আবার ব্লাড ব্যাঙ্কে দূষিত রক্ত
৯ জুলাই ২০১৮একটা সময়, যখন কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে নেশাখোরদের খুব উপদ্রব, নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য রক্ত বিক্রি করার হিড়িক উঠেছিল৷ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ না মেনেই ওই নেশাড়ুরা তখন রক্ত দিতো৷ সেই সময় এইডস্ রোগও ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত এবং সেই রোগজীবাণুর অন্যতম উৎস ছিল ইঞ্জেকশনের দূষিত সিরিঞ্জ, যা ব্যবহার করতো নেশাখোরেরা৷ এছাড়া হেপাটাইটিস বি ও আরও একাধিক রক্তবাহিত রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছিলো ওই দূষিত রক্ত৷ যে কারণে ব্লাড ব্যাঙ্কে অর্থের বিনিময়েরক্ত সংগ্রহ কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল৷ এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন ক্লাব ও সামাজিক সংগঠন৷ এরাই বছরভর রক্তদান শিবির করে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের জোগান চালু রাখার ব্যবস্থা করেছিল। বিশেষ করে গরমকালে, উৎসবের সময় এবং৷কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, যখন চাহিদার থেকে রক্তের জোগান কম থাকে৷
কিন্তু এই রক্তদান শিবির থেকেই শুরু হয়েছে সমস্যা৷ কিছু অতি উৎসাহী ক্লাব এবং সংগঠন নিজেদের উদ্যোগ সফল করতে উপহারের বিনিময়ে রক্তদান চালু করেছে৷ অর্থাৎ রক্ত বিক্রিরই নামান্তর৷ কী ধরনের উপহার? মূলত সাংসারিক জিনিস৷ প্রেশার কুকার, স্টিলের থালা-বাসন, হাঁড়ি-কড়াই, গামলা-বালতি থেকে শুরু করে এলাকার ফুটপাথে ব্যবসা করার জন্য ‘কিয়স্ক' পর্যন্ত৷ স্বাভাবিকভাবেই উপহার নেওয়ার উৎসাহ প্রবল এবং সেই লোভে ফের রক্তদাতারা নিজেদের শরীরে পুষে রাখা রোগ গোপন করে রক্ত দিচ্ছে৷ সেই দূষিত রক্ত জমা পড়ছে ব্লাডব্যাঙ্কে৷ ব্যবহারের আগে রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ছে যে, সেই রক্তে রোগজীবাণু আছে, ব্যবহারের অযোগ্য৷
আসলে পশ্চিমবঙ্গে রক্ত সংগ্রহের আগে কোনো ডাক্তারি পরীক্ষার নিয়ম নেই৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন শহরের প্রথম বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির পুরোধা ডি আশিস৷ তিনি জানাচ্ছেন, রক্ত নেওয়ার আগে রক্তদাতার ওজন এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়৷ এছাড়া মৌখিকভাবে জানতে চাওয়া হয়, রক্তদাতার নির্দিষ্ট কিছু সংক্রামক রোগ আছে কিনা৷ পুরস্কারের লোভে এখানেই মিথ্যে বলছেন রক্তদাতারা, যাঁদের শরীরে হয়ত থ্যালাসেমিয়া, কিংবা হেপাটাইটিস, অথবা আরও মারাত্মক এইডসের জীবাণু আছে৷
ডি আশিস জানাচ্ছেন, এই পুরস্কারের বিনিময়ে রক্ত সংগ্রহের কারণে রক্তদানের যে সামাজিক দায়িত্ব, সেটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷ বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকায় রক্তদান শিবির করাটাই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে৷ রক্তদানের যে সেবামূলক আদর্শ, তার আর কদর হচ্ছে না৷ লোকে তাকিয়ে বসে আছে, কোথায় কী উপহার দেওয়া হচ্ছে, সেই দিকে৷ ফলে পশ্চিমবঙ্গে যেখানে এমনিতেই রক্তের জোগানে ঘাটতি আছে, সেখানে রক্ত সংগ্রহ আরও কমছে৷ দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে৷