টিকা তৈরিতে বার্লিনের কোম্পানির অবদান
৩০ জুন ২০২০করোনা সংকটের সময় বার্লিন শহর থমকে গেলেও একটি গবেষণাগারের কর্মীদের বাসায় বসে ‘হোম অফিস’ করার উপায় ছিল না৷ বরং তাঁদের হাতে এত কাজ, যে দুটি শিফটে সেগুলি সারতে হয়েছে৷ জেপিটি পেপটাইড কোম্পানির রসায়নবিদদের কাজকে পুলিশ, অ্যামবুলেন্স বা দমকল কর্মীদের মতো মর্যাদা দেওয়া হয়েছে৷ কারণ তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের কাজে অবদান রাখছেন৷ কোম্পানির প্রধান হলগার ভেনশু বলেন, ‘‘আমরা এখানে পেপটাইড-ভিত্তিক সরঞ্জাম উৎপাদন করি৷ এর মাধ্যমে টিকা-ডেভেলপাররা রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিমাপ করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নজর রাখতে পারেন৷''
পেপটাইড আসলে প্রোটিনের খণ্ড৷ এই কোম্পানিতে লাখ লাখ পেপটাইড তৈরি হয় এবং করোনা ভাইরাসের উপরিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের গঠন অনুযায়ী সাজানো হয়৷
জানুয়ারি মাস থেকে এই লক্ষ্যে কাজ চলছে৷ এর মধ্যে চূড়ান্ত পণ্য বাজারে এসে গেছে৷ টিকা মানুষের শরীরে সত্যি কাজ করছে কিনা, সেটির মাধ্যমে তা জানতে সুবিধা হবে৷
করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য চাপের কারণে ভিন্ন পথেরও সন্ধান চলছে৷ যেমন আরএনএ-ভিত্তিক টিকা৷ এর আওতায় দূত হিসেবে এক এমআরএনএ ইঞ্জেকশন দিতে হবে, যা আসলে ভাইরাসের একটি অংশের ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিচিত্র৷ মানুষের শরীরে কোষ সেই ব্লুপ্রিন্ট কার্যকর করে ভাইরাসের একটি অংশ তৈরি করতে পারে৷
শরীরে নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের এই সব অংশকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ এরপর আসল ভাইরাস শরীরের উপর হামলা চালালে শরীর আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে এবং অ্যান্টবডি কাজে লাগিয়ে হামলার মোরাবিলা করবে৷
সেটা আদৌ সম্ভব কিনা, জেপিটি কোম্পানির সরঞ্জাম দিয়ে তা পরীক্ষা করা যায়৷ জিকা ও এবোলা ভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে সেই প্রযুক্তি সফলভাবে কাজে লাগানো হয়েছে৷
বার্লিনের এই কোম্পানি পরোক্ষভাবে টিকা তৈরির উদ্যোগে অংশ নিচ্ছে৷ কারণ সেটি বিশ্বখ্যাত বায়োনিটেক কোম্পানির অংশ৷ করোনার টিকা তৈরির ক্ষেত্রে জার্মানির এই কোম্পানির প্রতি গোটা বিশ্বের নজর রয়েছে৷ জেপিটি কোম্পানির প্রধান ভেনশু বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, এভাবে বলা ঠিক নয়৷ এই মুহূর্তে বাজারে কোনো এক টিকা আনা সবচেয়ে জরুরি৷ কে সেই টিকা আবিষ্কার করলো, তাতে কিছুই এসে যায় না৷ আমরা এ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাই৷ হয়তো আমরাই প্রথম সাফল্য পাবো৷ কিন্তু এই মুহূর্তে সাহায্য করার নৈতিক তাড়নাই কাজ করছে৷''
কর্মীদের মনেও একই রকম অনুভূতির পরিচয় পাওয়া গেল৷ একজন বলেন, মানুষকে সুস্থ করা, এমনকি রোগ নিরাময় করার ক্ষেত্রে অবদান রাখাই প্রেরণা জোগায়৷ আরেক কর্মীর মতে, একটা মিশ্র অনুভূতি কাজ করে৷ একদিকে মনে ভয় রয়েছে, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সম্ভাবনা৷
শুনে উৎসাহ জাগে বৈকি৷ হয়তো নতুন এই পরীক্ষা দ্রুত প্রয়োগ করা হবে৷ এমআরএনএ-ভিত্তিক প্রতিষেধকের কার্যকারিতার প্রমাণ অবশ্যই দ্রুত পাওয়া যাবে৷