করোনাঃ দিল্লি সামলাতে মাঠে অমিত
১৫ জুন ২০২০প্রতিদিন পরীক্ষা হচ্ছে সাত হাজারের মতো। তার মধ্যে গড়ে দুই হাজার ২২৪ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে দিল্লিতে যত পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে প্রায় এত তৃতীয়াংশ লোকের করোনা ধরা পড়ছে। তাও সুপ্রিম কোর্টের ধমকের ফলে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে মাত্র পাঁচ হাজার পরীক্ষা হচ্ছিল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে বৈঠকের পর ঠিক হয়েছে, দ্রুত পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হবে। চলতি সপ্তাহে তা ১০ হাজারে নিয়ে যাওয়া হবে। বস্তুত, দিল্লির করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য অমিত শাহকে বিশেষ দায়িত্ব নিতে হয়েছে।
সোমবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করছেন অমিত শাহ। করোনা পরিস্থিতি কতটা গুরুতর তা এর থেকেই স্পষ্ট। কারণ, করোনার পর থেকে কখনও সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়নি। দিল্লির জন্য এটাও করতে হচ্ছে অমিত শাহকে। কারণ, দিল্লিতে ব্যর্থতার দায় শুধু কেজরিওয়াল নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের ওপরেও বর্তায়। কারণ, এখানে রাজ্য সরকারকে অধিকাংশ বিষয়েই কেন্দ্রের সঙ্গে পরামর্শ করে চলতে হয়।
দিল্লিতে সরকারি হাসপাতালের অবস্থা শোচনীয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, করোনায় মৃত ব্যক্তিকে মেঝেতে রেখেই আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। অভিযোগ, বেড রয়েছে, কিন্তু হাসপাতাল রোগী ভর্তি করছে না। প্রচুর চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী করোনায় আক্রান্ত। করোনা পরীক্ষার ল্যাবের কর্মীরা আক্রান্ত। দিল্লির লাগোয়া ফরিদাবাদে টেস্ট ল্যাবের ৬০ শতাংশ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব। রাজ্য সরকারি হাসপাতালের হাল শোচনীয়। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ এতটাই বেশি যে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। উচ্চবিত্ত ছাড়া সেখানে চিকিৎসা করানোর কথা কেউ ভাবতে পারেন না। ফলে করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক।
এই অবস্থায় অমিত শাহ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু রেলের কোচ দেবেন। সেগুলিকে অস্থায়ীভাবে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে। সেখান থেকে আট হাজার বেড পাওয়া যাবে। রাজ্য সরকার ব্যাঙ্কোয়েট হল, হোটেলকে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে চায়। সেখান থেকে ২০ হাজার বেড পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেক হোটেল মালিকেরই এতে আপত্তি আছে।
দিল্লির ছোট নার্সিং হোম বা হাসপাতালগুলিকেও করোনার জন্য নিতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বিরোধিতার মুখে পড়ে তা বাতিল করতে হয়েছে। কারণ, ছোট নার্সিং হোমে আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটার নেই, করোনা চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। পরিস্থিতির চাপে দিল্লি সরকারকেই কিছুটা দিশেহারা লাগছে।
লোকের রুটি-রুজি বাঁচাতে লকডাউনের কড়াকড়ি শিথিল করতেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। রাজ্য সরকারের হিসাব, এই ভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ৩১ জুলাই তা গিয়ে দাঁড়াবে সাড়ে পাঁচ লাখে। এখন দিল্লিতে করোনা রোগীার সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।
দিল্লির সরকারি অফিস খুলে যাওয়ার পর সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও প্রচুর বেড়েছে। রেলভবন, শাত্রী ভবন, উদ্যোগ ভবন, নির্মান ভবন, সিজিও কমপ্লেক্স, শ্রমশক্তি ভবনের মতো অনেক অফিসেই করোনায় নিয়মিত সরকারি কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। মাঝে মাঝে ভবনগুলি বা তার একটা অংশ এক-দুই দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানাচ্ছে, জনা তিনেক মন্ত্রী স্বেচ্ছায় কোয়ারান্টিনে আছেন। সচিব থেকে শুরু করে ডেপুটি সেক্রেটারি পর্যন্ত অফিসারদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এর ফলে লোকের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। দোকান, বাজার, শপিং মল সবই খুলেছে। কিন্তু সেখানে লোক কম। সরোজিনী নগর দিল্লির জনপ্রিয় পোশাকের বাজারের মধ্যে একটি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজার খোলার পর আগের তুলনায় মাত্র দুই শতাংশ লোক আসছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ আসছেন না। বরং লোকে অনলাইন ডেলিভারিই পছন্দ করছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১ হাজার ৫০২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে আক্রান্ত হলেন ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪২৪ জন। মারা গিয়েছেন নয় হাজার ৫০২ জন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)