করোনায় বিবর্ণ হোলি
৯ মার্চ ২০২০দিল্লির হোলিকে বিবর্ণ করে দিতে চলেছে করোনা আতঙ্ক। মঙ্গলবার হোলি। আর উত্তর ভারতের হোলি মানে রাস্তায় নেমে সকলকে নিয়ে রঙের মজায় ডুকে থাকা। তার সঙ্গে থাকে ঢোল, গান, রঙ, পিচকিরি। আবিরও তো কত রঙের। লাল, গোলাপি, সবুজ, গেরুয়া, নীল। এ বারও সেই নানা রঙের আবির, পিচকিরি, হোলির টুপি, রঙ, মজাদার সব সাজ নিয়ে প্রতিটি জায়গায় পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কিন্তু ক্রেতা কই? অন্যান্য বছরে এই সময় থিকথিকে ভিড় থাকে। কিন্তু এ বার না আছে বিক্রিবাটা। না আছে ভিড়। করোনা আতঙ্ক হোলির রঙ ম্লান করে দিয়েছে। লোকে এখন ভিড় দেখলে সেখানে যাচ্ছেন না। হোলির দিনও পথে নামতে ভয় পাচ্ছেন লোকে। হোলির ২৪ ঘণ্টা আগে দিল্লিতে শুধুই করোনা আতঙ্ক। সেই আতঙ্কে লোকে রাস্তায় নেমে হোলি খেলা ছেড়ে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে পারেন।
চিত্তরঞ্জন পার্কের এক নম্বর মার্কেটে হোলির প্রচুর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দীপু ঘোষ। কিন্তু হোলির ২৪ ঘণ্টা আগে লোক নেই। ডয়চে ভেলেকে দুঃখের সঙ্গে দীপুর স্বীকারোক্তি, ''অন্য বছর এই সময় ৯৫ শতাংশ জিনিস বিক্রি হয়ে যায়। এ বার মেরেকেটে হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। যাঁরা আসছেন, তাঁরাও এক প্যাকেট করে আবির নিয়ে চলে যাচ্ছেন।'' এরকমই এক ক্রেতা সলিল ডয়চে ভেলেকে বললেন, ''শুধু বাড়ির লোকজনের সঙ্গে একটু খেলব। বাইরে গিয়ে খেলা এ বছর আর নয়। কে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে, কী করে জানব?'' দীপু ঘোষেদের বিক্রি হবে কী করে?
দীপুর তো তাও কিছুটা বিক্রি হয়েছে। রীতিমতো হা হুতাশ করছেন হাউজ খাসের ই ব্লক মার্কেটে হোলির রঙ, পিচকিরি, আবির বিক্রেতা ইমরান। প্রতি বছরের মতো এ বারও প্রচুর জিনিস নিয়ে বসেছেন। ডয়চে ভেলের কছে রীতিমতো হতাশ ইমরান বললেন, ''সত্তর হাজার টাকার জিনিস কিনে এনেছিলাম। শনিবার থেকে বসছি। মাত্র তিন হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে।'' তা হলে এত জিনিস কী হবে? ফিরিয়ে নেবে? ইমরানের জবাব, ''বিক্রি না হলে রেখে দিতে হবে। আমি ঝুঁকি নিয়ে কিনেছি। পরের বছর তো অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে যাবে। যা থাকবে, তা বিক্রি করা যাবে। সে তো এক বছর পরের কথা। এ বার কী হবে কে জানে।''
আসলে রাজধানী এখন করোনা আতঙ্কে ভুগছে। সোমবারও দিল্লিতে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মাস্ক ও স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও তার জন্য তিনগুণ দাম দিতে হচ্ছে। স্কুলে প্রাথমিক শ্রেণীতে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মহল্লায় অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চিত্তরঞ্জন ভবনে আগামী ২৫ থেকে ২৯ মার্চ বাংলা বইমেলা হওয়ার কথা ছিল। করোনা আতঙ্কের কথা মাথায় রেখে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানও বাতিল হচ্ছে। দ্বারকায় উপকারি সোসাইটিতে আবাসিকরা প্রতিবছর সকলে মিলে হোলি খেলে মধ্যাহ্নভোজ করতেন। এ বার সব বন্ধ। চিত্তরঞ্জন পার্কের অনেক ব্লকেই একইরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী করোনা ভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে হোলি মিলন অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তারপর অমিত শাহও একই সিদ্ধান্ত নেন। বিজেপির অধিকাংশ মন্ত্রী একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নিয়মিতভাবে বলে যাচ্ছে, কেউ ভিড়ে যাবেন না। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। ফলে হোলি খেলা নিয়ে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। অনেক চিকিৎসকই বলছেন, করোনা ভাইরাস যাতে আক্রমণ করতে না পারে তার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সেগুলি নিয়ে হোলি খেললে কোনও অসুবিধা নেই। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''হোলি অবশ্যই খেলবেন। তাতে মন আনন্দে থাকে। সেটাও খুব জরুরি। তবে নিয়মিত হাত ধুতে হবে, ভিটামিন সি বেশি করে খেতে হবে। আরও কিছু স্বস্থ্যবিধি পালন করতে হবে।''
তবে চিকিৎসকরা যাই বলুন না কেন, আতঙ্ক গ্রাস করেছে লোকেদের। ফলে মঙ্গলবার হোলির জৌলুস আশা করা বৃথা। হোলি খেলা হবে ঠিকই। কিন্তু তাতে সম্ভবত সেই উন্মাদনা, মজা, হইচই থাকবে না। করোনার আতঙ্কের কাছে হেরে যেতে পারে হোলি।