গায়ের কাঁটা ভিক্টর ওর্বান
৯ এপ্রিল ২০১৮রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অর্বানের ফিদেস পার্টি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়েছে৷ হাঙ্গেরি হচ্ছে, গণতান্ত্রিকভাবে বৈধতা পাওয়া একদলীয় শাসনব্যবস্থার একটি রাষ্ট্র – অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র আর পুটিন ও এর্দোয়ানের স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাঝামাঝি একটি অবস্থানে আছে দেশটি৷
পূর্ব ইউরোপের তারকা রাজনীতিবিদ
ওর্বানের প্রভাব যে শুধু তাঁর দেশের ১০ মিলিয়ন মানুষের উপর আছে তা নয়৷ পোল্যান্ডের শাসক দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস' পার্টি এবং চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়াও ওর্বানের আদর্শের অনুসারী৷ এই চার দেশ মিলে গড়ে ওঠা ‘ভিসেগ্রাড গ্রুপ' ব্রাসেলস বিরোধী বলে পরিচিত৷ তাদের অভিযোগ, ইউরোপ তাদের উপর নির্দেশ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে৷ ২০১৬ সালে পোল্যান্ডের ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস' পার্টির ইয়ারোস্লাভ কাচিন্সকি ওর্বান সম্পর্কে উৎসাহ নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা তাঁর কাছ থেকে শিখছি৷''
সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপের সম্পর্কের উপর হাঙ্গেরি ছাড়া আর অন্য কোনো দেশের নির্বাচনি ফলাফলের এত বড় প্রভাব পড়েনি৷ ওর্বান আগেই বলেছিলেন, ২০১৮ সাল ‘বড় লড়াইয়ের বছর' হবে৷ এখন নির্বাচনে জেতার কারণে তিনি আরও বেশি করে ব্রাসেলস বিরোধী প্রচারণা চালাবেন বলে ধরে নেয়া যায়৷
যখন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ পূর্বদিকে তার বিস্তার ঘটানো শুরু করেছে তখন থেকে ইইউ-র কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছেন অর্বান৷ ইইউ-র মানদণ্ড অনুযায়ী, ওর্বান একদলীয় শাসনব্যবস্থার পথপ্রদর্শক৷ আর বৈশ্বিক বিবেচনায় তাঁকে পুটিন, ট্রাম্প আর এর্দোয়ানের মতো স্বৈরশাসকের স্তরে ফেলা যায়৷ তাঁরা প্রত্যেকেই গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর আইনের শাসনের শত্রু৷
এদিকে, ইউরোপীয় সংসদের রক্ষণশীল দলগুলোর মৌন সমর্থনের জন্য ওর্বানের দল এতদিন ধরে হাঙ্গেরিতে সফল হয়ে আসছে৷ কারণ ইউরোপীয় সংসদের ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে সমাজতন্ত্রীদের দূরে রাখতে ‘ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি' বা ইপিপি, বিশেষ করে জার্মানির খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের, ওর্বানের ফিদেস পার্টির প্রতিনিধিদের ভোট প্রয়োজন৷
ইইউ পশ্চিম এবং ইইউ পূর্ব – প্রয়োজন মধ্যস্থতা
ইইউ যদি নিজেদের ভেতরকার সংকট দূর করতে চায় তাহলে আগে সাম্প্রতিক অতীত বুঝতে হবে৷ পূর্ব আর পশ্চিম ইউরোপের সেই অতীত ছিল ভিন্ন৷ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি কিংবা সার্বিয়ায় স্বৈরতান্ত্রিক ঘরানার শাসনব্যবস্থার কারণ সেসব দেশের মানুষ সাবেক সোভিয়েত আমল থেকে এমন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত৷
তবে চুক্তি চুক্তিই৷ হাঙ্গেরি আর পোল্যান্ড যেহেতু ইইউ-তে যোগ দিয়েছে তাই তাদের ইইউ-র নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে৷ কারণ যোগ দেয়ার সময় তাদের এ সব জানা ছিল৷ হয়ত এখনও পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে মধ্যস্থতার সময় আছে৷ তবে তারপর ফুটবলে যেমন বেশি ফাউল করলে লাল কার্ড দেয়ার নিয়ম, সেটি প্রয়োগ করতে হবে৷
ফল্কার ভাগেনার/জেডএইচ