করোনায় কৃষির বদল
শিল্প থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ যত খাত সবই বদলে যাচ্ছে এক মহামারির প্রকোপে৷ বাদ যাচ্ছে না কৃষিও৷ এতদিন ধরে যে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে৷ কৃষির বড় ধরনের বদল ঘটার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে৷
প্রাণিজ শিল্পের সংকট
কোভিড ১৯ এর উৎপত্তি কিভাবে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু এর আগে সোয়াইন ফ্লু আর বার্ড ফ্লুতে শুকর আর মুরগি খামারে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমেছিল৷ বৃহদাকারে প্রাণীজ মাংস উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে মহামরির ঝুঁকি বাড়ার একটি সম্পর্কের সন্দেহ অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে৷ এমন অবস্থায় এই ধরনের শিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবনারও সময় এসেছে৷
কসাইখানার পরিবেশে প্রশ্ন
মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের পরিবেশ আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই মহামারিতে৷ জার্মানিতে এমন বেশ কয়েকটি কারখানা থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে৷ এমনকি দুইটি শহরকে এ কারণে নতুন করে লকডাউনের আওতায় আনতে হয়েছে৷ ট্যোনিস গ্রুপ এর একটি কসাইখানার ১৫৫০ জন আক্রান্ত হওয়ায় সব কর্মীদেরই কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে৷ এই শিল্পটির জন্য নীতিমালা কঠোর করার প্রস্তাবও উঠছে৷
বন্যপ্রাণীর খামারে কড়াকড়ি
বিশেষজ্ঞদের ধারণা চীনের উহানের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটেছিল৷ এরিমধ্যে চীন বন্যপ্রাণী বেচাকেনায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে, বন্যপ্রাণীর প্রায় ২০ হাজার খামার বন্ধ করে দিয়েছে৷ এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোও৷ বন্যপ্রাণীর বদলে তাদেরকে চাষাবাদ, মুরগী বা শুকর পালনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে৷
কৃষি বদলের ডাক
চলতি মহামারিতে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷ বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন শিল্পের বদলে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনে জোর দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷ শ্রমিক স্বল্পতাসহ নানা কারণে তৈরি হওয়া নতুন সংকটটির সঙ্গে কৃষকরা কিভাবে খাপ খাওয়াবেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা৷
নগর কৃষির সম্ভাবনা
উন্নত দেশগুলোতে মানুষ বড় একটি সময় ঘরে থাকার কারণে সময় কাটানোর জন্য কৃষিতে ঝুঁকেছেন৷ ভবিষ্যতের জন্য যা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বলা হচ্ছে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষই শহরে বসবাস করবেন৷ আর তখন নগর কৃষির গুরুত্ব আরো বাড়বে৷ এর ফলে প্রথাগত কৃষির উপর চাপ যেমন কমবে, তেমনি খাদ্য পরিবহনের পেছনে জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহারও হ্রাস পাবে৷
দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা এক হাজার কোটিতে পৌঁছাতে পারে৷ এজন্য খাদ্যের উৎপাদনও কয়েক গুণ বাড়াতে হবে, চাপ পড়বে ভূমির উপরে৷ এর একটি সমাধান হতে পারে নগর কৃষি৷ মানুষের বাঁচার জন্য খাদ্য যেমন দরকার, তেমনি দরকার প্রকৃতিও৷ সামনের দিনে অবশিষ্ট প্রকৃতি কিভাবে রক্ষা করা যাবে তা নিয়ে ভাবার সময়ও চলে এসেছে৷
মাংসের বদলে নিরামিষ
মাংসের বাজার ঘিরে স্বাস্থ্য ঝুঁকির উদ্বেগ বাড়ায় চীনে এখন উদ্ভিজ্জ পণ্যের চাহিদা বাড়ছে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলোতেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে৷ সামনের দিনে ভোক্তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনটি অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা
কোভিড-১৯ এর মহামারি উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্যনিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলছে৷ জাতিসংঘও এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে৷ জরুরি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে জমি সুরক্ষার উপরও জোর দিচ্ছে তারা৷ পাশাপাশি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা এবং ঝুঁকিতে থাকা ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য সহায়তার সুপারিশ করছেন বিশেষজ্ঞরা৷