উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে পুটিনের সাবধানবাণী!
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭‘রাশিয়া টুডে'-র বিবরণ অনুযায়ী, পুটিন একটি সংবাদ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক রকেট পরীক্ষাকে ‘প্ররোচনামূলক' বলে নিন্দা জানালেও সঙ্গে এ কথাও বলেছেন যে, কূটনীতি ছাড়া অপর কোনো পন্থা অবলম্বন করলে তিনি একটি ‘বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়'-এর আশঙ্কা দেখেন৷
‘‘এই পরিস্থিতিতে সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে চলা অর্থহীন; ওটা একটা কানাগলি'', বলে পুটিন মন্তব্য করেন৷ ‘‘ও থেকে বিশ্ব ও পৃথিবীব্যাপী বিপর্যয় ও বিপুল প্রাণহানির অবতারণা ঘটতে পারে'', পুটিন বলেন৷ তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনা ছাড়া উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রসঙ্গটির সমাধান করার আর কোনো উপায় নেই৷
পুটিন সাবধান করে দেন যে,উত্তর কোরিয়ায় যদি ‘‘ওরা নিরাপদ না বোধ করে'', তাহলে তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি সীমিত করবে না৷ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সাহায্য করতে পারে, কিন্তু ‘‘যে কোনো ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা'' বলবৎ করাটা ‘‘অর্থহীন''৷
‘যুদ্ধের জন্য আকুল'
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সোমবার বলেন যে, উত্তর কোরিয়ার নেতাকিম জং-উন দৃশ্যত ‘যুদ্ধের জন্য আকুল'৷ হ্যালি বলেন যে, ওয়াশিংটন অপরাপর দেশের উপর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বন্ধ করার জন্য চাপ দেবে৷ তিনি নিরাপত্তা পরিষদের জন্য একটি নতুন প্রস্তাব এ সপ্তাহে পেশ করবেন বলেও জানিয়েছেন৷ এই প্রস্তাবে উল্লিখিত নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আগামী ১১ই সেপ্টেম্বর তারিখে গৃহীত হবে বলে তিনি আশা করছেন৷
ইতিপূর্বে সোমবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন-এর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং উভয়ে একমত হন যে, পিয়ংইয়াং-এর সর্বাধুনিক ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণ একটি অভূতপূর্ব প্ররোচনা৷ এছাড়া দুই নেতা দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পে-লোড বা বোমার ওজন বাড়ানো সম্পর্কে একমত হন৷ ২০০১ সালের একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী এই পে-লোড ৫০০ কিলোগ্রামে সীমিত করা হয়েছিল৷
হোয়াইট হাউসের একটি বিবৃতি অনুযায়ী ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘বহু শত কোটি ডলার' মূল্যের সমরাস্ত্র ও সামরিক সাজসরঞ্জাম বিক্রির অনুমতি দিতে প্রস্তুত৷
দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়া
পিয়ংইয়াং-এর স্বঘোষিত হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের দু'দিন পরে দক্ষিণ কোরিয়া তাজা গোলাবারুদ নিয়ে পূর্ব সাগরে একটি ‘ব্যাপক' মহড়া চালিয়েছে৷
গাইডেড মিসাইল নিক্ষেপে সক্ষম একটি ৪০০ টন ওজনের জাহাজসহ একাধিক জঙ্গিজাহাজ কোরিয়া উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে সংঘটিত মহড়াটিতে অংশগ্রহণ করে৷
মহড়ায় একটি রণতরী, একটি টহলদারি জাহাজ ও বিভিন্ন উচ্চগতির বোট ব্যবহার করা হয় বলে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷
দক্ষিণ কোরিয়ার ইওনহাপ সংবাদ সংস্থা মহড়াটিকে ‘ব্যাপক' বলে বর্ণনা করে এবং যোগ করে যে, এই মহড়া ‘উত্তর কোরিয়ার প্ররোচনার বিরুদ্ধে (দক্ষিণ কোরিয়ার) প্রত্যুত্তর দেবার সংকল্পের' পরিচায়ক,বলে দক্ষিণ কোরীয় নৌবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে৷
মহড়ার আগের দিন দক্ষিণ কোরীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর একটি যৌথ মহড়ায় এক পর্যায় এফ-১৫ জঙ্গিজেট ও ভূপৃষ্ঠে স্থাপিত ক্ষেপণাস্ত্রসহ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা ভূমির উপর আক্রমণের মহড়া নেওয়া হয়৷ আগামী বুধবার থেকে শনিবার অবধি দেশের দক্ষিণ উপকূলে উত্তরোত্তর নৌ মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, বলে সৌল জানিয়েছে৷
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্র মঙ্গলবার জানায় যে, পিয়ংইয়ং দৃশ্যত একটি আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্রকে তার পশ্চিম উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ রকেটটি স্থানান্তরের কাজ সোমবার শুরু হয় এবং নজর এড়ানোর জন্য এই কাজ শুধু রাত্রে করা হচ্ছে বলে এশিয়া বিজনেস ডেইলি এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে৷ সৌলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে তারা এই খবরের যথার্থতা নিশ্চিত করতে অক্ষম৷
এসি/এসিবি (এএফপি, এপি, ডিপিএ)