1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায়

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ অক্টোবর ২০২১

করোনা মহামারির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার শিকার৷ আর তুলনামূলকভাবে বেশি মানসিক সমস্যায় আছেন নারী শিক্ষার্থীরা৷

https://p.dw.com/p/41UZE
Bangladesch | Wiedereröffnung der Universität von Dhaka
ছবি: Mortuza Rashed/DW

এমন তথ্যই দিচ্ছে বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত এক গবেষণা৷ গবেষণায় করোনার সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণের কথাও বেরিয়ে এসেছে৷ তার মধ্যে রয়েছে হতাশা, নিজেকে তুচ্ছ মনে করা কিংবা মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা ইত্যাদি৷

এদিকে দেশের বিভিন্ন বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেও এমন তথ্যই পাওয়া গেছে৷

ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র শিক্ষার্থী আনিকা আনা৷ করোনা মহামারি শুরুর পর যখন অনলাইন ক্লাস শুরু হয় তখন তিনি বেশ বিপাকে পড়ে যান৷

এর কারণ হিসেবে তিনি ম্পিউটারে নিজের টাইপিং-এর দক্ষতা তুলনামূলক কম থাকা এবং অনলাইন ক্লাসে অনভ্যস্ততার কথা জানান৷ আর অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত হতে সময় লাগার কারণে প্রায়ই হীনমন্যতায় ভুগতেন বলেও জানান তিনি৷ 

এসব কিছু মিলিয়ে মারাত্মক চাপে পড়েন আনিকা৷ প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ফেল এবং আরেকটি বিষয়ে বেশ খারাপ ফল আসে তার৷

ডয়চে ভেলেকে আনিকা আনা বলেন, ‘‘ওই বিষয়গুলো রিটেক দেয়া (পূনরায় পরীক্ষা দেওয়া) বেশ খরচের ব্যাপার ছিল৷ এমনিতেই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে খরচ বেশি৷ তার ওপর আবার রিটেকের খরচ৷ পরিবারকে বুঝাতে আমার বেশ কষ্ট হয়েছে৷ আর এটা আমাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ফেলে দেয়৷ অনলাইনে অভ্যস্ত হতে আমার অনেক সময় লাগে৷ তাই আমি হীনমন্যতায় ভুগতাম৷’’

‘আমি হীনমন্যতায় ভুগতাম’

তিনি আরো বলেন, ‘‘করোনার শুরুতে এবং লকডাউনের দিনগুলোতে বাসায় বসে থাকতো হতো৷ তাই ফেসবুকে চ্যাট করে বা মোবাইলে লুডু খেলে সময় কাটাতাম৷ কিন্তু বেশিদিন সেটা আমরা ভালো লাগেনি৷ অনেকটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি৷’’

তবে আনিকা তার এই অবসাদ নিজেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন৷ করোনার সময়ে তিনি অনলাইনে ওয়েস্টার্ন পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন৷ অনেকের সাড়া পান৷ এখন তার ব্যবসাটি মোটামুটি ভালোই চলছে বলে জানান তিনি৷ সেই সাথে পড়াশুনা তো চলছেই৷

খুলনা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির (কুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র মাহমুদ সিদ্দিক৷ করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে তিনি তার ঢাকার বাসায় ফিরে আসেন৷ আসার সময় তিনি তার বই ও কম্পিউটার নিয়ে আসতে পারেননি৷ ঢাকায় আসার পর তিনি বাসায় বসে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন৷ বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি৷ যা তাকে হতাশাগ্রস্ত করে৷ 

এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তা শুরু হতে দেরি হয়৷ এর ফলে তার হতাশা আরো বেড়ে যায়৷

তিনি বলেন, ‘‘এরপর আমি মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ি৷ রাতে ঘুম হতো না, জেগে থাকতাম৷ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়৷ এমনকি রাগের মাথায় আমি বাসার জিনিসপত্রও ভেঙে ফেলি৷’’

তিনি জানান, ‘‘বাসার যাদের বাইরে অফিস ছিলো তারা অফিসে যেতেন৷ আমাকে বসে থাকতে হত৷ বাসার লোকজন আমাকে নানা কথা বলতেন৷ ফলে আমি মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম৷’’

এক পর্যায়ে তিনি চিকিৎসকের সহয়তা নেন৷ কাউন্সেলিং করা হয় তার৷ এখন তিনি ভালো আছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার নোটিশ দিয়েছে৷ আর তাই খুলনা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷

শুধু আনিকা বা মাহমুদ নন, করোনায় আরো অনেক শিক্ষার্থীই এমন মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন৷ তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের শনিবার প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, করোনার সময়ে ৮৪.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন৷

‘বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের প্রভাব’ শীর্ষক এ জরিপে দুই হাজার ৫৫২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন৷ এর মধ্যে এক হাজার ৫৫২ জন নারী শিক্ষার্থী৷

জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ৪০.২ শতাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, ২৮.৭ শতাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ৩১.১ শতাংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মেডিকেলে কলেজের৷

জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ৮৪.৬ শতাংশ জানিয়েছেন, করোনার সময় তারা বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় পড়েছেন৷

জরিপে অংশ নেয়া নারী শিক্ষার্থীদের ৮৭.৪৪ এবং ছেলে শিক্ষার্থীদের ৮০.৩৮ শতাংশ মানসিক সমস্যার শিকার হওয়ার কথা বলেছেন৷

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা প্রধানত যেসব সমস্যার কথা জানিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে, মন ভালো না থাকা, ঘুম না হওয়া, হীনমন্যতায় ভুগা, নিজেকে তুচ্ছ মনে করা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া প্রভৃতি৷

‘এটা আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি করতে পারে’

জরিপের ফলাফল বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬.৮৪ শতাংশ এবং বেরসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার শিকার হয়েছেন৷ আর সব মিলিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা ছেলেদের তুলনায় বেশি মানসিক সমস্যার শিকার হয়েছেন৷

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রধান তানসেন রোজ মনে করেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাওয়ায় এই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে৷ কারণ ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে যাচ্ছেন৷ তবে অনেক সমস্যা থেকে যাবে৷

তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷ বিশেষ করে কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা৷ অনেকেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন৷ আবার যারা অনলাইনে পরীক্ষা ও ক্লাসে ভালো করতে পারেননি অথবা অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেননি তারা নতুন করে হতাশায় আক্রান্ত হবেন৷ এটা আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি করতে পারে৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘এই হতাশা কাটাতে শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কর্পোরেট কালচারের পরিবর্তন করতে হবে৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজারদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে৷ কাউন্সেলিং বাড়াতে হবে৷’’

এই সময়ে অভিভাবক এবং পরিবারের  সদস্যদেরও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তার মতে, গুড প্যারেন্টিং জরুরি৷

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘এখন পড়াশুনা, পরীক্ষার জন্য চাপ না দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে মানসিকভাবে ভালো থাকেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাদের খেলাধুলা, বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাদের সামনে আশা জাগিয়ে তুলতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই হতাশায় ভুগছেন৷ তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে৷ এটা দূর করতে শুধু আশার কথাই যথেষ্ট নয়৷ সরকারকে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য