আরেকটু আন্তরিকতা কি সম্ভব?
২০ নভেম্বর ২০১৭কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার এবার সপ্তম বছর৷ মেলার আয়োজক বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি৷ ব্যবস্থাপনায় কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এবং সহযোগিতায় বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো৷ কিন্তু প্রতিবার বাংলাদেশ বইমেলা যেখানে হয়, সেই রবীন্দ্রসদন চত্বরে নতুন মঞ্চ নির্মাণের কাজ জারি থাকায় মেলাকে এবারে ঠাঁইনাড়া হয়ে যেতে হয়েছে রবীন্দ্র দনের উল্টোদিকে মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে৷ এছাড়া বার বার তারিখ পিছনোর ফলে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দু'দিন এবং বাংলাদেশ বইমেলার প্রথম দু'দিন এবার এক হয়ে গেছে৷ ফলে এই বইমেলা নিয়ে কলকাতার লেখক-পাঠকের উৎসাহ থাকলেও, শুরুর দিকে একেবারেই লোক হয়নি মেলায়৷
তার ওপর হঠাৎ তৈরি হওয়া নিম্নচাপের কারণে দু-তিন দিন নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় বিপত্তি আরও বেড়েছে৷ শনিবার বিকেলে মোহর কুঞ্জে গিয়ে দেখা গেল, গাছ-গাছালিতে ভরা বাগানে তাও বা কয়েক জোড়া নারী-পুরুষ ইতস্তত বসে আছেন, বইমেলায় প্রায় কোনো লোকই নেই! বৃষ্টি পড়ে মেলার মাঠ কাদায় ভরা৷ আগের দিন সন্ধ্যায় নাকি কয়েকজন পা পিছলে পড়তে পড়তে বেঁচে গেছেন! পড়েও গেছেন কেউ কেউ৷ জানালেন ঢাকার ‘মূর্ধ্য ণ' প্রকাশনীর স্টলে যিনি বসেছিলেন, সেই সুজয় ঘোষ৷ সুজয় কলকাতার লোক, সেই কারণে সম্ভবত তিনি আরও বেশি লজ্জিত যে, বইমেলাকে মোহরকুঞ্জে সরিয়ে আনা হয়েছে, অথচ যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়নি তার জন্য৷ বৃষ্টি হয়ে মেলার মাঠে কাদা হয়েছে, কিন্তু যদি বইয়ের স্টলগুলোর সামনে কার্পেট গোছের কিছু বিছিয়ে অন্তত হাঁটাচলার ব্যবস্থা করা যেত, তা হলেও উপকার হতো, বললেন সুজয়৷ আরেকটা কথাও তিনি বললেন যে, এই মোহরকুঞ্জে চা-জল, ইত্যাদির কোনো ব্যবস্থাই নেই৷ আছে, কিন্তু রাস্তার ওপারে৷ সেদিক থেকে একজন চা ওয়ালাও এপারে আসছেন না৷ ফলে অসুবিধে হচ্ছে৷
বাংলা একাডেমীর স্টলে বসেছিলেন মীর রেজাউল কবির৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, তাঁদের বিক্রিবাটা ভালোই হচ্ছে, যদিও ভিড় কম৷ আর বৃষ্টি, কাদা — এ সব নিয়ে হয়ত সৌজন্যবশতই কোনো অভিযোগ করতে চাইলেন না তিনি৷ হাসতে হাসতেই বললেন, এটা প্রকৃতির উপহার৷ প্রকৃতি দিয়েছে যখন, মেনে নিতেই হবে৷ কিন্তু মীর রেজাউল কবির যেটা বললেন না, সেটা অনেক প্রকাশকই আড়ালে বলছেন যে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই অকাল বর্ষণের কথা বলাই ছিল৷ তা হলে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না! অন্তত মেলার মাঠে বালি ছড়িয়ে কাদা আটকানোর বন্দোবস্ত করাই যেত! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বললেন, বাংলাদেশ বইমেলার ব্যাপারে এই কলকাতা শহর যদি আন্তরিক হয়, তা হলে মেলার একটা নির্দিষ্ট দিন ঠিক করাও উচিত৷ তাতে বই বিক্রেতা, লেখক, পাঠক, সবারই সুবিধে৷
গত বছরের বাংলাদেশ বইমেলায় ৫২টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছিল৷ এই বছর তাদের সংখ্যা কমে হয়েছে ৪৪টি৷ তার সঙ্গে আছে বাংলা একাডেমী এবং শিশু একাডেমী৷ মেলায় বই কেনাবেচার পাশাপাশি প্রতিদিনই থাকছে সাহিত্যবিষয়ক আলোচনা, লেখক পাঠক মুখোমুখি সাক্ষাৎ, কবিতা পাঠের আসর এবং বাংলাদেশ ও কলকাতার শিল্পীদের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ মঙ্গলবার বিকেলে এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং বিশিষ্ট কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরি৷ উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম এবং কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চ্যাটার্জি৷ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ ত্রিদিব চ্যাটার্জি তাঁর ভাষণে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত নানা ধরনের বই নিয়ে ঢাকাতেও কলকাতা বইমেলা করার অনুরোধ জানান৷ তিনি বলেন, কলকাতার সব প্রকাশক এবং লেখক, কবি, সাহিত্যিক এ ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহী৷ যে কারণে গত দু'বছর ধরেই তাঁরা এই দাবি জানিয়ে আসছেন৷ এ প্রসঙ্গে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত তৌফিক হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি নিয়ে তিনি ঢাকার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অবশ্যই আলোচনা করবেন৷
এবার মেলা প্রাঙ্গনেই আলাপ হলো বাংলাদেশের প্রকাশক নাফি নজরুলের সঙ্গে৷ তিনি হদিস দিলেন, বইমেলার বাইরেও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, এবং কলকাতা থেকেও প্রকাশিত হওয়া সমস্ত বাংলা বইয়ের অনলাইন ঠিকানার৷ ‘রকমারি ডট কম' নামে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে লেখক, বইয়ের নাম বা প্রকাশকের নাম ধরে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে সব বাংলা বই৷ আনানো যাবে অনলাইনে৷