1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার কতিপয় পুলিশের অপতৎপরতা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ অক্টোবর ২০২২

কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্যাতন, হুমকি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি, টাকা না পেয়ে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়৷

https://p.dw.com/p/4Hucy
Bangladesch Polizei
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/Z.H. Chowdhury

এমন প্রবণতা দূর করতে পুলিশকে মানসিক প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে৷ তারপরও কতিপয় পুলিশের অপতৎপরতা থামছে না৷

সর্বশেষ একটি ঘটনায় দেশের তিন এলাকা জড়িয়ে পড়েছে৷ বুধবার নারায়ণগঞ্জ থেকে এক নারী ও এক শিশুকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করলে অন্য কাহিনি বেরিয়ে আসে৷ তাদের তুলে নেয়ার একদিন পর ওই নারীর জামাতা শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গির ভুঁইয়া  সংবাদ সম্মেলন করেন চট্টগ্রামে৷ তিনি তখন চট্টগ্রামে থাকায় সেখানেই তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন৷ তদন্তে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের তুলে এনেছিল মিরপুর থানা পুলিশ৷ আবার সংবাদ সম্মেলন করার পর ওই নারীকে ঢাকার কদমতলী থানার একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ এরই মধ্যে মিরপুর থানার তিন পুলিশ সদস্যকে এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ওই নারীকে আটক করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ নারায়ণগঞ্জ থেকে  তুলে তাদের মিরপুরে নিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ৷ পরে তিন লাখ টাকায় রফা হয় বলে দাবি করেন জাহাঙ্গির ভুঁইয়া ৷
গত সেপ্টেম্বরে পল্লবী থানা এলাকায় খলিলুর রহমান নামে এক পথচারীর পকেটে ইয়াবা দিয়ে আটক করে পুলিশ৷ তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলাও করে তারা৷ পরে অবশ্য ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে দুই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়৷

পুলিশ এখন হেন অপরাধ নেই যা করে না: নূর খান

এদিকে গত জুনে ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে ডাকাতি মামলার বাদির পরিবারের এক নারীকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ শুধু নির্যাতন নয়, তার পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হজার টাকা আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগও উঠেছে৷

কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা যায়, পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আসছে ঘুস নেয়া, চাঁদাবাজি, ঘুস না পেয়ে মিথ্যা মামলা দেয়া,  আসামি বা অপরাধীর পক্ষে অপবস্থান নেয়া, নানাভাবে হয়রানি, বিয়ের পর স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ না দেয়া, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মামলা দায়েরের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া, জমি-জমা সংক্রান্ত এবং পুলিশ সদস্যের হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তা চাওয়ার অভিযোগ ৷ ঘুস ও হয়রানির পর ভরণপোষণ না দেওয়ার জন্য পুলিশ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগই বেশি৷

পুলিশ সদর দপ্তরে ২০১৮ সালে ১৪ হাজার ৪০২ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে৷ ২০১৯ এই সংখ্যা বেড়ে হয়ে যায় ১৪ হাজার ৫১২৷ ২০২০ সালে আরো বেড়ে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১২৷ ২০২১ সালে ১৬ হাজার ৪১৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে৷

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের হিসেবে দেখা যায় প্রতি বছর গড়ে ৯ হাজারের মতো পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন অভিযোগে গুরু এবং লঘু দণ্ড দেয়া হয়৷ তবে এই শাস্তির মধ্যে চাকরিচ্যুতি খুবই কম৷ সাধারণভাবে বদলি, ভর্ৎসনা এসবের মধ্যে সীমবাদ্ধ৷  শাস্তিপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল পদ মর্যাদার৷ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা শাস্তির আওতায় এসেছেন এমন নজির হাতে গোণা যায়৷

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাধারণ সম্পাদক নূর খান বলেন, " পুলিশ এখন হেন অপরাধ নেই যা করে না৷ তারা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায়ও জড়িয়ে পড়ছে৷ এছাড়া ঘুস আদায় করতে পুলিশের অপহরণ, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, হুমকি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷”

তার কথা, ‘‘এখন দেশের থানাগুলো হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড, যানবাহন, লঞ্চ ঘাট, মাদক স্পট থেকে চাঁদা আদায় করে মাসিক ভিত্তিকে৷ আর এই অর্থের ভাগ পুলিশের উপর পর্যন্ত যায়৷ ফলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কাজ হয় না৷ উল্টো হয়রানি হতে হয়৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে৷ আর এখন তাদের মধ্যে এই অপরাধ প্রবণতা আরো বেড়েছে৷ কারণ, পুলিশ মনে করছে তারাই সরকার৷ তারাই সরকারকে টিকয়ে রাখছে৷ তারা এখন রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী৷ ফলে তারা এখন আরো বেপরোয়া৷”

নূর মোহাম্মদ

তার কথা, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না৷ বদলি, ক্লোজড এগুলো কোনো শাস্তি নয়৷ ফলে পুলিশ নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করছে৷”

পুলিশের সাবেক আইজি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কামিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ এমপি বলেন, ‘‘পুলিশের মধ্যে এই অপরাধ প্রবণতা অনেক আগে থেকেই আছে৷ তাদের এক ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য৷ কিন্তু সেটা আইনের সধ্যে থেকেই ব্যবহার করতে হয়৷ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আমরাও আগে পেয়েছি৷ এখনো অভিযোগ আছে৷ তবে পুলিশে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিস্টেম আছে৷ সেটাকে আরো কার্যকর এবং স্বচ্ছ করা প্রয়োজন৷”

তার কথা, ‘‘পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়, আবার পুলিশ তার ব্যক্তিগত স্বার্থেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে৷ এর বিরুদ্ধ তদারকি আরো জোরদার করা  প্রয়োজন৷”

তিনি বলেন, ‘‘এখন এক ধরনের কথা শুনছি যে, কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধে জড়ালে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় তার দায় পুলিশ বাহিনি নেবে না৷ এটা তো কোনো কথা হলো না৷ কোনো পুলিশ সদস্যের কৃতিত্বের ভাগ যদি পুলিশ নেয়, অপরাধের দায়ও নিতে হবে৷ এই দায় না নেয়ার কথা দায়িত্বহীনতার পরিচয়৷ দায় নিয়ে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে৷”