কপ ২৯: উন্নয়নশীল দেশের জন্য ৩০ হাজার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি
২৪ নভেম্বর ২০২৪দুই সপ্তাহের দর-কষাকষির পর বাকুতে কপ ২৯ এর প্রতিনিধিরা শনিবার সমঝোতায় পৌঁছান৷ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও অভিযোজন ব্যয় বাবদ উচ্চ কার্বন নির্গমনকারী উন্নত দেশগুলো বার্ষিক ৩০ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ের আশ্বাস দিয়েছে৷ যদিও এই অর্থ উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম৷
চুক্তিতে বার্ষিক এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বিস্তৃত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য অর্জনের কথাও রাখা হয়েছে৷ এরমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি দুই তহবিলই থাকছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ মোকাবিলার জন্য এই অর্থ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা৷
কপ ২৯ এর আসর শুক্রবার শেষ হওযার কথা থাকলেও জলবায়ু তহবিল নিয়ে ২০০ দেশ সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় সময় আরো বাড়ানো হয়৷ এক পর্যায়ে উন্নয়নশীল ও দ্বীপদেশগুলোর প্রতিনিধিরা হতাশা ব্যক্ত করে সম্মেলন থেকে ওয়াকআউট করেন৷ জীবাষ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো চুক্তি দুর্বল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তারা৷
এর আগের চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু অর্থায়নে দরিদ্র দেশগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল উন্নত দেশগুলো৷ তবে তা দুই বছর পর ২০২২ সালে গিয়ে বাস্তবায়িত হয়৷ এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালে৷
নতুন সমঝোতায় তহবিলের অঙ্ক বাড়লেও তা যথেষ্ট নয় বলে সমালোচনা করেছে উন্নয়নশীল দেশগুলো৷
জাতিসংঘের জলবায়ু প্রধান সায়মন স্টিল এই চুক্তিকে মানবতার বীমা বলে অভিহিত করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই যাত্রা কঠিন হলেও আমরা একটি চুক্তি সরবরাহ করতে পেরেছি৷'' তার আশা চুক্তির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বিকাশ এবং শতাধিক মানুষের জীবন রক্ষা পাবে৷ নতুন কর্মসংস্থান, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং সবার জন্য সস্তা ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দুয়ার উন্মোচন হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি৷ তবে বলেছেন, ‘‘যেকোনো বিমা পলিসির মতই এটা তখনই কাজ করবে যদি প্রিমিয়াম সবটা এবং সময়মত পরিশোধ করা হয়৷’’
‘অল্প কয়েকজনের প্রতিরোধ’
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়েছেন৷ তাতে তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা ঠিক যে কারো কারো প্রতিরোধের কারণে আজকে রাতের এই চুক্তিটি যথেষ্ট হয়নি৷ যারা এখানে অগ্রযাত্রা থামাতে, জলবায়ু ন্যায্যতাকে রুখতে এবং আমাদের জাতিসংঘের বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে এসেছিলেন তারা খুবই বাজেভাবে হেরে গেছেন৷’’
ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে তারা ত্যাগ করেননি বলে জানান বেয়ারবক৷ তার মতে বার্ষিক ৩০ হাজার কোটি ডলারের চুক্তিটি কেবল সূচনা৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক দায় কেউ ভুলে যায়নি৷ তরুণ প্রজন্মের সদস্য হিসেবে এটা পরিষ্কার: আমরা অতীতের সমাধান দিয়ে ভবিষ্যতের জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবো না৷ আমরা জানি আজকে শুধু আমাদের সিদ্ধান্ত দিয়ে সব প্রয়োজন মেটানো যাবে না৷''
উন্নয়নশীল দেশগুলোর হতাশা
প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ নিয়ে সবাই খুশি নয়৷ ভারতের প্রতিনিধি চাঁদনি রায়না বলেছেন, এশিয়ান দেশগুলো এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ আমরা এই ফলাফলে হতাশ৷ কারণ উন্নত দেশের দলগুলো স্পষ্টতই তাদের দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি দুঃখের সাথে বলতে চাই এই নথিটি একটি বিভ্রম ছাড়া আর কিছু না৷ আমরা যে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি তার সমাধান এটি করবে না৷ তাই, এই নথি গ্রহণে বিরোধিতা করছি আমরা৷''
অন্যদিকে, দ্বীপদেশ মালাওয়ির কূটনীতিক এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জোট এলডিসির প্রধান বলেছেন, ‘‘আমরা কী আশা করছি তা পাওয়া এখানে লক্ষ্য নয়৷ কয়েক বছরের আলোচনার পর আমরা আর এই নিয়ে উচ্চাভিলাষী নই৷''
‘নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর'
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু কমিশনার ভপকে হুকস্ট্রা মনে করেন, তহবিলের অঙ্ক ট্রিলিয়ন ডলার না হলেও তা প্রথম পদক্ষেপ মেটানোর মতো৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আত্মবিশাসী যে এই তহবিল এবং কাঠামো দিয়ে এক দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলারের (লক্ষ্যমাত্রায়) পৌঁছাতে পারবো৷’’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আশা করছেন, এই চুক্তি মেনে আরো বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি আরো উচ্চাভিলাষী ফলাফল আশা করেছি৷...কিন্তু এই চুক্তিটি নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর দিয়েছে৷ এটি অবশ্যই সম্পূর্ণ এবং সময়মতো বাস্তবায়ন করতে হবে৷ প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত নগদায়ন করতে হবে৷''
এফএস/টিএম (এএফপি, এপি, রয়টার্স)