ইউরোপের দিন কি ফুরিয়েছে?
২৪ মার্চ ২০১৭রোম চুক্তি স্বাক্ষরের ৬০তম বার্ষিকী আসতে চলেছে৷ অপরদিকে ব্রেক্সিট সরকারিভাবে শুরু হবার মুখে৷ এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা কমিশনার মার্গ্রেটে ভেস্টাগার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন যে, সব সংকট সত্ত্বেও ইইউ আজও ‘‘ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য স্থানগুলির মধ্যে পড়ে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য৷''
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আগামী ২৯শে মার্চ তারিখে ৫০ নম্বর সূত্রটি কার্যকর করবেন, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিত্যাগের প্রক্রিয়া সরকারিভাবে সূচিত হবে৷ এই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সদস্যদেশ ইইউ পরিত্যাগ করছে৷ ব্রাসেলস এই অবস্থান নিয়েছে যে, ইইউ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সম্পর্ক স্থির করার আগে ব্রিটেনে ইইউ নাগরিকদের অধিকারসমূহ এবং আর্থিক সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথাবার্তা বলতে হবে৷ ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক ২৯শে এপ্রিল ইইউ নেতৃবর্গের একটি শীর্ষবৈঠক ডেকেছেন, যে বৈঠকে ব্রিটেনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার শর্তাবলী সরকারিভাবে নির্দিষ্ট করা হবে৷
ব্রেক্সিটের পর ইইউ?
এক্ষেত্রে ভেস্টাগার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধের কথা উল্লেখ করেন: ‘‘আমাদের আরো অনেক সংকট আছে এবং তাদের সংখ্যাও কম নয়৷ আমরা এ সব সংকট ইচ্ছে করে সৃষ্টি করিনি৷ কিন্তু আমরা সেই সব সংকট সমাধানের দায়িত্ব নেবার সিদ্ধান্ত নিতে পারি....এটা প্রায় গোটা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সময়৷ ইউরোপে এর আগে আর কখনো এত শান্তি ছিল না৷''
তুরস্কের সঙ্গেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুতর কূটনৈতিক সংকট চলেছে৷ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান ১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা হত্যাকাণ্ডের জন্য ডাচদের দায়ি করেছেন ও জার্মানির বিরুদ্ধে ‘‘নাৎসি পদ্ধতি'' প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন৷ এর্দোয়ানের উষ্মার কারণ হলো, তুরস্কে আগামী ১৬ই এপ্রিলের গণভোটের আগে তুর্কি রাজনীতিকদের নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিতে রাজনৈতিক জনসভা করতে দেওয়া হয়নি৷
‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য'
ইইউ কর্মকর্তারা কীভাবে এর্দোয়ানকে আরেকটু সংযত হতে বাধ্য করতে পারেন, এ প্রশ্নের জবাবে ভেস্টাগার বলেন, ‘‘সংলাপের বিভিন্ন স্তর আছে৷ (এর্দোয়ানের বিভিন্ন মন্তব্য) পুরোপুরি অকল্পনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য৷ কিন্তু যুগপৎ (দু'পক্ষের) সম্পর্কও আছে৷ কাজেই সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে৷''
‘‘তুরস্ক মিস্টার এর্দোয়ানের চেয়ে অনেক বড়'', বলে ভেস্টাগার ঘোষণা করেন৷ কিন্তু তুরস্কের ইইউ-তে যোগদানের সম্ভাবনা দিন দিন কমে আসছে: ‘‘কেননা তুমি যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে চাও, তাহলে তোমাকে কোপেনহাগেনের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে, তোমাকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হতে হবে৷''
ইউরোপে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ?
কথাটা বলছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টালিয়ার একটি জনসভায়৷ নেদারল্যান্ডসে সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর তিনি অভিযোগ করেন যে, গ্যার্ট উইল্ডার্স থেকে শুরু করে সামাজিক গণতন্ত্রী অবধি, সকলেরই এক মনোবৃত্তি, যা থেকে ‘‘শীঘ্রই ইউরোপে ধর্মভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে এবং হবে''৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য ঝুঁকি রয়েছে: এ বছর ফ্রান্স ও জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন; সেক্ষেত্রে দেখা যাবে, ইইউ-র আদি সদস্যদেশগুলিতে ‘পপুলিজম’ – যা কিনা দক্ষিণপন্থিদের নতুন নাম – সফল হবে কিনা৷ ডয়চে ভেলের ‘কনফ্লিক্ট জোন' অনুষ্ঠানে ভেস্টাগার আশাবাদিতা প্রকাশ করেন: ‘‘যে আমলে ইউরোপের রাজনৈতিক বিতর্কে একক দেশগুলির কণ্ঠ বেশি শোনা যেত, সে অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়৷ এখন প্রচুর কাজ আছে এবং সেই কাজ শুধু পপুলিস্ট বা জাতীয়তাবাদি দলগুলিকেই বদলে দেবে না; আমাদের মতো যারা ইউরোপীয় সহযোগিতায় জোরালোভাবে বিশ্বাস করেন, তাদেরও বদলে দেবে৷''
ক্যারোলাইন স্মিট/এসি