আফগানিস্তানে লিঙ্গ বৈষম্য বন্ধের আহ্বান
২১ ডিসেম্বর ২০২৩পরিস্থিতি উন্নয়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতির তীব্র সমালোচনা করেছেন নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই ও আফগান নারী অধিকার কর্মীরা৷
২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই পাকিস্তানি নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই যুদ্ধ-বিধস্ত আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে সক্রিয় প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
মালালা ইউসুফজাই ডয়চে ভেলে-কে জানান, ‘‘তালেবানের নির্দেশে আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ নারী ও মেয়েকে জনজীবন থেকে পরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলা হচ্ছে এবং তালেবানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে৷ প্রথমেই আমি সকল সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো লিঙ্গ বৈষম্যকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য৷''
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে৷
মানবাধিকার, আইনের শাসন ও সমতা নিশ্চিতকরণে আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সহায়তাকারী মিশন ডিসেম্বরের শুরুতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে৷
তালেবান সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকায় একে 'ডি ফ্যাক্টো' হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘ডি ফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষ নারী ও মেয়েদের অধিকার সীমিত করে চলেছে৷''
তালেবান কর্তৃক ক্ষমতা দখলের পর থেকে মেয়েরা ক্রমশ গৃহবন্দী হয়ে পড়ছে৷ ষষ্ঠ শ্রেণীর পর থেকে তাদের পড়ালেখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র ও জনপরিসরে চলাচলেও তাদের উপর আরোপ করা হয়েছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা৷ ৭২ কিলোমিটার এর বেশি ভ্রমণে তাদের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে একজন পুরুষ সঙ্গী নিতে হবে এবং নির্দিষ্ট পোষাক পরিধান করতে হবে৷
সচেতনতা সত্ত্বেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত রয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রভাষক নিলোফার নিকসেয়ার৷
তিনি বলেন, ‘‘যখনই সম্ভব হয়েছে, আফগানিস্তানের নারী ও মেয়েদের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ প্রতিবার আমরা আশা করেছি যে বিশ্ব আমাদের কণ্ঠস্বর শুনবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷''
‘‘কিন্তু আমরা গত দুই বছরে তেমন কোনো উন্নতি দেখিনি৷ তারপরও, একজন নারী হিসেবে, আমি সবসময় নির্যাতিতদের কণ্ঠস্বর হওয়ার চেষ্টা করি৷ আমরা হাল ছাড়তে চাই না৷''
প্রতিশ্রুতি রাখেনি তালেবান
তালেবান যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন তারা প্রাথমিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ইসলামি আইন বা শরীয়তের অধীনে নারী অধিকারকে সম্মান করবে৷ তবে তারা ধীরে ধীরে নারী ও মেয়েদের মৌলিক অধিকারগুলি অস্বীকার করে বেশকিছু বিধিনিষেধ এবং বৈষম্যমূলক নীতি চালু করেছে৷
সাহরা করিমি নামের এক আফগান চলচ্চিত্র পরিচালক, তালেবান নীতিগুলিকে ‘লিঙ্গ বর্ণবৈষম্য' হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং জোর দিয়ে সেগুলোকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ' বলেছেন৷ তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে তার জীবনের হুমকি থাকায় বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন৷
‘‘গত দুই বছরে প্রকাশিত আফগানিস্তানের রিপোর্ট এবং নারী ও মেয়েদের উপর আরোপিত বিধিনিষেধ দেখিয়েছে যে তালেবানরা তাদের মনোভাব মোটেও পরিবর্তন করেনি'' যুক্ত করেন তিনি ৷
শবনম ফন হাইন / এসএইচ