কিয়োটো চুক্তি
২৭ জুন ২০১৩শহরে ঢুকলে, বাড়ি-গাড়ির উপর পুরু ধুলার আস্তরণ৷ লোকে রুমালে মুখ ঢেকে রাস্তায় চলাফেরা করে, যাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধুলোবালি নাকে না ঢোকে৷ কাবুলে পার্ক কি ময়দান নেই বললেই চলে, পয়ঃপ্রণালীও মান্ধাতার আমলের৷ পথের ধারে খোলা নালা-নর্দমায় গিয়ে পড়ে বাড়ির আবর্জনা৷
আফগানিস্তানের জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা নেপা বলছে, প্রতিবছর শহরের প্রায় তিন হাজার মানুষ শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা জনিত রোগে প্রাণ হারান৷ কাবুলের বাতাসে ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার' বা ধুলাজাতীয় কণিকা, সংক্ষেপে পিএম-এর কাউন্ট হল ১৯০, যেখানে খোদ বেইজিংয়ের পিএম কাউন্ট গড়ে ১২১ - এ পরিসংখ্যান দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন ডাব্লিউএইচও স্বয়ং৷
জলবায়ু সংক্রান্ত সামগ্রিক চিত্রটাও খুব আশাব্যঞ্জক নয়৷ জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপি বলেছে, ১৯৮৯ সাল যাবৎ প্রায় ৬৭ লাখ আফগান বিভিন্ন দুর্যোগের মুখে পড়েছে: তার মধ্যে খরা ও ভূমিকম্প থেকে শুরু করে মহামারী কি দুস্তর শীত, সবই ধর্তব্য৷ হিমালয়ের হিমবাহগুলি গলতে থাকার ফলে খরার প্রকোপ আরো বেড়েছে৷
অপরদিকে আফগানদের ৮০ শতাংশ তাদের জীবিকার জন্য সরাসরিভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর৷ জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভর৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং হয়েছে, তা আরো বেড়েছে একটানা চার দশক গৃহযুদ্ধের ফলে৷
আফগানিস্তানের বড় শহরগুলিতে বায়ু দূষণ একটা মূল সমস্যা৷ শহরগুলি বাদ দিলে, দেশের বাকি অঞ্চলে বায়ু দূষণ বাস্তবিকই খুব কম, কেননা শিল্পায়ন কিংবা যানবাহনও কম৷ বলতে কি, বাসিন্দা প্রতি কার্বন নির্গমনের বিচারে আফগানিস্তান বিশ্বের নিম্নতম দেশগুলির মধ্যে গণ্য: মাথাপিছু শূন্য দশমিক দুই টন৷ কিন্তু তাই বলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আফগানিস্তানে কিছু কম নয়: গত কয়েক বছরে দেশে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক তেরো ডিগ্রি৷
কিয়োটো চুক্তিতে যোগদানের ফলে আফগানিস্তানকে যে কার্বন নির্গমন কমানোর কোনো বাধ্যতামূলক লক্ষ্য নির্দেশ করতে হবে, এমন নয়, কেননা দেশটি উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে পড়ে৷ অপরদিকে আফগানিস্তানকে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমন কমানোর একটা পরিকল্পনা নিতে হবে, যার মধ্যে জ্বালানি ও পরিবহণ এসে পড়বে৷
জাতিসংঘ সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও অপরাপর নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের বিকাশের জন্য সাহায্য দিয়ে থাকে৷ কাবুলে একটি নতুন পরিবেশ প্রতিষ্ঠান এই সব বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সচেষ্ট হবে৷ জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা নেপার জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের প্রধান গুলাম হাসান আমিরি বলেছেন, ‘‘প্রথমে আমাদের আফগান সমাজে পরিবেশ সংরক্ষণের একটা ধারা সৃষ্টি করতে হবে৷''