ঐকমত্যের অভাবে অসহায় জি-টোয়েন্টি
১ মার্চ ২০২৪ইউক্রেন ও গাজার মতো সংকটের বিষয়ে বিশ্বের সেরা ২০টি অর্থনৈতিক শক্তির গোষ্ঠীর মধ্যে কতটা মতপার্থক্য ও বিভাজন রয়েছে, ব্রাজিলের সাও পাউলো শহরে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানদের সম্মেলনে তা স্পষ্ট হয়ে গেল৷ বৃহস্পতিবার আলোচনার শেষে এমনকি যৌথ ঘোষণাপত্রও প্রকাশ করা সম্ভব হলো না৷ আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রাজিল শুধু জি-টোয়েন্টি দেশগুলির আলোচনার সারাংশ তুলে ধরলো৷ ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের কালো ছায়া জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীকে নিষ্ক্রিয় করে তুলছে৷
ব্রাজিলের খসড়া অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ‘যুদ্ধ ও বেড়ে চলা সংকট' সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও জি-টোয়েন্টি অন্য মঞ্চে সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের পক্ষে সওয়াল করছে৷ বড় মন্দা ছাড়াই মূল্যস্ফীতি কমাতে বিশ্ব অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত সংকট সামলে নেবে বলেও মনে করছে এই গোষ্ঠী৷ ব্রাজিলের অর্থমন্ত্রী ফার্নান্দো আদাদের মতে, বিভিন্ন চলমান সংকট সম্পর্কে গত সপ্তাহে জি-টোয়েন্টি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে তীব্র মতপার্থক্যের জের ধরে অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনও ‘দূষিত' হয়ে গেছে৷ ফলে ব্রাজিলের উদ্যোগে অত্যন্ত ধনীদের সম্পদের উপর ন্যূনতম কর চাপানোর মতো প্রস্তাব নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা সম্ভব হয়নি৷ বিশ্বায়নের নতুন সংস্করণের প্রস্তাব দিয়েছে ব্রাজিল৷
জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীর মধ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি-সেভেন ও জাপানের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলির মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ শিল্পোন্নত দেশগুলি ইউক্রেনের ‘উপর' চাপানো যুদ্ধের উল্লেখ করতে চাইলেও রাশিয়া সেই ঘটনাকে ইউক্রেনের ‘মধ্যে' যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করতে চেয়েছিল৷ জি-সেভেন ইসরায়েলের উল্লেখ না করেই গাজার যুদ্ধকে ‘মানবিক সংকট' হিসেবে বর্ণনা করতে চেয়েছিল৷ ফলে সে বিষয়েও ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি৷ এমনকি ব্রাজিল সম্মেলনের অ্যাজেন্ডায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্রের মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতি মনোযোগ দিতে চাইলেও জার্মানিসহ শিল্পোন্নত দেশগুলি যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেন ও গাজার উল্লেখ করার উপর জোর দিয়েছে৷
জাপানের প্রতিনিধি মাসাতো কান্দা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির উপর সংকটগুলির বিশাল প্রভাব রয়েছে৷ এর ফলে খাদ্যপণ্যের মূল্যসহ একাধিক প্রভাব দেখা যাচ্ছে৷ তাই জি-টোয়েন্টি মঞ্চে সে বিষয়ে আলোচনা করতেই হয়৷ জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির উপর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে সর্বজনগ্রাহ্য ভাষার বিষয়ে ঐকমত্যের অভাবে যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা সম্ভব হয় নি৷ তাছাড়া ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার সঙ্গে গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে সমানভাবে গণ্য করার চেষ্টাও হয়েছে৷ জার্মানি এমন মূল্যায়নে সায় দিতে পারেনি৷ রাশিয়ার সম্পত্তি জব্দ করার বিষয়েও সম্মেলনে কোনো ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)