আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোট
১৪ মার্চ ২০১৮আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোট (আইএসএ) গড়ে তুলে আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের ২৩টি দেশের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে ভারত৷ মঙ্গলবার শেষ হওয়া সম্মেলনে যোগ দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁসহ বিশ্বের ২৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ৷
নতুন দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত সম্মেলনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেন, সৌরবিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার যত বাড়বে, ততই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বিশ্বের উষ্ণায়ন৷ এই গ্রহকে বাঁচাতে সূর্যই শেষ ভরসা৷ তাই মোদী জানান, ২০২২ সালের মধ্যে ভারত ১৭৫ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে৷ আর এই লক্ষ্য পূরণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে সৌরশক্তির জোগানের জন্য ১০টি প্রস্তাব সম্বলিত একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান' তুলে ধরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷ যার অন্যতম এলইডি বালবের ব্যবহার বাড়ানো৷ মোদীর দাবি, ভারত গত তিন বছরে ২৮ কোটি এলইডি বাল্ব সরবরাহ করেছে৷ এতে করে সাশ্রয় হয়েছে ২০০ কোটি ডলার৷ শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালায়েন্স-এর সদস্য দেশগুলির জন্য খুলবে ৫০০ ট্রেনিং সেন্টার ভারত৷ শুরু করবে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য সোলার টেকনিক্যাল মিশন৷
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ ঘোষণা করেন যে সৌরশক্তি যাতে সস্তায় সরবরাহ করা যায়, তার জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন৷ এর মধ্যে ভারত ১৪০ কোটি ডলার এবং ফ্রান্স ১৩০ কোটি ডলার দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এরপর সোমবার উত্তর প্রদেশর মির্জাপুরে ১০০ মেগাওয়াটের সৌরশক্তি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন৷ মাক্রোঁ সৌরশক্তির ক্ষেত্রে তিনটি ইস্যুকে চিহ্নিত করেন৷ সৌরবিদ্যুতের চাহিদা এবং সম্ভাবনার নিরিখে দেশগুলিকে চিহ্নিত করা, অর্থের জোগান এবং অনুকূল পরিকাঠামো গড়ে তোলা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্টের নাম না করে ফরাসি প্রেসিডেনট জানান, কিছু দেশ যখন ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন অন্য দেশগুলি চাইছে কিছু সদর্থক পদক্ষেপ নিতে৷ তাঁর কথায়, ‘‘যে গ্রহে আমরা বাস করছি, সেই গ্রহকে বাসযোগ্য রাখতে আমরা সবাই দায়বদ্ধ৷''
তবে অনেকেই মনে করছেন, এই লক্ষ্যপূরণের পথটা খুব সহজ হবে না৷ উত্পাদন খরচের ভিত্তিতে ভারতে সৌরবিদ্যুতের খরচ পড়বে প্রতি ইউনিট ২ টাকা ৪০ পয়সা৷ দেশের ঘরোয়া শিল্পগুলির ক্ষেত্রে সেটা খুব লাভজনক হবে না৷ এ বিষয়ে বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক সুগত হাজরার অভিমত জানতে চাইলে উনি আন্দামান থেকে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা যদি আজ থেকে ২০ বছর আগে এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করতাম, তাহলে এতদিনে ২ টাকা ৫০ পয়সার ইউনিটকে আমরা নামিয়ে আনতে পারতাম ১ টাকা ১০ পয়সায়৷ কাজেই এই প্রশ্নটা আমাদের সব সময়ই থাকবে৷ তবে টেকনলজি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে খরচ কম করতে সক্ষম হবো আমরা৷ যেটা সাধারণত আমাদের চোখে পড়ে না, সেটা হলো কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ আপাতদৃষ্টিতে দামে সস্তা হলেও পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, এতে যে পরিমাণ উষ্ণায়ন হয়, এই গ্রহের যে পরিমাণ লোকসান হয়, তার তুলনামূলক হিসেব করলে দেখা যাবে ২ টাকা ৪০ পয়সার অনেক বেশি৷ আমরা ইতিমধ্যে অনেক দেরি করে ফেলেছি৷ তাই এখনই শুরু করতে হবে৷ কারণ আর দেরি করলে বিশ্বের ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়বে৷ সেজন্য দরকার উৎপাদন খরচ কম রাখতে সোলার প্যানেলের মতো সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যান্য সাজ সরঞ্জামের দাম যথেষ্ট কমিয়ে আনা৷''
কর্পোরেট মহলের মতে, তাপবিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম বেশি পড়লেও সৌর এবং বায়ুশক্তির তুলনায় এটা বেশি নির্ভরযোগ্য৷ দ্বিতীয়ত, সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির নীতির মধ্যে বিস্তর ফাঁক রয়েছে৷ কর্পোরেট সেক্টর এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলি সৌরশক্তির বিষয়ে খুব একটা উৎসাহী নয়৷ তৃতীয়ত, স্থানাভাব৷ অবশ্য সেটার প্রতিকারের জন্য বিকল্প স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে পরিত্যক্ত জলাভূমি এবং অব্যবহৃত পুকুর বা ঝিল৷
পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক সুগত হাজরা কথা প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আন্দামান ও লাক্ষাদ্বীপের মতো দ্বীপমালায় এতদিন পর্যন্ত ডিজেল ও পেট্রোল দিয়েই অফিস, কোর্ট কাছারি, সাধারণ নাগরিক জীবন চলে আসছে৷ কিছু দিন হলো সৌরশক্তি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলেছে৷ ভারতে সৌরশক্তির সম্ভাবনা বিরাট৷ কারণ ভারত নিরক্ষীয় বা ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশ৷ বিশেষ করে পশ্চিম ও পূর্ব ভারতে সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহার সম্ভব৷ যেমন সুন্দরবন অঞ্চলে প্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার নেই বললেই হয়৷ সেখানকার একটা বিশেষ এলাকায় অন্ততপক্ষে দু'লাখ পরিবার ইতিমধ্যেই সৌরশক্তি কিংবা অপ্রচলিত বিদ্যুতশক্তি ব্যবহার করে আসছে৷ সেদিক থেকে বলা যায়, ভারত উন্নয়নশীল দেশগুলির নেতৃত্ব দিতে সক্ষম৷