উপাচার্য হওয়ার উপায়
বাংলাদেশে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের নীতিমালা নেই৷ বাকিগুলোতে নিয়ম আছে কাগজে৷ ভিসি নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয়ই মুখ্য হয়ে উঠছে৷
আইন কী বলে
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের আলোকে৷ নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিনেট তিনজন শিক্ষাবিদকে উপাচার্য হিসেবে মনোনীত করবে৷ সেই তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দিবেন আচার্য অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি৷
বাস্তবতা
সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত আড়াই দশকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়নি৷ জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্বাচন ছাড়াই উপাচার্য নিয়োগ হয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরাসরি ভিসি নিয়োগ দিয়েছেন আচার্য৷ (ছবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম)
যোগ্যতা রাজনীতি!
এই চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারপন্থি শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বা সরকারের আস্থাভাজনরাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান৷ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা উপাচার্য হয়েছেন৷ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নীল দলের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষকরা পেয়েছেন উপাচার্য পদ৷ (ছবি:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান)
পুরস্কার!
অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারপন্থি দলের শিক্ষক নেতারা৷ যেমন শাবিপ্রবির আলোচিত ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (ছবিতে) ঢাবি শিক্ষক সমিতিতে নীল দল থেকে তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি৷ ইউজিসির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে অর্ধশত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে৷ এর মধ্যে ১৩ টিতেই উপাচার্য হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা৷
নীতিমালা নেই
সরকারি চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলোতে উপাচার্য নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা নাই৷ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের কোনো নীতিমালা নাই৷ কে উপাচার্য হবেন, সেটা কেউ জানে না৷ যিনি উপাচার্য হবেন তিনিও জানেন না৷’’
বেসরকারিতে যেভাবে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি৷ সেগুলো এখন চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর অধীনে৷ এই আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রস্তাবিত যোগ্য ব্যক্তিকে চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিবেন আচার্য বা রাষ্ট্রপতি৷ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সুপারিশে উপাচার্যকে তিনি অপসারণও করতে পারেন৷ (ছবি: ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন)
উপাচার্যের কাজ
৭৩-এর অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে তৎকালীন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো এই স্বায়ত্তশাসন রক্ষা ও জ্ঞান চর্চার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করবে, যার নেতৃত্ব দিবেন উপাচার্য৷ তবে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যরা এই দায়িত্ব পালন করেন কিনা তা বড় প্রশ্ন৷ সাম্প্রতিক সময়ে নানা কার্যক্রমে ভিসিদের বিরুদ্ধে বরং দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে৷
এত উপাচার্য!
৬৪টি জেলায় ৬৪টি বিশ্ববিদ্যালয় করতে চায় সরকার৷ সে অনুযায়ী প্রতি বছরই কোন না কোন জেলায় চালু হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়৷ কিন্তু সেগুলো চালানোর মতো এত যোগ্য উপাচার্য দেশে আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে৷ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকায় ভিসি বা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন শিক্ষা ও গবেষণার চেয়ে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷