1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো কেন চীন ছেড়ে ভিয়েতনামে?

৯ জুন ২০২২

গত কিছুদিনে ইউরোপের কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চীন ছেড়ে ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকেছে৷ এর কারণ কী? এ কারণে চীনের অর্থনীতিতে কি বিপর্যয় নামতে পারে?

https://p.dw.com/p/4CTcF
Vietnam | Fabrikarbeit in Hanoi
ছবি: Danh Lam/ANN/picture alliance

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ সময়েও ভিয়েতনাম ছিল উজ্জ্বল ব্যাতিক্রম৷ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে মহামারির সময়েও খুব উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে তাদের৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির জিডিপি এ বছর শতকরা ৫.৫ ভাগ বাড়বে বলে বিশ্ব ব্যাংকের ধারণা৷

করোনা মহামারির আগেই অবশ্য ভিয়েতনামের অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগে৷ মহামারির সময়ে উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকায় ইউরোপের কিছু বড় বড় ফার্ম সে দেশে ব্যবসা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে৷ জার্মানির গাড়ির যণ্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ব্রোজের ১১টি কারখানা রয়েছে চীনে৷ কিন্তু তারা ঠিক করেছে আগামীতে পণ্য উৎপাদনের ঠিকানা হিসেবে ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে বেছে নেবে৷ গত ডিসেম্বরে ডেনমার্কের লেগো কোম্পানি জানিয়েছে তারাও এক বিলিয়ন ডলারের কারখানা খুলবে ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় শহর হো চি মিন সিটির দক্ষিণের বাণিজ্যিক অঞ্চলে৷

ইউরোপের বাণিজ্যে চীনবিমুখতার ইঙ্গিত কেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের কিছু প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ চীন থেকে সরে যাওয়ার কারণ আসলে কমপক্ষে তিনটি৷

প্রথম কারণ অবশ্যই পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি৷ এক সময় যে দেশের প্রতি ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহী হওয়ার প্রধান কারণ ছিল শ্রমিকের স্বল্প মজুরি এবং সেই সুবাদে অল্প উৎপাদন-ব্যয়, সেই চীনে গত ১০ বছর ধরে শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে৷ মুডি'জ অ্যানালিটিক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে চীনে শ্রমিকের বার্ষিক মজুরি ছিল মাত্র পাঁচ হাজার ১২০ ইউরো, ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৬৭০ ইউরো৷ শ্রমিকের মজুরির এই উল্লম্ফনের ফলে পণ্যের উৎপাদন-ব্যয়ও বেড়েছে৷ এ কারণে শুধু ইউরোপ নয়, বিশ্বের অনেক দেশই আরো কম খরচে পণ্য তৈরি হয় এমন দেশের দিকে ঝুঁকছে৷

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে ইউরোপের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতির বিষয়টির উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকেরা৷ শিনজিং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইগুর মুসলমানদের নির্যাতনের কারণে চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এর পাল্টা ব্যাবস্থা হিসেবে চীনও ইইউ-র কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দু পক্ষের সম্মতিতে হওয়া বিনিয়োগ বিষয়ক চুক্তিকেও হিমঘরে পাঠিয়ে দেয়৷ বিশ্লেষকদের বড় একটি অংশ মনে করেন, ইইউ-এর সঙ্গে সম্পর্কের এই অবনতির প্রভাবও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে পড়েছে৷

চীনের দিক থেকে ইউরোপের কিছু প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ ভিয়েতনাম বা অন্য কোনো দেশের দিকে সরে যাওয়ার তৃতীয় কারণ তাদের ‘জিরো কোভিড' নীতি৷ উহানে কোভিড-১৯-এর প্রাদূর্ভাবের পর থেকেই মহামারি রোধে সর্বাত্মক প্রয়াস শুরু করে চীন৷ কোভিড পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল হওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরছিল৷ তবে সম্প্রতি আবার কোভিড সংক্রমণ দেখা দেয়ায় আবার বিভিন্ন শহরে লকডাউন শুরু হয়৷ এমনকি রাজধানী বেইজিংয়েরও বড় একটা অংশ লকডাউনের কারণে অবরুদ্ধ ছিল কয়েক মাস৷ ফলে জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দেশের অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব ব্যাপকভাবেই পড়েছে৷

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চীনের স্বাভাবিক বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫ হলেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে তা কমে ৪.৮-এ নেমেছে৷ ফিচ সলিউশনের ‘এশিয়া কান্ট্রি রিস্ক'-এর প্রধান রাফায়েল মক মনে করেন, মূলত এসব কারণেই চীন থেকে সরে ভিয়েতনাম এবং ভিয়েতনামের মতো স্বল্প খরচে পণ্য উৎপাদনে সক্ষম দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে ইউরোপের কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান৷

চীনের অর্থনীতির এই খারাপ সময়ে ভিয়েতনাম এগিয়েছে তরতরিয়ে৷ বেশ কয়েকটি কারণে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়েছে তাদের প্রতি৷ ভিয়েতনামে শ্রমিকের মজুরি এখনো চীনের চেয়ে অনেক কম৷ গত কয়েক বছরে সে দেশের সমাজতান্ত্রিক সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন-ব্যয়ও অনেকটা বাড়িয়েছে৷ এসব কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নও দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যে আগের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রহী৷ ২০২০  সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি করে ইইউ৷ নয় কোটি ৬২ লাখ মানুষের দেশটিতে ইউরোপের কিছু ফার্মের বিনিয়োগে আগ্রহী হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ৷ ২০১২ সালে ইইউ-ভিয়েতনাম যৌথ বাণিজ্য ছিল ২০.৮ বিলিয়ন ডলারের, ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ বিলিয়ন ডলার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য