শ্রমবাজারে আরবের মেয়েরা
২ জুলাই ২০১৩বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, সৌদি আরবের ১২ শতাংশ মেয়ে পেশাজীবী৷ তবে সে তুলনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থা ভালো৷ দেশটির মেয়েদের মধ্যে অর্ধেকই কর্মজীবী৷ তবে সমগ্র আরব জগতে মাত্র এক তৃতীয়াংশ নারীর নিজস্ব উপার্জন রয়েছে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৬২ শতাংশ মেয়ে অর্থ উপার্জন করে থাকেন৷
জনসম্পদের অপচয় রোধ করতে হবে
আরব ইন্টারন্যাশনাল উইমেন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা হাইফা ফাহোউম আল কাইলানি এই প্রসঙ্গে বলেন, এই অবস্থা থেকে এখন বের হয়ে আসতে হবে আরবের মেয়েদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আরব বিশ্ব অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে না, যদি জনসংখ্যার অর্ধেককেই বাইরে রাখা হয়৷ বিশাল এই জনসম্পদের অপচয় রোধ করতে হবে৷''
বাহরাইনের নারী ব্যবসায়ী আফনান রাসিদ আল জায়ানি বলেন, তাঁর দেশ সুশিক্ষিত ও সক্রিয় নারী কর্মীর ওপর নির্ভরশীল৷ বাহরাইনের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি অভিবাসী৷ অর্থাৎ প্রকৃত বাহরাইনিরা স্বদেশেই সংখ্যালঘু৷ কর্মক্ষেত্রেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ কর্মজীবীদের মাত্র ২৩ শতাংশ বাহরাইনি৷
অর্জিত অর্থের বিরাট অংশ বাইরে চলে যায়
সুতরাং অর্জিত অর্থের এক বিরাট অংশই বাইরে চলে যায়৷ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা শ্রমিকরা তাঁদের আয়ের একটা বড় অংশই স্বদেশে পাঠিয়ে দেন৷
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই ধরনের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য বাহরাইনের মেয়েদেরও শ্রমবাজারে ঢুকতে হবে৷ এখন ৮ শতাংশ বাহরাইনি মেয়ে পরিবারের বাইরে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন৷ মেয়েরা আরো বেশি করে কর্মজগতে প্রবেশ করলে দেশের অর্থ দেশেই থাকবে৷ এছাড়া বাহরাইনিদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে৷ উন্নত হবে শিক্ষার মান, বৃদ্ধি পাবে ছেলে-মেয়েদের কাজের সুযোগ সুবিধা৷ তাই বলা যায়, মেয়েদের পেশার জগতে আসাটা রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থার জন্যই বেশি জরুরি, মনে করেন আল জায়ানি৷
একই মত পোষণ করেন গাবি ক্রাতোচভিল৷ আরবের প্রভাবশালী মেয়েদের নিয়ে একটি বই লিখেছেন এই ইসলামবিদ৷ তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় অর্থব্যবস্থাকে সচল করতে হলে অন্যান্য দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে৷ শুধু তেল, গ্যাস ও কাঁচামালের দিকে নয়৷ আর মেয়েদের অংশ গ্রহণ করা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়৷
আরবের মেয়েরা পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না
গাবি গাবি ক্রাতোচভিল লক্ষ্য করেছেন, আরব বিশ্বের মেয়েরা আর পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না৷ কর্মজগতে ঢোকার জন্য তাঁরা এখন ভালোভাবে সজ্জিত হচ্ছেন৷ ‘‘যে সব মেয়ে শীর্ষ পদে আসতে পেরেছেন, কিংবা নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তুলেছেন, তাঁরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন'', বলেন এই ইসলামবিদ৷
কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বদা তাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ ম্যানেজমেন্টে নতুন নতুন কলাকৌশল শিখতে উদগ্রীব তাঁরা৷ ক্রাতোচভিলের ভাষায়, ‘‘জার্মানির তুলনায়, শীর্ষপদের জন্য প্রস্তুতিমূলক সেমিনারে যোগ দিতে আরব মেয়েদের উৎসাহ উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো৷''
ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে
বাহরাইনে মেয়েদের কর্মজগতে সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেই ১৯২৮ সালে৷ এখন একে আরো চাঙা করে তুলতে হবে৷ ভূগর্ভস্থ তেল ও গ্যাস কয়েক বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে৷ আর তাই শ্রমবাজারকে উন্মুক্ত করতে হবে৷ অনেক মেয়ে লেখাপড়ার জন্য বিদেশে যান৷ দেশে ফিরে এক সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন৷ কিন্তু এই সাফল্যই যথেষ্ট নয়৷ ‘‘আমরা আরো মেয়েকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ও শীর্ষপদগুলিতে দেখতে চাই'', বলেন হাইফা ফাহোউম আল কাইলানি৷ তবে আরো একটা কারণে আরবের মেয়েদের শ্রমবাজারে প্রবেশ করা উচিত বলে মনে করেন প্রগতিশীল এই নারী৷
বলেন, ‘‘এর ফলে সুন্দর এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে আরব বিশ্ব৷ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বনির্ভরশীল মেয়েরা তাঁদের বেতন পরিবারের কাজে লাগাবেন৷ ব্যয় করবেন সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে৷ অর্থাৎ বিনিয়োগ করা হবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে৷''