ইটালিতে জাতিবাদ রুখবে
২৪ আগস্ট ২০১৩প্রত্যাশা সেইরকম এবং অন্যায় প্রত্যাশা নয়৷ বালোতেল্লি অন্য স্ট্রাইকারদের চেয়ে বেশি গোল না করতে পারেন, কিন্তু ইটালিতে তাঁর মতো জনপ্রিয় খেলোয়াড় আজ আর কেউ নেই৷ বিদেশেও তাই৷ বলতে কি, বালোতেল্লিকে এক হিসেবে ডেভিড বেকহ্যামের মতো গ্লোবাল স্টার বলা চলে৷ কষ্টিপাথরে গড়া পেটানো চেহারা, মাথায় মার্কিন মুলুকের রেড ইন্ডিয়ানদের কায়দায় ছাঁটা চুল৷ গোল করার পর জার্সি খুলে বিজয়ীর ভঙ্গিতে বালোতেল্লি যখন স্টেডিয়ামে দর্শকদের সামনে পোজ দিয়ে দাঁড়ান, তখন সকলেরই রক্ত গরম হয়ে যায়৷
সেই সঙ্গে রয়েছে বালোতেল্লির নিজস্ব কাহিনি৷ বাবা-মা ঘানার মানুষ৷ তাঁর নিজের জন্ম ইটালির পালার্মোতে৷ পরে এক ইটালীয় দম্পতি তাঁকে দত্তক নেন৷ সেই বালোতেল্লি আজ ইটালীর জাতীয় একাদশের তারকা৷ অথচ স্টেডিয়ামে তাঁকে জাতিবাদী মন্তব্য ও টিটকিরির শুনতে হয়৷ কাজেই বালোতেল্লির ব্যক্তিগত জীবন যেন ইটালিতে জাতিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও তার প্রয়োজনীয়তার প্রতিচ্ছবি৷
গ্লোবাল স্টার
তিনি যে আজ গ্লোবাল স্টার, বালোতেল্লির ব্যক্তিগত কাহিনিও হয়ত তার একটা কারণ৷ তবে তিনি সত্যিই গ্লোবাল স্টার৷ ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত স্পোর্টস ম্যাগাজিন ‘‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড''-এর কভার অলঙ্কৃত করেছেন: উন্মুক্ত শরীরে যেন জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন৷ পত্রিকাটি তাঁকে আখ্যা দিয়েছে: ‘মোস্ট ইন্টারেস্টিং ম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড', ‘বিশ্বের সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক পুরুষ'৷
টাইম ম্যাগাজিন গত নভেম্বরে তাদের আন্তর্জাতিক সংস্করণের প্রথম পাতায় বালোতেল্লি ছবি দিয়েছে, তাঁকে বিশ্বের প্রথম একশো' জন সনচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় রেখেছে৷ ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে আড়াই মরশুম খেলার সময় বালোতেল্লি ছিলেন ব্রিটিশ প্রেসের ডার্লিং৷ তাঁর নানা প্রেমকাহিনি, গাড়ি ভুল পার্ক করার জন্য ফাইন, এ সবই ছিল ইয়েলো প্রেসের খোরাক৷ সবই তাঁকে বিশ্বখ্যাত করে তুলতে সাহায্য করেছে৷
খেলার মধ্যে জাতিবাদ
কিন্তু বালোতেল্লি তো শুধু চোখে পড়ার মতো, ক্ষেত্রবিশেষে চমকে দেওয়ার মতো চরিত্রই নন – তিনি যখন মাঠে, তখন বিশ্বের যে কোনো ডিফেন্স তাঁকে সমীহ করে চলবে৷ মিলানের হয়ে গত সিজনে ১৩টি খেলায় ১২টি গোল করেছেন৷ ২৩ বছর বয়সের বালোতেল্লি এই মরশুমেও মিলানের অ্যাটাকের মধ্যমণি থাকবেন৷ ইটালির জাতীয় দলের কোচ সেজারে প্রান্দেলির ফেবারিটও তিনি৷
অপরদিকে তিনি যে রেফারিদের ফেবারিট নন, রেফারিরা যে তাঁর বিরুদ্ধে যে ফাউলগুলো করা হয়, সেগুলো দেখেও দেখেন না, এ অভিযোগ বালোতেল্লি বহুবার করেছেন৷ তবে তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু হল ইটালির স্টেডিয়ামগুলোয় যে সব জাতিবাদী ফ্যানরা তাঁকে ও অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের গালিগালাজ করে, তারা৷ বালোতেল্লি নিজে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডকে ব্যাপারটা অতি সহজে, সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন: ‘‘জাতিবাদ পুরোপুরি মুছে দেওয়া যায় না৷ ওটা সিগারেট খাওয়ার মতো৷ মনেপ্রাণে না চাইলে সিগারেট খাওয়া ছাড়া যায় না৷ সেভাবেই, মানুষজন না চাইলে জাতিবাদ বন্ধ করা যায় না৷ তবে আমি আমার যতটুকু সাধ্য, করব৷''
আর প্ররোচিত হওয়া নয়
বালোতেল্লির মনোভাবে একটি পরিবর্তন লক্ষণীয়৷ ইতিপূর্বে স্টেডিয়ামে জাতিবাদী মন্তব্য, টিটকিরির প্রতি তাঁর মনোভাব ছিল, ‘সেক্ষেত্রে আমি মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাব৷' এবার কিন্তু বালোতেল্লি স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডকে বলেছেন, স্টেডিয়ামে জাতিবাদের আভাস দেখলে ‘আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে গোল করার চেষ্টা করব৷ আর গোল করার পর আমার যা বলার আছে, তা বলব৷'
বালোতেল্লির হৃদয়পরিবর্তনের একটা ইতিহাস আছে৷ সম্প্রতি ইটালি ও আর্জেন্টিনার মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলির আগে পোপ ফ্রান্সিস উভয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান৷ সেই সময় পোপ নাকি বালোতেল্লিকে ব্যক্তিগতভাবে বলেন, জাতিবাদী প্ররোচনায় তাঁর শান্ত থাকা উচিত৷ পরদিন টুইট করে তাঁর ফ্যানদের এ কথা জানিয়েছেন বালোতেল্লি৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ)