‘আন্ডার গ্রাউন্ডে’ কাজ করবে জামায়াত
১৩ অক্টোবর ২০১৭আর এজন্য জামায়াত এখন ‘আন্ডার গ্রাউন্ডে' থাকতে চায়৷ তারা চায় দলকে শক্তিশালী করতে৷ রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে নয়, দলের ভিতরে ঐক্য, শক্তি ও যোগাযোগ বাড়িয়ে৷ দলের নতুন ভারপ্রাপ্ত আমির সেই নির্দেশনাই দিয়েছেন বলে সর্বেচ্চ নীতি নির্ধারনী পরিষদ মজলিসে সূরার একাধিক সদস্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷ তাদের টর্গেট যেকোনোভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ৷
সোমবার রাতে ঢাকায় আটক করা হয় জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ ১০ শীর্ষ নেতাকে৷ এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর আটক করা হয় ঢাকা মহানগরের ৯জন শীর্ষ জামায়াত নেতাকে৷ তাদের মধ্যে আছেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ৷
দুই দফা গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে জামায়াতের নিজামী- মুজাহিদ পরবর্তী নেতৃত্ব এখন কারাগারে৷ তাদের গ্রেপ্তারের পর অবশ্য জামায়াত এরইমধ্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত আমির এবং এটিএম মাসুমকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে৷
২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের তখনকার আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে৷ মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামী- মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে৷ দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হন৷ এছাড়া জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জানের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে৷ জামায়াতের অর্থের প্রধান জোগানদাতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে৷ জামায়াত ‘গুরু' গোলাম আযম কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন৷ জামায়াতের আরো কয়েকজন শীর্ষ নেতা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগে থেকেই কারাগারে আছেন৷
ফলে জামায়াতের দ্বিতীয় সারির নেতারাই নেতৃত্বে চলে আসেন৷ নিজামী-মুজাহিদকে গ্রেপ্তারের পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আমির হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন মকবুল আহমাদ৷ এটিএম আজহারুল ইসলাম হন সেক্রেটারি জেনারেল৷ ২০১২ সালের আগস্টে আজহারুল ইসলামকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্বে আসেন ডা. শফিকুর রহমান৷ গত বছরের অক্টোবরে মকবুল আহমাদকে আমির এবং শফিকুর রহমানকে সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত করে জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধরাণী পরিষদ৷
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জামায়াত অনেকটাই রাজপথের আন্দোলন থেকে দূরে থাকে৷ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধনও বাতিল হয়৷ দলটির প্রতীক দাড়িপাল্লাও বাতিল হয়ে যায়৷ জামায়াত চাইছিল, যুদ্ধাপরাধ এবং অতীতে সহিংসতার দুর্নাম ঘুচিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে৷ জামায়াতের প্রার্থীরা জোটের প্রতীক বা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷
জামায়াতের মজলিসে সূরার সদস্য এবং সিলেট মহানগরের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে চলি, তাই ধৈর্য ধরে আছি৷ যত চাপই আসুক না কেন, আমরা ধৈর্য ধরি৷ সরকার চাইছে আমরা যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি৷ কিন্তু আমরা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের জন্য ভিতরে ভিতরে দলকে প্রস্তুত করছি৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগকে আরো শক্ত করবে৷ সংগঠনের ভিতরে আমরা কাজ করব৷ বাইরে আমাদের কাজ কম থাকবে৷ আমাদের ভারপ্রাপ্ত আমিরও একই বার্তা দিয়েছেন৷ যারা সংগঠনবিরোধী কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
নেতৃত্ব নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের সিস্টেমেই আছে৷ কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে সংগঠন চলবে৷ কার অনুপস্থিতিতে কে নেতৃত্ব দেবেন৷ সবার কাছে মেসেজ চলে যায়৷ সবাই তা অনুসরণ করেন৷ ফলে সংগঠন সংগঠনের মতোই চলে৷''
জামায়াতের আরেকজন মজলিসে সূরা সদস্য ও ফেনী জেলা আমির একে এম শামসুদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত এখন চলবে নতুন নেতৃত্বে৷ আমরা বাইরে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখব না৷ কাজ হবে ভিতরে৷ প্রকাশ্যে নয়, আন্ডার গ্রাউন্ডে৷ আমাদের টার্গেট আগামী নির্বাচন৷ আমরা তো ২০ দলীয় জোটে আছি৷ আমাদের নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল করা হয়েছে৷ তারপরও আমরা হয় জোটগতভাবে, না হয় স্বতন্ত্র নির্বাচন করব৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেতাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে৷ হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে৷ সরকার ভেবেছিল জামায়াত শেষ হয়ে গেছে৷ কিন্তু হয়তো তারা রিপোর্ট পেয়েছে, জামায়াত শেষ হয়ে যায়নি, নতুন করে সংগঠিত হয়েছে৷ সামনে নির্বাচন৷ তাই জামায়াতকে কাবু করতে নতুন করে নেতাদের আটক শুরু করেছে সরকার৷''