বোল্ট এখন গবেষণার বিষয়
১৯ আগস্ট ২০১৩ইউসেইন বোল্টের স্প্রিন্ট একটা দেখার মতো ব্যাপার৷ এক মিটার ৯৫ সেন্টিমিটার লম্বা হওয়ার দরুন বোল্টের দৌড়শৈলিটা অন্যান্য দৌড়বীরদের চেয়ে কিছুটা আলাদা৷ তার স্টার্টটা খুব বিস্ফোরক নয়, কেননা দৈর্ঘ্যের কারণে বোল্টের ওজনও বেশি৷ ঐ পরিমাণ ‘মাস'-কে শূন্য থেকে দৌড়ের গতিতে আনতে সময় লাগবে বৈকি৷
এছাড়া বোল্ট তার নিজের দৌড়ের নকশাটা চেনেন – সে জন্য সূচনায় কিংবা শেষে তার বেশি তাড়াহুড়ো করার দরকার পড়ে না৷ শূন্য দশমিক ১৮০ সেকেন্ডের স্টার্টকে বাকি ১০০ মিটার দৌড়বীরদের তুলনায় প্রায় ‘ধীরেসুস্থে' বলা চলে৷ কাজেই দৌড় শুরু হবার পর প্রথমে অপর কোনো স্প্রিন্টারই সামনে থাকে – যদিও বেশিক্ষণের জন্য নয়৷
বোল্ট তার লম্বা লম্বা পা ফেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই লিড নিয়ে নেন৷ পায়ের তলা থেকে কোমর অবধি বোল্টের পায়ের দৈর্ঘ্য হল এক মিটার দশ সেন্টিমিটার৷ দৌড়ের সময় পা ফেলেন প্রতি বারে দু'মিটার ৯৫ সেন্টিমিটার৷ তার গড় পদক্ষেপই হল দুই মিটার ৪৩ সেন্টিমিটার৷ জার্মানির ‘ডি প্রেসে' পত্রিকায় ২০১২ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বোল্টের ১০০ মিটার দৌড়তে ৪১ বার পা ফেলতে হয়, অন্যদের ৪৩ বার পা ফেলা লাগে৷ কাজেই বোল্ট তো জিতবেনই!
পদার্থবিদ ও নিউরোফিজিসিস্টরা বোল্টের দৌড় নিয়ে চর্চা করেছেন৷ কেউ আবিষ্কার করেছেন, বোল্টের পরিবার আফ্রিকা থেকে আসার কারণে তার নাভি ইউরোপীয়দের থেকে তিন সেন্টিমিটার বেশি উঁচুতে৷ এর ফলে বোল্টের শরীরের ‘মাধ্যাকর্ষণ বিন্দু'-ও অনেক উঁচুতে – যা তার বিশেষ দৌড়শৈলির আরেকটি কারণ৷ সব মিলিয়ে দশ থেকে বিশ পা যাবার পরই বোল্ট তার সর্বোচ্চ গতি – ঘণ্টায় প্রায় ৪৩ কিলোমিটার! – অর্জন করেন৷
বোল্ট ২০০৯ সালের যে দৌড়ে ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ডের বিশ্বরেকর্ড করেন, বার্লিনের সেই স্প্রিন্ট নিয়ে পদার্থবিদরা গবেষণা করেছেন৷ এমনকি তাদের সে বিশ্লেষণের ফলাফল ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স'এ ছাপা হয়েছে – এ বছরই৷ জার্মানির স্যুডডয়েচে সাইটুং পত্রিকা বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্তের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করে৷
আধুনিক যুগ, আধুনিক প্রযুক্তি৷ বোল্টের দৌড়ের প্রতি সেকেন্ডের দশমাংশ লেজার দিয়ে মাপা হয়েছিল৷ তা থেকে বিজ্ঞানীরা ফিনিশিং লাইন পার হওয়ার সময় বোল্টের গতি নির্ধারণ করতে পেরেছেন: সেকেন্ডে ১২ দশমিক ২ মিটার বা ঘণ্টায় ৪৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার৷ দৌড়ে বোল্টের শরীরের প্রয়োজন পড়ে ৮১৫ দশমিক ৮ নিউটন শক্তি - যা কিনা ৮৩ দশমিক ২ কিলোগ্রাম ওজন তোলার সমান৷ সবচেয়ে বেশি শক্তি – এক হাজার নিউটন – লাগে স্টার্টের সময়৷ দৌড়ের সময় চূড়ান্ত শক্তি হল ২,৬২০ ওয়াট কিংবা ৩ দশমিক ৫১ অশ্বশক্তি৷
অর্থাৎ সাড়ে তিনখানা ঘোড়ার শক্তি নিয়ে দৌড়ন ইউসেইন বোল্ট৷
এসি / এসবি (ডি প্রেসে, সাইট অনলাইন, স্যুডডয়েচে সাইটুং)