বাবা-মার যাবজ্জীবন
২৭ নভেম্বর ২০১৩গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে তদন্তের অভিমুখ নানা খাদ ঘুরে অবশেষে মেয়ের বাবা-মাই খুনি! এই বলে রায় দিয়ে গাজিয়াবাদের বিশেষ আদালতের বিচারক মেয়ের হত্যাকাণ্ডের অপরাধে দাঁতের ডাক্তার বাবা রাজেশ তলোয়ার এবং মা নূপুর তলোয়ারকে যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ দেন৷ তবে এই রায়কে একপেশে বলে মন্তব্য করেছেন দম্পতিটি৷ মিডিয়ার প্রচার রায়কে প্রভাবিত করেছে বলে আসামি পক্ষের অভিযোগ৷ তাঁদের আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আপিল করবেন বলেও জানান৷
এদিকে এই রায়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয় আইনজ্ঞ মহলে৷ কেউ কেউ বলছেন ন্যায়বিচার, কেউ আবার বলছেন স্রেফ পারিপার্শিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে এই রায় অদ্ভুত৷ মানবতাবাদী এক আইনজীবীর মতে, পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে বাবা রাজেশ খুনি হওয়ার পরও, মা নূপুরকে খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা অন্যায়৷ আইনজীবীদের একাংশ তাই এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় নানা ফাঁক-ফোকর রয়ে গেছে বলে মনে করেন৷
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ঐ দম্পতি ২০০৮ সালে দিল্লির লাগোয়া উত্তর প্রদেশের নয়ডায় নিজ বাড়িতে ১৪ বছরের কিশোরী মেয়ে স্কুল ছাত্রী আরুষি এবং গৃহভৃত্য হেমরাজকে নিজের হাতে খুন করেন৷ আরুষির শোবার ঘরে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়৷ তার কণ্ঠনালি কাটা ছিল৷ খুনের পর তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অপরাধেও দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়৷
প্রাথমিক তদন্তে রাজেশ তলোয়ার তাঁর গৃহভৃত্যকে সন্দেহ করে পুলিশকে জানান৷ পরের দিন তলোয়ারের বাড়ির ছাদে চাদর মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায় গৃহভৃত্য হেমরাজের মৃতদেহ৷ পুলিশের সন্দেহ, পরিচিত কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত৷ পারিপার্শিক অবস্থার বিচারে বাইরের কেউ এ কাজ করতে পারে না৷ ঐ অভিশপ্ত রাতে বাড়িতে ছিল মাত্র চারজন৷ আরুষি ও তাঁর বাবা-মা এবং পরিচারক হেমরাজ৷ গ্রেপ্তার করা হয় আরুষির বাবা-মাকে৷ কিন্তু সন্দেহাতীত সাক্ষ্য-প্রমাণ না পেয়ে প্রথম তদন্ত পর্ব গুটিয়ে নেয়া হয়৷ যদিও তলোয়ার দম্পতির দিকে সন্দেহ থেকেই যায়৷
দ্বিতীয় পর্বের তদন্তে সিবিআই-এর নতুন তদন্তকারী দল তদন্ত প্রক্রিয়ায় ‘এলিমিনেশন পদ্ধতির' আশ্রয় নেয়৷ অর্থাৎ, যেগুলি সম্ভব নয়, সেগুলিকে বাদ দিয়ে যেটা বাকি থাকবে, সেটাই মেনে নেয়া হয়৷ গ্রেপ্তার করা হয় রাজেশ তলোয়ারের ক্লিনিকের কর্মচারি কৃষ্ণ, পাশের বাড়ির পরিচারক রাজকুমার এবং অন্য একজনকে৷ পরে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়৷ ২০১২ সাল থেকে তলোয়ার দম্পতিকে মূল অভিযুক্ত ধরে মামলার বিচার পর্ব নতুন করে শুরু হয়৷ এরপরও গোটা বিচার পর্বের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়৷
কী ঘটেছিল সেই রাতে? কেন খুন হতে হলো আরুষিকে তাঁর বাবা-মায়ের হাতে? গভীর রাতে আরুষির শোবার ঘরে একটা শব্দ পেয়ে আরুষির বাবা সেই ঘরে গিয়ে গৃহভৃত্য হেমরাজ এবং আরুষিকে দেখতে পান আপত্তিকর অবস্থায়৷ বাবা হিসেবে সেটা সহ্য করতে না পেরে গলফ স্টিক দিয়ে হেমরাজের মাথায় জোরে আঘাত করেন এবং দ্বিতীয় আঘাতটা পড়ে তাঁর মেয়ের মাথায়৷ দু'জনেই সংজ্ঞা হারায়৷ তারপর ডাক্তারের সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে আরুষি এবং হেমরাজের গলার নলি কাটেন৷ অবশ্য খুনের সেই অস্ত্র গলফ স্টিক বা সার্জিক্যাল ছুরি উদ্ধার করা যায়নি৷ আরুষির বাবা-মা হেমরাজের মৃতদেহ টানতে টানতে ছাদের কোণায় রেখে আসেন৷ তারপর সারা রাত ধরে রক্তচিহ্ন সাফ করেন ঐ দম্পতি৷