আমলা-জনপ্রতিনিধি সম্পর্কের রসায়ন
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশে আমলা ও জনপ্রতিনিধির সম্পর্কটি আলোচনায় এসেছে৷ দুই পক্ষের মধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে বিরোধও৷ জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে আমলাদের ক্ষমতা এখন বেশি কিনা এমন প্রশ্নও উঠছে৷
জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে সচিবরা
গত বছরের ২০ এপ্রিল একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে করোনাকালীন ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ৫৩ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয় সরকার৷ এাণ বিতরণে অনিয়মের প্রেক্ষিতে জনপ্রতিনিধিদের এড়িয়ে সরকার আমলাদের এ দায়িত্ব দিয়েছে- এমন বিশ্লেষণও উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে৷
সংসদ সদস্যের হুমকি
গত বছর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনের সময় ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷ সেসময় ইউএনও ও সাংসদের একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ভাইরাল হয়৷ বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নিক্সন চৌধুরীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়৷ পরবর্তীতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মামলা করেন তার বিরুদ্ধে৷
‘সাংসদেরা সচিবদের ওপরে’
চলতি বছরের এপ্রিলে করোনা মহামারি মোকাবিলায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়৷ জুনে এ নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য৷ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুযায়ী সাংসদেরা সচিবদের ওপরে৷ এটা খেয়াল রাখতে হবে৷’’
রাজনীতিবিদরা তৃতীয় লাইনে!
সংসদে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করে নিচ্ছেন৷ দেশ চালাচ্ছেন জগৎ শেঠরা৷ দেশ চালাচ্ছেন আমলারা৷ আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি৷’’ তার মতে, ‘‘দেশে এখন রাজনীতি নেই৷ দেশ রাজনীতিশূন্য৷ রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়৷’’
ফেরাউনও পারে নাই!
জুনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমলাতন্ত্র মন্দ নয়, আমলাতন্ত্র ভালো৷ আমলাতন্ত্রের বিকল্পও তো নাই৷ (এর বিকল্প) কেউ বাইর করতে পারে নাই৷ সোভিয়েতও পারে নাই, চীনারাও পারে নাই; ফেরাউনও পারে নাই, খলিফারাও পারে নাই।” কয়েকদিন না যেতেই আরেক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী উন্নয়নকাজের তদারকি কার্যক্রম আমলাতন্ত্রকে জোরদার বাধা হিসেবে বর্ণনা করেন৷
বরিশালে সংঘাত
১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যানার অপসারণ নিয়ে ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে৷ পুলিশের গুলি ও মারামারিতে ৩০ জনের মতো আহত হন৷ এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে হুকুমের আসামি করে দুইটি মামলা করা হয়৷ অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং ওসিসহ ৪০-৫০ জন পুলিশ ও আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করা হয়৷
বরিশালে সমঝোতা পর্ব
ঘটনার পর অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে হামলার বিষয়টিকে ‘দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি’ অভিহিত করে মেয়রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়৷ আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইউএনও ও ওসির অপসারণ দাবি করে৷ তবে ২২ আগস্ট রাতে দুই পক্ষ বৈঠক করে সমঝোতার কথা জানায়৷ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমঝোতা তো সমঝোতা৷ সমঝোতা হয়ে গেছে আবার কী! কাজ করতে গেলে অনেক সময় অনেক কিছু হয়৷’’