের রোগ, শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন, তারাও রয়েছেন কোভিড-১৯ এ সবচেয়ে ঝুঁকিতে৷ ফলে রমজানের সময়টাতে এই ব্যক্তিদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
সামাজিক দূরত্ব
বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও তারাবিসহ অন্যান্য নামাজ মসজিদের বদলে বাসায় পড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিনসহ যাদের মসজিদে যেতেই হবে, তাদেরও নিজেদের মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ এছাড়া ইফতার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার জন্য যারা দোকানে বা বাজারে যাবেন, তাদেরও ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
প্রতিবার নামাজের আগে ওজুর ফলে এমনিতেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হয়৷ কিন্তু এবার একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলছেন চিকিৎসকেরা৷ শুধু পানির বদলে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সাবান ব্যবহারের৷ মসজিদেও পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা সরঞ্জাম, টিস্যু, ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ পাশাপাশি প্রতিবার নামাজের আগে-পরে কার্পেটসহ মসজিদ ভবনের অন্যান্য ব্যবহার্য বস্তু পরিষ্কার করারও আহ্বান জানানো হচ্ছে৷
যাকাত ও সদকা
রমজান মাসে মুসলিমদের দানশীলতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়৷ তবে যাকাত বা সদকা দেয়ার সময়ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ যাতে একসঙ্গে বেশি মানুষ জড়ো না হন, সেজন্য এলাকার সবাই মিলে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শৃঙ্খলাবদ্ধ উপায়ে পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
মানসিক স্বাস্থ্য
লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি মানতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য পড়ছে হুমকির মুখে৷ রমজানে ধর্মপ্রাণ মানুষ মসজিদে যেতে ও সামাজিক যোগাযোগ বেশি পছন্দ করেন৷ কিন্তু এ বছর তাদেরকে থাকতে হচ্ছে কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও যে আত্মশুদ্ধি, প্রার্থনা, দান, সেবা, সবই করা সম্ভব তা প্রচার করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারে পাশাপাশি ধর্মীয় নেতাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷