করোনায় কাজ হারাচ্ছেন সাংবাদিকরা
২২ জুলাই ২০২০এর বাইরে চাকরি আছে বেতন নেই, বেতন কমিয়ে দেয়াসহ নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন তারা৷ এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তো আছেই৷ করোনায় বাংলাদেশে সাংবাদিকদের মৃত্যু বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বলে সাংবাদিকদের একটি সংগঠন দাবি করেছে৷
করোনার শুরুতে সংবাদমাধ্যম কর্মীরা নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়লেও ঈদের পরে দেশের প্রভাবশালী দুটি পত্রিকা ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করলে সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ কারণ, ওই দুটি প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই করলে অনেক সংবাদমাধ্যমই তাদের পথে হাঁটবে বলে ধারণা করা হয়৷ বাস্তবে হচ্ছেও তাই৷
এরই মধ্যে কয়েকটি পত্রিকা আবার নতুন কৌশল শুরু করেছে৷ তারা সাংবাদিকদের ছাঁটাই করে কম বেতনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শুরু করেছে৷ ওয়েজ বোর্ড থেকে বের হয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম৷ কেউ কেউ অভিজ্ঞ সংবাদ কর্মীদের বাদ দিয়ে কম বেতনে নতুন কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে৷ তথ্য মন্ত্রণালয় এই করোনায় ছাঁটাই না করার আহ্বান জানালেও তাতে কাজ হচ্ছে না৷
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ছয়-সাতটি পত্রিকা, টিভি ও অনলাইন ছাড়া আর সব সংবাদমাধ্যমেই সাংবাদিকরা কোনো না কোনো ধরনের সংকটে পড়েছেন৷ মূল ধারার কমপক্ষে ৬টি পত্রিকা তাদের প্রিন্ট এডিশন বন্ধ করে দিয়েছে৷ তার মধ্যে দুটি আবার প্রিন্ট শুরু করেছে৷ দুটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে৷ সাতটি টেলিভিশনে ছাঁটাই হয়েছে৷ একটি টেলিভিশন সংবাদ বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে৷
গণমাধ্যম কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ ‘আমাদের গণমাধ্যম আমাদের অধিকার-এর হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত চার হাজারের মতো সংবাদ মাধ্যমকর্মী চাকরি হারানোসহ নানা ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন৷ এর মধ্যে সরাসরি চাকরি হারানো বা ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ছয়শ’ সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমকর্মী৷ তাদের হিসেবে এ পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত সাংবাদিক ৬৪৪ জন৷ ঢাকায় ৪৫৪ এবং ঢাকার বাইরে ১৯০ জন৷ করোনা এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৫ জন সাংবাদিক৷ তাদের মধ্যে ১৩ জন ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে ১২ জন৷
সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক ও নিউ এজ পত্রিকার সাংবাদিক আহম্মদ ফয়েজ বলেন, ‘‘করোনায় পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক মারা গেছেন পেরুতে৷ এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান৷ এই মানসিক চাপের মধ্যেও বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমে চাকরিচ্যুতি, বেতন না দেয়া, বেতন কমিয়ে দেয়া এবং ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ঈদে উৎসব ভাতাও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়নি বা কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ এই প্রবণতা অব্যহত আছে৷’’
করোনার আগেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা সংকটে ছিলেন৷ গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে চাকরি হারান ৪৫০ জন টিভি সংবাদ কর্মী৷ তখন ১০টি টিভি চ্যানেলে আয় না থাকার অজুহাতে ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু করোনায় এই সংকট আরো তীব্র হয়েছে৷
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)-র সদস্য সচিব এবং একাত্তর টেলিভিশনের হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ বলেন, ‘‘ছয়-সাতটি বেসরকারি টেলিভিশন এখন অর্ধেক বেতন দিচ্ছে৷ বেশ কয়েকটি টেলিভিশনে দুই মাসের বেতন বকেয়া হয়েছে৷ এরই মধ্যে করোনা শুরুর সময় এবং করোনার মধ্যে ৪৫ জনের মতো টিভি সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷ আরো অনেক টিভিতে এখন চাকরি যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে৷ আর যেসব প্রতিষ্ঠানে বছর ধরে বেতন হয় না সেখানকার কর্মীরা তো বিনা বেতনেই কাজ করছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এটাও ঠিক যে, করোনায় টেলিভিশনগুলোর আয় কমে গেছে, বিজ্ঞাপনের টাকা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না৷’’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাছে করোনায় কতজন সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন তার সঠিক তথ্য নেই৷ তবে তারা লক্ষ্য করছেন, চাকারিচ্যুতির ঘটনা বড় আকারেই ঘটছে৷ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘‘আমরা এই চাকরিচ্যুতি ও ছাঁটাইয়ের বিরোধিতা করে নানা কর্মসূচি দিচ্ছি৷ সরকারের সাথেও দফায় দফায় বৈঠক করছি৷’’
এই সময়ে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন শাকিল আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের কাজের কারণেই করোনার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হয়েছে৷ তারা ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন৷ তাই শুধু করোনার চিকিৎসা খাতেই ব্যয় করলে হবে না, সচেতনতার জন্যও ব্যয় করতে হবে৷ আর সরকার যদি এই কাজে সংবাদমাধ্যমকে বরাদ্দ দেয়, তাহলে এই করোনাকালে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে৷’’