কর না দিয়ে চালাকি
২২ জুন ২০১৬ওয়েলস প্রদেশের ক্রিকহাওয়েল শহরের মানুষ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য পরিচিত৷ এখানে বেশ কয়েকটি ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷ যেমন স্টিভ লুইস একটি ক্যাফে চালান৷ জো ক্যার্থিউ-র একটি স্মোকারি আছে৷ আর স্টিভ অ্যাস্কিউ শহরের রুটির দোকানের মালিক৷ পারিবারিক ব্যবসা তাঁদের৷
অ্যাস্কিউ ও তাঁর প্রতিবেশীরা মোটেই বিপ্লবী নন৷ কিন্তু দেশে করের বোঝার বৈষম্য সম্পর্কে তাঁরা তিতিবিরক্ত৷ স্টিভ অ্যাস্কিউ বলেন, ‘‘কর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের মনে কোনো সংশয় নেই৷ অনেক পরিষেবার জন্য এই অর্থের প্রয়োজন রয়েছে৷ এ নিয়ে কারো কোনো সমস্যা নেই৷ সমস্যা হলো, সাধারণ মানুষকে কর দিতে হচ্ছে এবং বড় কোম্পানিগুলি কর এড়িয়ে যাচ্ছে৷ আমার ব্যবসা সফল, আমিও কর দিয়েছি৷ আমার পক্ষে সহজ না হলেও আমি কর দিই৷ আমার কর্মীরাও আয়কর দেন৷ কিন্তু এটা একেবারেই ন্যায্য নয়৷''
এবার তারা কর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছে৷ ‘ফেয়ার ট্যাক্স টাউন' নামের এক ব্র্যান্ড তৈরি করে এই আন্দোলনকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে৷
শহরের জনসংখ্যা মাত্র ২,০০০-এর মতো৷ অতএব পরীক্ষা চালানোর জন্য আদর্শ৷ আইডিয়াটা অন্য জায়গা থেকে এলেও ওয়েলস প্রদেশের এই ছোট্ট শহর সেটি নিয়ে মেতে উঠেছে৷
জো ক্যার্থিউ ‘ফেয়ার ট্যাক্স টাউন' প্রকল্প সম্পর্কে বুঝিয়ে বললেন৷ শুরুতেই প্রশ্ন উঠলো, ছোট ব্যবসার মালিকরাও কর ব্যবস্থার ফাঁকফোকর কাজে লাগাতে পারবে না কেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আইডিয়াটা ছিল, আমরা একজোট হয়ে বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির কায়দা ও কৌশল নকল করবো৷ ছোট প্রতিষ্ঠানগুলির এই জোট যাতে বড় কোম্পানির মতো আচরণ করতে পারে৷''
কৌশলটা হলো এ রকম৷ ছোট কোম্পানিগুলি তাদের হোল্ডিং তথাকথিত অফশোর ‘করের স্বর্গে' পাঠিয়ে দেয়৷ কায়দা করে তারা কর এড়িয়ে চলতে পারে৷ পুরোটাই আইনি পথে ঘটে, কারণ তারা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়৷ স্মোকারি-র মালিক জো ক্যার্থিউ বলেন, ‘‘যেটা বোঝা যায়, সেটা হলো, তারা যেখানে এত মুনাফা করছে, সেই সমাজেই তারা কোনো অবদান রাখছে না৷ সেটা সত্যি বড় অন্যায়৷''
ক্রিকহাওয়েল-এর মানুষ নিজেদের শহরের প্রতি অত্যন্ত অনুগত৷ ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কীভাবে কর এড়িয়ে চলতে পারে, সেটি পরীক্ষা হিসেবে শুরু হলেও তারপর বিষয়টা ডেভিড-গলিয়াথ সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে৷
ক্যাফের মালিক স্টিভ লুইস এভাবে ব্রিটেনের কর সংক্রান্ত আইনের ত্রুটিগুলি তুলে ধরতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আসলে এটা খুব সহজ৷ সরকার এমন কর ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে, যা কর এড়িয়ে যেতে কার্যত হাতছানি দেয়৷ আমার মতে, কর এড়ানো কর ফাঁকির সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''
এখন তাঁর হোল্ডিং-এর একটি অংশ এক ‘করের স্বর্গে' গচ্ছিত আছে৷ লুইস তাঁর এই প্ররোচনামূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান৷ এভাবে কর এড়ানোর সব ফাঁকফোকর বন্ধ করে সবার জন্য ন্যায্য করের কাঠামো নিশ্চিত করতে চান তিনি৷ লুইস বলেন, ‘‘জানেন তো, মধ্যযুগেও চাষিদের কাছ থেকে সব সময় কর আদায় করা হতো৷ ধনী ও বিখ্যাত মানুষদের রেহাই দেওয়া হতো৷ যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়৷ আমি কিন্তু অ্যাকটিভিস্ট না হয়েও এ কথা বলছি৷''
এখানে কেউই কর দেবার বিপক্ষে নয়৷ তারা সবাই বৃহত্তর সমাজের কল্যাণে নিজেদের অবদান রাখায় বিশ্বাসী৷ ওয়েলস প্রদেশের এই ছোট্ট শহরের মানুষ এবার জানতে চান, তাদের পদক্ষেপ কর এড়িয়ে চলা বড় কোম্পানিগুলিকে নতজানু করতে পারে কিনা৷