জাতীয় সংগীতের বিশ্বরেকর্ড
১৭ মার্চ ২০১৪রবিবার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি ও তার ক্যাপশন থেকে জানা যায় , লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত আয়োজনের জন্য ইসলামী ব্যাংক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তিন কোটি টাকা অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছেন৷
বিষয়টি নিয়ে ব্লগ আর ফেসবুকে আলোচনা হচ্ছে৷ আমারব্লগে শিমুল জিতুর পোস্টের শিরোনাম, ‘‘তিন কোটি টাকা: আমার বিবেকের দাম এত কম?'' তিনি লিখেছেন, ‘‘বাহ! প্রধানমন্ত্রী বাহ! জাতির পিতার জম্মদিনে বড় কষ্ট হচ্ছে আপনার এই বিবেকহীনতা দেখে৷ তিন কোটি টাকা, মাত্র তিন কোটি টাকা আপনি হাত পেতে নিলেন ইসলামী ব্যাংক থেকে, যারা আমার দেশের মানুষ পোড়ানোতে অর্থায়ন করে, যাদের কিনে দেওয়া ককটেলে আমার বোন আহত হয়, যাদের টাকায় গড়ে উঠে জঙ্গিদের রাজ্য, যারা আমার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসে না, তাদের টাকা দিয়ে এখন আমরা উৎসব করবো? বিশ্ব রেকর্ড করবো? আরে আমরা ১৭ কোটি মানুষ, আপনার মানুষ, হাত পাতলে আমাদের কাছে পাততেন, আমরা ২ টাকা করে দিলেও জামায়াতের টাকার ১০ গুন বেশি অর্থ পেতেন, আমরা ভালোবেসে দিতাম৷ আমরা সহজ সরল মনে হেসে কেঁদে দিতাম আপনাকে, আমরা খুশি হতাম৷ কিন্তু ম্যাডাম আজ আঘাতটা যে আপনি আমাদের বুকে দিলেন, আমাদের অহংকার আমাদের আত্মসম্মান যে আজ ধুলোয় মিশে গেল৷'' এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমাও করবেন না বলে জানিয়েছেন৷ ‘‘তিন কোটি টাকায় আমার যেই সম্মান আপনি নষ্ট করলেন তার জন্যে আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী৷''
সামহয়্যার ইন ব্লগে কাজল আব্দুল্লাহ লিখেছেন ‘‘ইসলামী ব্যাংকের টাকায় আমার জাতীয় সংগীতের বিশ্বরেকর্ডের দরকার নাই৷'' তিনি তাঁর পোস্টে জাতীয় সংগীতের এই অংশটি উল্লেখ করেন,
...মা তোর বদন খানি মলিন হলে
আমি নয়ন
ও মা আমি নয়ন জলে ভাসি
সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালোবাসি
এরপর তিনি লেখেন, ‘‘আজ আমার চোখে অশ্রু, আমাদের চোখে অশ্রু, কারণ আমাদের মায়ের বদনখালি আজ মলিন৷''
ব্লগার কাজল আব্দুল্লাহ ইসলামী ব্যাংকের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বিশ্বরেকর্ডের দরকার নাই....শত ব্যাখ্যায়, শত যুক্তিতে ইসলামী ব্যাংকের টাকায় জাতীয় সংগীতের বিশ্বরেকর্ডের পক্ষে সাফাই হবে না৷ শত গ্যালন পারফিউমেও এই চেকের দূর্গন্ধ হাত থেকে দূর হবে না৷''
একই ব্লগে ইমতিয়াজ ইমন লিখেছেন ‘‘ইসলামী ব্যাংকের দেশপ্রেম জাগ্রত হয়েছে৷ আর তাদের এই জাগ্রত দেশপ্রেম দেখে আমাদের চেতনাধারী সরকারও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন৷ তাই মহান রাজাকারদের অর্থের মূল উৎস ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করতে সরকার মহাশয় দ্বিধাবোধ করেননি৷''
এদিকে, এই ঘটনায় ব্লগার আরিফ জেবতিক তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভাগ্যিস বেকুবদের দাবি অনুসারে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত বলে অভিযুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে তদন্ত চালানো হয়নি৷ নইলে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে জাতীয় সংগীত – আমাদের কিছুই করা হয়ে উঠত না৷'' এছাড়া জেবতিক তাঁর ফেসবুকে লুৎফর রহমান রিটনের লেখা একটি ছড়াও শেয়ার করেন৷
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ