দাবা ও বক্সিং
৩ আগস্ট ২০১৫বার্লিনে বক্সিং রিং-এ যাদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সাধারণ বক্সার নন৷ এর নাম ‘চেস বক্সিং'৷ বছর দশেক আগে বার্লিনে দাবা ও বক্সিং-এর সমন্বয়ে এই খেলা চালু হয়েছিল৷ গোটা বিশ্বে এর ভক্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ জার্মানির সেরা খেলোয়াড় হলেন স্ভেন রোশ৷ তিনি আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও৷ চেস বক্সার স্ভেন রোশ বলেন, ‘‘চেস বক্সিং আমার রোমাঞ্চকর লাগে৷ এর জন্য পূর্ণ মানসিক ও শারীরিক ক্ষমতার প্রয়োজন হয়৷ বক্সিং-এর ক্ষেত্রে স্ট্যামিনা, কৌশল, চোখের নজর, কায়দা – অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়৷ এবার সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে দাবা খেলার বিষয়গুলি৷''
স্ভেন রোশ অনুশীলন করছেন৷ বার্লিনের এই দমকলকর্মীর জন্য বক্সিং ও দাবাখেলার এই মেলবন্ধন পছন্দের শখ৷ বছর তিনেক ধরে তিনি ‘চেসবক্সিং বার্লিন' ক্লাবে সক্রিয়৷ ২০০৪ সালে গঠিত এই ক্লাবে প্রায় ১০০ সদস্য রয়েছেন৷ বেশিরভাগই বক্সিং-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ শুধু দাবা খেলতেন – এমন লোকের সংখ্যা কম৷ স্ভেন বলেন, ‘‘বক্সিং-এই আমার মূল শক্তি৷ কারণ সেটাই অনেকদিন ধরে করে চলেছি, ১৩ বছর ধরে৷ দাবা আয়ত্ত করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷
লড়াই শুরুর কিছু আগের মুহূর্ত৷ ডাচ বংশোদ্ভূত ইয়েপে রুবিং দাবা ও বক্সিং-এর মেলবন্ধনের আন্দোলনের উদ্যোক্তা৷ একটি কমিক বই পড়ে তাঁর মাথায় এই আইডিয়া এসেছিল৷ তাতেই চেস-বক্সিং-এর মৌলিক কিছু ইঙ্গিত ছিল৷ ২০০৩ সালে রুবিং আমস্টারডামে প্রথম প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন৷ প্রথমে ব্যাপারটাকে ‘অ্যাকশন আর্ট' হিসেবে ভাবা হয়েছিল৷ তিনি নিজেই রিং-এ নেমে ‘ইয়েপে দ্য জোকার' হিসেবে প্রথম চেসবক্সিং বিশ্বকাপে জয়ী হন৷ তারপর খেলা হিসেবে চেসবক্সিং-এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে৷ ইয়েপে বলেন, ‘‘চেসবক্সিং-এর স্পিরিট আসলে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিনয়ের মিশ্রণ৷ এর মধ্যে একটা পাগলামি আছে বৈকি৷ অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়৷ অনেক অনুশীলন লাগে, ফলে একই সঙ্গে বিনয় চলে আসে৷''
তিন মিনিটে এক রাউন্ড শেষ হয়৷ তারপর চলে শুধু ঘুসির লড়াই৷ বার্লিনে বিশ্বকাপের সময় প্রায় ৪০০ দর্শক এসেছিলেন৷ চেসবক্সিং সবার জন্য নয়, শুধু ট্রেন্ড-সচেতন দর্শকদেরই আকর্ষণ করে৷ জিততে হলে হয় নকআউট অথবা চেক-মেট করতে হবে৷ তবে ১১ রাউন্ডেও জয়ী নির্ধারিত না হলে পয়েন্টের বিচারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ বক্সিং-এর ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন স্পেনের রদরিগেস ভেগা৷ স্ভেন রোশ দাবার দ্বিতীয় রাউন্ডে আত্মরক্ষা করতে পেরেছিলেন৷
তখনই পরিস্থিতি বদলে গেল৷ প্রতিপক্ষের অন্যমনস্কতার একটা মুহুর্ত কাজে লাগাতে পারেন তিনি৷ কয়েকটি চালেই বাজিমাত হয়ে গেল৷ স্ভেন রোশ বলেন, ‘‘আজ সন্ধ্যায় আনন্দ করতে পারবো ভেবেই ভালো লাগছে৷ প্রস্তুতির চাপ শেষ৷ অবশেষে আবার সব কিছু শান্ত হবে৷''
শুধু জার্মানি নয়, গত কয়েক বছরে ব্রিটেন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইরানে চেসবক্সিং ক্লাব চালু হয়েছে৷ অতএব পরিবার ফুলে-ফেঁপে বেড়ে উঠছে৷ আরও পদক্ষেপের কথাও ভাবা হচ্ছে৷ উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো চেসবক্সিং-কে অলিম্পিকের অন্তর্গত করা৷