উত্তপ্ত ভাঙড়, নিহত অন্তত তিন
১২ জুলাই ২০২৩ফের উত্তপ্ত ভাঙড়। মঙ্গলবার মাঝ রাত থেকে সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়। আইএসএফ কর্মীরা পথ অবরোধ করেন বলে জানা গেছে। পুলিশ সেই অবরোধ তুলতে গেলে এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত বারুইপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং আরো এক পুলিশ কর্মী। তাদের কলকাতার একটি অসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আইএসএফ দাবি করেছে, তাদের অন্তত চারজন গুলিতে নিহত হয়েছে। তবে সরকারিভাবে একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বেসরকারি সূত্রে আরো দুইজনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। অর্থাৎ, শুধু ভাঙড়েই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই ভাঙড়েই একটি জেলা পরিষদ দখল করেছে আব্বাস এবং নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ। বাকি ৮৪টি জেলা পরিষদেই তৃণমূল জিতেছে। রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও অধিকাংশ জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে।
সহিংসতা অব্যাহত
ভাঙড়ে উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি। তবে রাজ্যের অন্য জেলা থেকেও সংঘর্ষ এবং মৃত্যুর খবর আসছে। রায়দিঘিতে এক তৃণমূলকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। পুকুর থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়েছে। কারা তাকে খুন করেছে, তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের বাকচায় মঙ্গলবার বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। তাতে এক বৃদ্ধ আহত হয়েছেন। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। দুইপক্ষের একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। মুর্শিদাবাদের একাধিক জায়গা থেকে বোমাবাজির খবর আসছে। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বেসরকারি সূত্রের দাবি, পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে এখনো পর্যন্ত মোট ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোটপূর্ব পরিস্থিতিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৮। ভোটের দিন মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। ভোট পরবর্তী সময়ে আরো সাতজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সংখ্যাটি আরো বাড়বে বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
দিকে দিকে জয়ী তৃণমূল
সম্পূর্ণ ফলাফল ঘোষণার আগেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামবাংলার মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ভোটে সহিংসতা নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি বলেছেন, বাংলায় রক্তের হোলি খেলা চলছে। এর আগে তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্চিত এবং হুমায়ুন কবীর সহিংসতার নিন্দা করেছিলেন।
এদিকে বুধবার সকাল পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে তাতে তৃণমূল সব মিলিয়ে দুই হাজার ৫৬২টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে। বিজেপি পেয়েছে ২১২টি। বামেরা পেয়েছে ৪২টি। কংগ্রেস ১৭। আইএসএফ আট। নির্দল প্রার্থীরা পেয়েছে ৩৪৬টি। তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতি পেয়েছে ২৪২টি। বিজেপি পেয়েছে আটটি, বামেরা একটি। জেলা পরিষদের লড়াইয়েও এগিয়ে শাসকদল। এখনো পর্যন্ত যে ফলাফল মিলেছে তাতে মোট ৯২৮টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৫৬৩টিতে তৃণমূল জয়যুক্ত হয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ২৪টি। সিপিএম ৫। কংগ্রেস আট এবং অন্যান্যরা দুইটি আসনে জয়ী হয়েছে। ভাঙড় জেলা পরিষদে আইএসএফ জয়ী হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ফলাফল এখনো ঘোষণা হয়নি।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ তৃণমূল দখল করলেও ১৮টি আসনে বিরোধীরা জিতেছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় হিসেবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি জেলা পরিষদ দখল করতে পারেনি। রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় কার্যত বিরোধীশূন্য জেলা পরিষদ গঠনের পথে তৃণমূল।
বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। বুথ দখল, রিগিং করে, ভোট লুঠ করে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বিরোধীরা যেখানে সামান্য লড়াই করতে পেরেছে, সেখানেই তৃণমূলের হার হয়েছে। পুলিশ-প্রসাসনের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে বিরোধীরা।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)