মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইভ টিজিং-এর প্রভাব
১১ জুলাই ২০১৭ডয়চে ভেলে: মেয়েরা কেন ইভ টিজিং-এর শিকার হন? এতে তারা কী ধরনের মাসসিক সমস্যায় পড়েন?
ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন: ইভ টিজিং হলো বিভিন্ন ধরনের উত্যক্ত করা৷ এটা মৌখিক এমনকি শারীরিকও হতে পারে৷ শারীরিক লাঞ্ছনা পর্যন্ত হতে পারে৷ এর কারণে অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনাও ঘটতে পারে৷ হত্যা পর্যন্ত সংগঠিত হতে দেখি আমরা৷ শারীরিকের পাশাপাশি মানষিক নির্যাতন হতে আমরা দেখে থাকি৷ সেক্সসুয়াল ভায়োলেন্সও আমরা হতে দেখে থাকি৷ এখানে মানসিক নির্যাতনের দু'টো দিক আছে৷ একটা তৎক্ষণিক এবং একটা দীর্ঘমেয়াদি মেয়াটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ স্কুল-কলেজগামী তরুণীরা এই ঘটনায় বেশি আক্রান্ত হন৷ অনেক মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হয়ে থাকেন৷ মানসিক নির্যাতনের শিকার মেয়েরা সবসময় একটা আতঙ্কে থাকেন৷ তার স্বাভাবিক কাজকর্ম-চলাফেরা এতে বিঘ্নিত হয়৷ এক পর্যায়ে মেয়েটা নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়৷ তার ঘুমের অসুবিধা-খাওয়ার অরুচি হয়৷ এক সময় সে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে যায়৷
কোন বয়সের ছেলেরা ইভ টিজিং করে? তাদের মানসিকতা কেমন?
বয়সে যারা তরুণ, বিশেষ করে ১৫ বছর থেকে ২৯ বছর পর্যন্ত বয়সি তরুণরাই এই কাজ বেশি করে৷ বিশেষ করে যুবক যারা, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ তাদের বিরুদ্ধেই এই ধরনের অভিযোগ বেশি৷ যেসব ছেলের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ বেশি, তাদের অনেকেই বেকার৷ তারা অনেক সময় সন্ত্রাসী বা মাস্তান হয়৷ তারা খুব খারাপ পরিবেশে অনেক সময় বড় হয়৷ কেউ তো বাড়িতে বাবার হাতে মাকে নির্যাতন হতে দেখেছেন৷ বস্তিতে বড় হওয়া তরুণদের মধ্যেও এই ধরনের প্রবণতা বেশি৷ মধ্যবয়সিদের মধ্যেও কেউ কেউ এই ধরনের কাজ করে থাকে৷ বইমেলা বা বাসের ভেতরে আমরা দেখি বিভিন্ন বয়সি পুরুষ এই ধরনের কাজ করছে৷
কোন বয়সের মেয়েরা বেশি ইভ টিজিং-এর শিকার হন? কোন জায়গাগুলোতে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে?
স্কুলে যারা যাচ্ছে, অর্থাৎ বয়সে কিশোরী – তারাই বেশি ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়৷ এমনকি কাস ফাইভের একটা মেয়েও ইভ টিজিং-এর শিকার হচ্ছে৷ হাইস্কুলের মেয়েরা তো আহরহ এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে৷ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরাও ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়৷ এর মানে এই নয় যে, মধ্যবয়সি নারীরা ইভ টিজিং-এর শিকার হচ্ছেন না৷ তাঁরাও হচ্ছেন৷ তবে কিশোরী বা তরুণীদের তুলনায় কম৷ স্কুল বা কলেজের সামনে বা পাবলিক প্লেসেও এটা হতে পারে৷ অনেক সময় কাউকে ফলো করে নির্জন জায়গায়ও হতে পারে৷
কর্মস্থলে কি নারীরা ইভ টিজিং-এর শিকার হন?
কর্মস্থলে অন্যভাবে হয়৷ এটাতে আমরা মানসিক হয়রানি বলি৷ তাকে ভয় দেখানো বা পদোন্নতি হবে না এমনভাবে বস ভয় দেখান বা সহকর্মীরা নানা ধরনের কথা বলে তাঁকে বিরক্ত করতে পারেন৷ তাঁকে ব্লাকমেইল করতে পারে৷ অনেক সময় প্রলোভনও দেখানো হয় মেয়েদের৷ কর্মক্ষেত্রে হরহামেশাই এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে৷ অনেক সময় ছোট ভুলের কারণে অনেক বেশি মানসিক পীড়ন তাঁকে দেয়া হয়৷
কর্মস্থলে ইভ টিজিং-এর কারণে মেয়েদের কর্মস্পৃহা কমে যায় কি?
সব সময় যদি কেউ মানসিক চাপে থাকে, তাহলে এক সময় সে আর চাপ নিতে পারে না৷ তখন তার কর্মস্পৃহা কমে যায়৷ মনোসংযোগে ঘাটতি দেখা দেয়৷ এক পর্যায়ে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে৷ সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং তার প্রডাক্টিভিটি কমে যায়৷ এতে তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ইভ টিজিং-এর ভয়ে অনেকে বাইরে বের হন না, তাদের মানসিক অবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
কেউ যদি এই ভয়ে ঘরের বাইরে বের না হয় তাহলে সে নিজেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷ এখন কিন্তু এটা অনেক নিয়ন্ত্রণে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর৷ সরকারের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইভ টিজিং-এর ঘটনা কি ঘটে? ঘটে থাকলে সেটা কেমন?
বর্তমানে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে মোবাইল ফোনে সবাই সেটা ব্যবহার করেন৷ এতে হুমকি দেয়া বা থ্রেট দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে৷ এখানেও নারীর ইভ টিজিং-এর শিকার হওয়ার সুযোগ আছে৷
ইভ টিজিং-এর কারণে আত্মহত্যা করে থাকেন অনেক মেয়ে৷ তারা কি ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগেন?
কোনো মেয়ে যদি ইভ টিজিং-এর শিকার হয়, তখন তার আশ্রয়স্থল হলো তার পরিবার৷ এক্ষেত্রে কোনো মেয়ে এই ঘটনা পরিবারের কাছে বলতে গেলে অনেক সময় পরিবার বলে যে, অন্য কারো সঙ্গে এটা হয় না, তোমার সঙ্গে কেন এমনটা হলো? তখন মেয়েটি ভেঙে পড়ে৷ সে তখন আত্মহত্যার দিকে চলে যেতে পারে৷ এই ধরনের মেয়েদের মধ্যে মানসিক রোগ বেশি দেখা দেয়৷ তারা বিষনণ্ণতায় ভোগে৷ কোনো মেয়ে এই পরিস্থিতিতে পড়লে পরিবারকেই তাকে সহযোগিতা দিতে হবে৷ প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎকের কাছে নিয়ে যেতে হবে৷
ইভ টিজিং-এর কারণে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীর হার বেড়েছে না কমেছে?
এখন থেকে ৮-১০ বছর আগে ইভ টিজিং-এর হার যা ছিল তার চেয়ে অনেক কমেছে এখন৷ এখন এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে৷ মিডিয়াও এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা পরিবারও এখন অনেক বেশি সচেতন৷ তবে এখনও এই ধরনের রোগী আসছে৷
আপনি কি ডা. জিল্লুর রহমান খান রতনের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের মন্তব্যের ঘরে৷